প্রক্রিয়াজাত কিংবা অপ্রক্রিয়াজাত- দুই ধরনের মাংসর ক্ষতিকর ও ভালো দিক আছে।
Published : 12 Oct 2019, 05:44 PM
মাংস মানুষের খাদ্যাভ্যাসের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে। ঘরের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে রাস্তার পাশের ফুডকার্ট সবখানেই আছে মাংসের নানান পদ। আর তার প্রায় সবগুলোই মানুষের প্রিয় খাবারের তালিকায় প্রথম সারিতেই রয়েছে।
তবে এই মাংস স্বাস্থ্যগত দিক থেকে নানান ক্ষতির কারণ।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হার্ভার্ডের গবেষকরা ৮১ হাজার মানুষের খাদ্যাভ্যাস প্রায় ৮ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করে জানতে পেরেছেন, যারা এই আট বছরে প্রতিদিন ‘হাফ সার্ভিং’ বা তারও বেশি পরিমাণ প্রক্রিয়াজাত মাংস খেয়েছেন তাদের পরবর্তী আট বছরে মৃত্যুবরণ করার আশঙ্কা যারা এত নিয়মিত মাংস খাননি তাদের তুলনায় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। একই পরিমাণ অপ্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়ার কারণে মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে প্রায় নয় শতাংশ।
প্রক্রিয়াজাত আর অপ্রক্রিয়াজাত মাংসের মধ্যকার তুলনাভিত্তিক গবেষণায় দেখা যায়, প্রক্রিয়াজাত মাংসে আছে হৃদরোগ আর ডায়বেটিসে আক্রান্ত হওয়ার বাড়তি ঝুঁকি। তবে অপ্রক্রিয়াজাত মাংসে এই ঝুঁকি পাওয়া যায়নি।
মাংসের ক্ষতিকর দিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ‘স্যাচারেইটেড ফ্যাট’ আর কোলেস্টেরল সুচনা মাত্র। অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার কারণে শরীরে আসা অতিরিক্ত আয়রন হৃদযন্ত্রের জন্য মারাত্বক ঝুঁকিপূর্ণ। আবার প্রক্রিয়াজাত মাংসে থাকা ‘নাইট্রেটস’ এবং সোডিয়াম একে আরও বেশি ক্ষতিকারক করে তোলে।
এসব কারণেই বিশেষজ্ঞরা মাংস খাওয়া বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন হরহামেশাই।
তবে ভিন্ন কথা বলছে ২০১৭ সালের আরেকটি গবেষণা।
যেসব নারী পর্যাপ্ত মাংস খায় না তাদের শরীরের আয়রন, দস্তা, পটাশিয়াম এবং বি ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়না।
জার্নাল অফ ক্লিনিকাল লিপিডোলজিতে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা বলে, ‘লিন মিট’ অর্থাৎ চর্বিহীন মাংস রক্তের লিপিড’য়ে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। রক্তে চর্বি পরিমাণ বেশি হলে তা রোগবালাইয়ের ঝুঁকি বাড়ায়, আর একারণেই ‘লিন মিট’য়ের এই ভালো দিক সম্পর্কে জানা জরুরি।
লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ক্যারল ও’নিল বলেন, “স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের একটি অংশ হতে পারে এই ‘লিন মিট”।
ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশও
গবাদি পশুপালন আর গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমণ বৃদ্ধির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেছে অসংখ্য গবেষণা।
যাটজটে আটকে থাকা কয়েকটি গাড়ি পরিবেশের যতটুকু না ক্ষতি করে তার থেকে বেশি ক্ষতি করতে পারে একপাল গরু, এমনটাও দাবি করেন কিছু গবেষক।
২০১৪ সালে ‘গ্লোবাল এনভাইরোনমেন্টাল চেঞ্জ’ শীর্ষক জার্নালে প্রকাশিত এক জরিপের দাবি, “ইউরোপে গবাদি পশুপালনের হার কম হওয়ার কারণে সেখানে ‘গ্রিন হাউজ গ্যাস’য়ের নির্গমণ কমেছে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারলে মানুষ এবং পৃথিবী দুইয়ের জন্যই মঙ্গল।
তাহলে যা করা যায়
এতকিছুর পরও মাংস খাওয়া একেবারে বাদ দিতে হবে এমনটা নয়, খেতে পারবেন তবে খাদ্যাভ্যাসের অন্যান্য উপকরণগুলো অবশ্যই স্বাস্থ্যকর হতে হবে।
প্রক্রিয়াজাত মাংস থেকে দুরে থাকতে হবে। মাংস নিয়মিত খাবার হলে চলবে না, বিশেষ দিনের বিশেষ খাবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
আর মাংসের পরিবর্তে খেতে হবে সবজি, ফল ও শষ্যজাতীয় খাবার।
আরও পড়ুন