আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পাঁচটি বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
Published : 16 Jul 2024, 02:02 PM
কখন কোথায় কী করতে হবে- যাদের বিষয়গুলো জানা থাকে তারাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
প্রশ্ন জাগে- তাদের মধ্যে কী এমন আছে, যে কারণে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যায়।
উত্তরে স্কটিশ মনোবিজ্ঞানী ও স্নায়ু-বিশেষজ্ঞ ইয়ান রবার্টসন বলেন, “আত্মবিশ্বাস- এটাই মনে হয় মানুষের কার্যক্রম পরিচালনা আর ভালো থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
আয়ারল্যান্ড’য়ের ‘ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন’য়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের এই অবৈতনিক অধ্যাপক সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন, “আত্মবিশ্বাসের দুটি দিক আছে। একটি হল- বিশ্বাস করায় যে, কাজটি আমি পারবো। আরেকটি হল- কাজটি শেষ হলে ফলাফল অনুযায়ী প্রতিদান মিলবে।”
যদি আত্মবিশ্বাসী হওয়া যায় তবে সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কারণ আত্মবিশ্বাস মস্তিষ্কে মেজাজ উন্নত করার সংকেত পাঠায়, উদ্বেগ কমায়, চিন্তা শক্তি ধারালো করে। আর এসব মিলিতভাবে সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়- মন্তব্য করেন ‘হাও কনফিডেন্স ওয়ার্কস: দি নিউ সায়েন্স অফ সেল্ফ-বিলিফ’ বইয়ের এই লেখক।
আত্মবিশ্বাসের বিপরীত হলে দুশ্চিন্তা।
রবার্টসন আরও বলেন, “আত্মবিশ্বাসের অভাব হলে, যদি মনে করেন কাজটা পারবেন না তাহলে সম্ভাব্য ব্যর্থতার কারণে দুশ্চিন্তা দেখা দিতে পারে। আর নিজের সম্পর্কে অন্য মানুষের নেতিবাচক ধারণার ভয় হল দুশ্চিন্তার সেরা উৎস।”
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে দুশ্চিন্তায় ভোগেন তারা সব কিছুই কম করে। তারা সামাজিকভাবে মেশে কম, কাজ করে কম, শখ ও আগ্রহে ঘাটতি দেখা যায়।
“কারণ সম্ভাব্য নেতিবাচক পরিস্থিতির শিকার হওয়ার কথা চিন্তা করে মস্তিষ্ক তখন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। যা কি-না আত্মবিশ্বাসের বিপরীত পন্থা হিসেবে কাজ করে”- ব্যাখ্যা করেন রবার্টসন।
আত্মবিশ্বাস নিয়ে কেউ জন্মায় নায়। এটা রপ্ত করতে চাইলে এই মনোবিজ্ঞানি পাঁচটি বিষয়ের ওপর জোর দেন।
কাজে নেমে পড়া
যতই হাত-পা কাঁপুক, কোনো কিছু করার পদক্ষেপ নিয়ে সেটা করা শুরু করলে আত্মবিশ্বাসের ফুলঝুরি ফোটা শুরু হয় সেখান থেকে।
পারস্যের কবি রুমি’র উক্তি তুলে ধরে রবার্টসন বলেন, “প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া থেকেই পথের শুরু হয়। আত্মবিশ্বাস মস্তিষ্কের কার্যপদ্ধতির সাথে সংযুক্ত। যাদের আত্মবিশ্বাস কম আর দুশ্চিন্তায় ভোগেন তারা হুমকির ভয়ে পিছু টান অনুভব করেন।”
অথচ কাজে নেমে পড়লে দুশ্চিন্তা ঝেরে আত্মবিশ্বাস জাগাতে সাহায্য করে।
যত্নের সাথে লক্ষ্য নির্ধারণ করা
কিসে মনোযোগ দেবেন সেটার ওপর নির্ভর করে মানসিক অবস্থা। তাই বিজ্ঞতার সাথে বিবেচনা করতে হবে।
রবার্টসন ব্যাখ্যা করেন, “একদল মানুষের সামনে কথা বলতে গিয়ে যদি দেখেন, বেশিরভাগই ফোন নিয়ে ব্যস্ত বা ভ্রুকটি করে তাকিয়ে আছে, তাহলে আপনার মনোযোগ সেদিকে আটকে যাবে। আসন্ন বিপদের কথা চিন্তা করে আমরা এরকমই করি।”
এর পরিবর্তে, যারা মনোযোগী তাদের প্রতি যদি জোর করে নজর দেওয়া হয়, এমনকি সামনের সারিতে বসা মাত্র্র একজনকে দেখে যদি মনে হয় সে আপনার কথা শুনতে আগ্রহী- তাহলে মস্তিষ্কে ইতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হয় যা ব্যর্থতার ভয় কাটিয়ে সাফল্য পাওয়ার অনুভূতি জাগায়।
এভাবে ইচ্ছা-শক্তির মাধ্যমে শুধু ভয় ও ব্যর্থতার অনুভূতি-ই দূর হয় না পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস তৈরিতেও সাহায্য করে।
উন্নতির অনুভূতি গ্রহণ করা
পরিবর্তনের জন্য নিজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর দরকার হয়।
বিশ্বাস করতে হবে পরিবর্তন সম্ভব।
“যাদের মধ্যে উন্নত করার মানসিকতা কাজ করে তারা কোনো কিছু নতুন করে শেখা ও প্রতিভা বিকাশের চেষ্টা করে। আর যাদের মানসিকতা এক জায়গায় স্থির থাকে, তারা মনে করে প্রতিভা ও কাজের যোগ্যতা সহজাত- যা কারও মাঝে থাকে, কারও মাঝে থাকে না” বলেন রবার্টসন।
যদি মনে করেন, জন্ম বা উত্তরাধীকার সূত্রে যা পেয়েছেন তার চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব না তাহলে যে কোনো কিছু শেখা বা কাজ করার ক্ষেত্রে ধীর হয়ে যেতে হবে- এটা হল স্থির মানসিকতার লক্ষণ।
তবে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে শেখার মাত্রা বাড়াতে হবে। কোনো কিছুতে স্থির থাকা সবসময় ভুল ফলাফল দেয়।
দুশ্চিন্তা মুকাবিলা করা
ভয়ের অনুভূতি দূর করে সাহস জাগানো সম্ভব হয় যদি দুশ্চিন্তাকে কর্মশক্তির উৎস হিসেবে চিন্তা করা যায়।
কোনো পরিস্থিতি যদি দুশ্চিন্তা তৈরি করে তবে সেটাকে ‘চ্যালেঞ্জ’ ভিত্তিক মানসিকতায় পরিবর্তন করার পরা্মর্শ দেন রবার্টসন।
তার কথায় “আমি কি এটা পারবো?’ ‘এহ! বাজে কিছু হয়ে যাবে মনে হচ্ছে!’- এই ধরনের অনুভূতি জাগলে মনে মনে বলতে হবে ‘আমি উত্তেজনা বোধ করছি।”
তার মানে এই নয়, ঘাবড়িয়ে যাচ্ছেন না বরং এই কথা নিজে নিজে বলার মাধ্যমে কর্মশক্তির চাষাবাদ করা যায়।
নিজেকে মূল্য দিন
কী কারণে কাজটি করছেন সেটা ভাবুন আর নিজেকে বিশ্লেষণ করুন।
“কারণ যে কাজের জন্য নিজেকে দাঁড় করাচ্ছেন সেটাই আপনার ভিত্তি আর গুরুত্বপূর্ণ” বলেন রবার্টসন।
মাত্র কয়েক সেকেন্ড যদি চিন্তা করা হয় বা লিখে ফেলা যায় তবেই বিষয়টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা প্রকাশিত হবে মস্তিষ্কে। তখন ভয়, সমালোচনা বা ব্যর্থ হওয়ার অনুভূতি সরে যেতে থাকবে।
অন্যভাবে বলা যায়, যে দুশ্চিন্তা আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি তৈরি করছে সেটা প্রতিহত হবে।
আরও পড়ুন