অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ ভালো না। তবে এই উপাদানের প্রতি বেশি আগ্রহের অন্য কারণ থাকতে পারে।
দুটি প্রধান ইলেক্ট্রোলাইট সোডিয়াম ও ক্লোরাইডের সংমিশ্রণ থাকে খাওয়ার লবণে।
নিউ ইয়র্ক’য়ের পুষ্টিবিদ মেলিসা রিফকিন ব্যাখ্যা করেন, “দেহের বৈদ্যুতিক চার্জ ও পেশির সংচোন প্রসারণের জন্য ইলেক্ট্রোলাইট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া দেহের তারল্যের ভারসাম্য, রক্ত চাপ ও পিএইচ’য়ের মাত্রা এবং স্নায়ুর কার্যকারিতার জন্যও সোডিয়াম ও ক্লোরাইড দরকার।”
যদিও লবণের অনেক ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়।
তবে ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মেলিসা আরও বলেন, “দৈনিক প্রয়োজনীয় মাত্রায় লবণ গ্রহণ করা আমাদের সকলেরই উচিত। যদি খেয়াল করেন লবণ খাওয়ার প্রতি আলাদা আগ্রহ জাগছে তবে সেটার হয়ত ভালো দিকও আছে।”
হতে পারে শরীর জানান দিচ্ছে লবণের দরকার। অথবা থাকতে পারে খাদ্যাভ্যাস কিংবা হরমোনের সংক্রান্ত কোনো কারণ।
তাই এই পুষ্টিবিদ লবণের প্রতি আগ্রহের কারণ উদ্ধারে কয়েকটি বিষয়ের ওপর নজর দিতে পরামর্শ দেন।
পানিশূন্যতা
যেহেতু দেহের তারল্যের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সোডিয়াম ও ক্লোরাইড প্রয়োজন, সেজন্য পানিশূন্যতার কারণে লবণের প্রতি আগ্রহ জন্মাতে পারে।
এর মাধ্যমে শরীর জানান দেয় যে, দেহের তারল্যের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সোডিয়াম ও ক্লোরাইডের ঘাটতি রয়েছে।
এক্ষেত্রে শুধু লবণ নয়, পর্যাপ্ত পানি পানও জরুরি।
পানিশূন্যতার কারণে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন- মাথাব্যথা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমা, জড়তা, পিপাসা লাগা।
এই সমস্যা দূর করতে সারাদিন ধরে পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি প্রস্রাবের রং হলুদ থেকে সাদা না হওয়া পর্যন্ত পানি গ্রহণ চালিয়ে যেতে হবে। প্রস্রাবের রং সাদা হওয়া মানে দেহে পানির ঘাটতি পূরণ হয়েছে।
পাশাপাশি গরম আবহাওয়া ও বেশি ঘামলে পানি তরলের সঙ্গে অল্প লবণও গ্রহণ করা ভালো। এতে বাড়তি লবণ খাওয়ার আগ্রহ কমবে।
প্রিমিনিস্ট্রুয়াল সিন্ড্রম
নারীদের মাসিক শুরু হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে থেকেই দেখা দেয় ‘প্রিমিনিস্ট্রয়াল সিন্ড্রম’ বা পিএমএস। এক্ষেত্রে মেজাজের ওঠা-নামা, বিরক্তিভাব বা বিষণ্নতা যেমন দেখা দেয়, তেমনি কারও বাড়ে খাওয়ার প্রবণতা। এরমধ্যে লবণাক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছে বেশি জাগে।
মাসিক শুরু হওয়ার আগে যদি চিপস-ধরনের খাবার খেতে ইচ্ছে হওয়াটা তাই স্বাভাবিক। শুধু খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত যেন খাওয়া না হয়। সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে।
আর খেতে হবে লবণযুক্ত পুষ্টিকর খাবার। সেটা হতে পারে লবণাক্ত বাদাম, পপকর্ন ইত্যাদি।
মানসিক চাপ
লবণ খাওয়ার প্রবণতা বাড়ার আরেকটি কারণ হতে পারে হরমোনের প্রভাব। মানসিক চাপে থাকলে কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে। যা শরীরের সঙ্গে মানসিক চাপ সহ্য করাতে কাজে লাগে। সেই সাথে রক্তচাপ, হৃদপিণ্ডের গতি ও গ্লুকোজের ভারসাম্যও রক্ষা করে এই হরমোন।
তবে কর্টিসল অতিরিক্ত নিঃসরণের মাত্রা কমাতেও দেহে লবণের চাহিদা হতে পারে।
‘জার্নাল অফ নিওরোসায়েন্স’য়ে প্রকাশিত এক গবেষণার ভিত্তিতে জানা যায়, লবণ কর্টিসল হরমোন কম নিঃসরণে প্রভাব রাখে।
যে কারণে মানসিক চাপে থাকলে লবণ খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। যার মাধ্যমে শরীর মানসিকভাবে চাপ সামলানোর চেষ্টা করে।
তাই মানসিক চাপে থাকলেও লবণ খাওয়ার পরিমাণের দিকে নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার।
ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা
জ্বরের সঙ্গে বমি, ডায়রিয়া, ব্যায়াম বা শারীরিক কর্মকাণ্ডের জন্য ঘাম হওয়া, অতিরিক্ত গরম ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে শরীর অতিরিক্ত তরল হারালে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
সেই সঙ্গে দুই উপাদান লবণ ও ক্লোরাইড’য়ের ঘাটতিও তৈরি হয়। আর এসবের কারণে দেখা দেয়- মাথাব্যথা, অবসাদ, হৃদপিণ্ডের দ্রুত গতি বা পেশিতে টান পড়া।
এই অবস্থা এড়াতে প্রচুর পরিমাণে তরল গ্রহণের পাশাপাশি ‘ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিঙ্ক’ পান করার চেষ্টা করতে হবে। হতে পারে সেটা মুখে খাওয়ার স্যালাইন।
গর্ভধারণ
মা হতে যাওয়া নারীদের খুবই সাধারণ দুটি সমস্যা হল বিতৃষ্ণা ও বমি। যদিও বিতৃষ্ণা লবণের প্রতি আগ্রহ তৈরি করে না তবে বমির কারণে হতে পারে।
বমির কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল বের হয়ে যায়, পাশাপাশি দেখা দেয় ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা।
তাই গর্ভধারণে পর অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ইচ্ছে জাগলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ইলেক্ট্রোলাইট গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এসব গর্ভের শিশুর ওপরেও প্রভাব ফেলে।
পাশাপাশি স্তন্যদানের জন্য ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন