মাথা থেকে পেট পর্যন্ত পড়ে মানসিক চাপের প্রভাব। তবে সেটা কমানো যায়।
Published : 18 Oct 2023, 01:44 PM
কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে বা জীবনে কোনো চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে যে উত্তেজনার তৈরি- সেখান থেকেই আসে মানসিক চাপ।
যদিও প্রায় সবাই এই ধরনের চাপের সম্মুখিন হন। তবে দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপে ভুগলে দেহে নানান বাজে প্রভাব পড়ে।
এই বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়া জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিকিৎসক অঞ্জু গোয়েল বলেন, “সপ্তাহব্যাপী বা এর বেশি সময় ধরে মানসিক চাপে ভুগলে একে দীর্ঘমেয়াদি চাপ হিসেবে ধরে নিত হবে। যেমন- অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য বেশিদিন মানসিক চাপে ভুগলে শরীর সবসময় সতর্ক থাকবে, যা থেকে দেখা দিতে পারে মানসিক ও শারীরিক সমস্যা।”
হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যাওয়া
এই চিকিৎসক হেল্থডটম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানান, যাদের হাঁপানি রয়েছে মানসিক চাপ থেকে তাদের এই সমস্যা বাড়ে। আর যাদের নেই তাদের মধ্যে অনেক সময় শ্বাস টান দেখা দেয়। কারণ মানসিক চাপে মাংস পেশিতে টান পড়ে, শ্বাস নেওয়ার পরিমাণ বাড়ে।
এ ক্ষেত্রে মনোযোগের সাথে নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করলে আরাম মিলে।
নাঁক দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ধীরে ছাড়তে হবে
সাত সেকেন্ড ধরে নিঃশ্বাস টেনে, সাত সেকেন্ড আটকে রেখে, সাত সেকেন্ড ধরে ছাড়তে হবে।
মনোযোগ থাকতে হবে শ্বাস প্রশ্বাসে অন্য কিছুতে নয়। আর এই পদ্ধতি পরপর তিনবার করতে হবে।
হজমতন্ত্রের সমস্যা
মানসিক চাপে থাকলে যে ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়, সেটা হজমে সমস্যা তৈরি করে। এর মধ্যে রয়েছে
* কোষ্ঠকাঠিন্য * ডায়রিয়া * বদহজম * ক্ষুধা হারানো * পেটফাঁপা * পেপটিক আলসার * পেট ব্যথা।
এছাড়া ‘ইরিটেবল বাওল সিস্টেম’ বা আইবিএস হতে পারে। যার লক্ষণ হল পেটব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য।
চুল পড়া
জীবনের চাপযুক্ত সময়ে চুল পড়ার পরিমাণ বাড়তে পারে। চুল পাতলা হওয়ার এই বিষয়টা মানসিক চাপ থেকে বের হয়ে আসলে অনেক সময় ঠিক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সময় লাগতে পারে ছয় থেকে নয় মাস।
অনেকে দুশ্চিন্তা বা মানসিক অস্থিরতা থেকে চুল টানেন, যাকে বলায় হয় ‘ট্রিকোটিলোমেনিয়া’। এই সমস্যা কাটানোর জন্য বাজে অভ্যাস দূর করার প্রশিক্ষণ নেওয়া যেতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিজেই সচেতন হওয়া।
হৃদপিণ্ডের সমস্যা
মানসিক চাপে দেহ প্রাথমিকভাবে সাড়া দেয় হৃদ-স্পন্দন বৃদ্ধির মাধ্যমে। সারাক্ষণ চাপে থাকলে রক্তচাপ বাড়ে, ফলে ধমনীতে চাপ পড়ে। যেখান থেকে হৃদ-সংক্রান্ত নানান সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- হাইপারটেনশন, উচ্চ কোলেস্টেরল, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি।
আর এই সময় শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম না করা, ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ না খাওয়া, অতিভোজন, ধূমপান, বাজে খাদ্যাভ্যাস সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপে ভুগলে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকে বাড়ে। সেখান থেকে বাড়ে হৃদরোগ ও স্ট্রোকে ঝুঁকি।
এই ধরনের সমস্যা এড়ানো জন্য হৃদয়-বান্ধব জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি।
এসব অভ্যাসের মধ্যে রয়েছে-
লবণ, স্যাচুরেইটেড ফ্যাট ও আলাদা করে দেওয়া চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া কমানো।
উদ্ভিজ্জ খাবার, ফল-সবজি ও পূর্ণশষ্য খাওয়া অভ্যাস করা।
সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার শরীরচর্চা করা।
ধূমপায়ী হলে সিগারেট ত্যাগ করা।
চিনিযুক্ত পানীয়র পরিবর্তে সাধারণ পানি পান বেশি করা।
এছাড়া মানসিক চাপের কারণ বের করে সেটা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। সমাধান না করতে পারলেও অন্তত কাজ থেকে কিছু দিন অবসর নিয়ে বিশ্রামে থাকলেও উপকার মিলবে।
মাথাব্যথা
মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেইন দেখা দেয়। যাকে বলা হয় ‘টেনশন’য়ের মাথাব্যথা। মনে হয় মাথায় কোনো কিছু পেঁচিয়ে ধরছে। আর মাথা, কপাল ও নাঁকের আশপাশে এই ব্যথা অনুভূত হয়।
ওষুধ খেয়ে ব্যথা সারানোর পাশাপাশি গরম বা ঠাণ্ডা ভাপ নেওয়া, মালিশ করা বা ধ্যানের মাধ্যমে উপকার পাওয়া যায়। তবে ওষুধ অবশ্যই খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে।
খাবার ইচ্ছে বাড়ে
অল্প সময়ের জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি হলে ক্ষুধা লোপ পায়। তবে দীর্ঘমেয়াদে চাপে ভুগলে দেহে যে কর্টিসল হরমোন নিঃসরণ হয় সেটার কারণে ক্ষুধা বা খাবার ইচ্ছে বাড়ে। আর সেকারণে মজাদার মিষ্টি ও চর্বিজাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ জাগে। যাকে বলে ‘স্ট্রেস ইটিং’।
আর খেলে ভালো লাগে বলে খাওয়ার পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকে। তাই মানসিক চাপের সময় স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে হবে। ঘরে মিষ্টি বা মুখরোচক খাবার রাখা যাবে না। পরিবর্তে বাদাম ফল এই ধরনের খাবার রাখতে হবে যাতে খাওয়ার ইচ্ছে জাগলে এগুলো চট করে খাওয়া যায়।
ঘুম কমে যাওয়া
মানসিক চাপের সময় অনেক মানুষ ঘুম অনুভব করে না, একে বলে ‘হাইপারঅ্যারাওজল’। এছাড়া ‘ইনসমনিয়া’ বা ঘুম না পাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়।
স্বল্প সময়ের জন্য মানসিক চাপে ভুগলে অনিদ্রার সমস্যা হতে পারে। তবে দীর্ঘদিনের মানসিক চাপের কারণে ঘুমের অব্যবস্থা দেখা দেয়।
আর এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হল
ঘুমাতে যাওয়া আগে ভারী খাবার না খাওয়া, মদ্যপান এড়ানো।
ক্যাফেইন গ্রহণ কমানো বিশেষ করে দিনের শেষে।
শব্দ, টিভি বা উজ্জ্বল আলো- এই ধরনের মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার মতো বিষয়গুলো এড়ানো।
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ওঠার চেষ্টা করা।
যে ঘরে ঘুমানো হয় সেটা শীতল রাখার চেষ্টা করা।
আরও পড়ুন
মানসিক চাপে থাকার লক্ষণ আর প্রতিকারের উপায়