রাতে ঘুম আসছে না তাহলে বরং কলা কিংবা আনারস খেয়ে দেখতে পারেন।
অনেকেই হয়ত মনে করেন রাতে ফল খাওয়া উচিত না। তবে এই সময়ের পুষ্টিবিদদের পরামর্শ হচ্ছে, রাতেও ফল খাওয়া যায়।
এই বিষয়ে নিউ ইয়র্ক’য়ের রিয়েল নিউট্রিশন’য়ের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ অ্যামি শাপিরো বলেন, “সম্পূর্ণ খাবার হিসেবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের উৎকৃষ্ট উৎস হচ্ছে ফল। তাই রাতে ফল খাওয়ার মধ্যে কোনো খারাপ বিষয় নেই।”
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই পুষ্টিবিদ আরও বলেন, “তবে অতিরিক্ত ফল খাওয়ার কারণে ঘুমের ব্যঘাত, হজমে ও গ্যাসের সমস্যা ও পেট ব্যথা হতে পারে। তাই অল্প পরিমাণে ফল খেয়ে পেটকে ভয়ের হাত থেকে মুক্ত রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।”
তিনি আরও জানান, ঘুমের জন্য প্রয়োজন মেলাটনিন হরমোনের নিঃসরণ। আবার এই হরমোন বিশেষ কিছু ফলেও থাকে। যে কারণে রাতে সেগুলো খেলে সুন্দর ঘুম হতেই পারে।
আনারস
ছোট চেরি ফলে মেলাটনিন থাকে। তবে আরও বেশি মেলাটনিন মিলবে আনারস থেকে।
উদাহরণ হিসেবে থাইল্যান্ডের ‘খন ক্যান ইউনিভার্সিটি’র ‘ফ্যাকাল্টি অফ ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড মেলাটোনিন রিসার্চ গ্রুপ’য়ের করা গবেষণার কথা উল্লেখ করেন পুষ্টিবিদ শাপিরো।
পাবমেড ডটগভ’য়ে প্রকাশিত এই পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবান অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা আনারস খেয়েছে তাদের মেলাটনিনের মাত্রা বেড়েছে ২৬৬ শতাংশ হারে।
শাপিরো আরও বলেন, “হজমে জন্য সহায়ক আনারস রাতে পেট ব্যথা হওয়া থেকেও রক্ষা করতে পারে। আর এই সুফল পাওয়া যায় আনারসে থাকা ব্রোমেলেইন এনজাইম থেকে। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যেও উপকার পাওয়া যায়।
কলা
“অতিরিক্ত পাকা কলা না হলে এই ফল হতে পারে ঘুমের আগে খাওয়ার জন্য সেরা। পটাসিয়ামের দারুণ উৎস, যা কিনা পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে”, বলেন শাপিরো।
আরও রয়েছে সেরোটনিন যা কিনা মেলাটনিন নিঃসরণে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ফলে ঘুম আসতে আর ঘুমিয়ে থাকতে সাহায্য করে।
পাশাপাশি পাওয়া যায় ‘ট্রিপ্টোফ্যান’- এই অ্যামিনো অ্যাসিড সেরাটনিনের উৎপাদন বাড়ায়। যার ফলাফল মেলাটোনিন নিঃসরণ।
তাছাড়া দৈনিক খাদ্যতালিকায় কলা রাখার পরামর্শ দেন শাপিরো। কারণ্ ‘রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ’য়ের উৎস হিসেবে কলা দেহে ভালো ব্যাক্টেরিয়াকে উন্নত করে। আর হজম ধীরে হয়ে বলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় না।
কমলা
অবাক হলেও সত্যি যে, পুষ্টিবিদেরা সকালে এবং রাতেও কমলা খাওয়ার পরামর্শ দেন।
শাপিরো বলেন, “এই ফলে থাকা ভিটামিন সি যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে তেমনি মেলাটনিনের মাত্রা বাড়াতে পারে।”
আরও রয়েছে বি ভিটামিন, যা কিনা মানসিক চাপ কমাতে পারে। পাশাপাশি ঘুমের জন্য সহায়ক সব হরমোন, যেমন- সেরোটনিন, ডোপামিন এবং ‘জিএবিএ’ উৎপন্ন করে।
আসল বিষয় হল
এই ফলগুলো ঘমের জন্য বন্ধু হলেও, একবার খেলাম আর কাজ হয়ে গেল বিষয়টা তা নয়। বরং ফল প্রতিদিন খেতে হবে।
শাপিরো বলেন, “রাতে ফল খাওয়া ঠিক না- এই কথাটা ভুলে যেতে হবে। বেশিরভাগ ফলই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো আর শরীর উন্নত করে। তবে খেতে হবে প্রতিদিন।”
তিনি আরও বলেন “তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, একেবারে অনেক পরিমাণে এসব ফল খাওয়া দেহে বাজে প্রভাব ফেলবে। তবে সেটা সব ক্ষেত্রেই একই বিষয়। কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়।”
আর এই ফলগুলো থেকে ঘুমের উপকার পেতে, ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে খাওয়ার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ।
পাশাপাশি ঘুমের আগে পেট ভরে খাবার খাওয়া বা অতিরিক্ত পানীয় ও অ্যালকোহল গ্রহণ না করার বিষয়গুলো মানতে হবে।
আরও পড়ুন