যদি পরপর কয়েকদিন বেশি চুল পড়ে তবে সাবধান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
Published : 09 Mar 2025, 04:56 PM
নির্দিষ্ট সংখ্যক চুল পড়া খুব স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে কখনও এটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
‘চুল পড়া’ শব্দটি মাঝে মাঝেই ভয়ানক মনে হতে পারে, যখন চিরুনি বা গোসলের ঘর মাথার চুল ঝরে ভরে ওঠে।
যদিও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চুল পড়া একেবারেই স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত। চুল বৃদ্ধির চক্রে মোট চারটি ধাপ থাকে। যার মধ্যে একটি হল চুল পড়া; অর্থাৎ যে কোনো সময়েই কিছু চুল মাথা থেকে ঝরতে পারে।
“গড়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০টি চুল ঝরা স্বাভাবিক। এতে ভয়ের কিছু নেই”, রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কেশ-পরিচর্যার প্রতিষ্ঠান বজলিএমডি’র ট্রাইকোলজিস্ট (কেশ ও মাথার ত্বক বিশেষজ্ঞ) গ্রেচেন ফ্রিস।
তবে গোসলের সময়ই কেনো চুল পড়া সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়? আর কীভাবে বোঝা যাবে যে চুল সাধারণের চেয়ে বেশি পড়ছে?
গোসলের সময় কেনো চুল পড়ে?
চুল বৃদ্ধির চক্রের একটি স্বাভাবিক অংশ হিসেবে গোসলের সময় চুল পড়া প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। তবে কিছু কারণ রয়েছে যা চুল পড়াকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
“চুল ধোয়া এবং কন্ডিশনার ব্যবহারে সেই চুলগুলোই আলগা হয়ে যায় যেগুলো ইতিমধ্যেই পড়ার পর্যায়ে ছিল। যদি প্রতিদিন চুল না ধোয়অ বা ব্রাশ না করা হয়, তবে সেই চুলগুলো একত্রিত হয়ে একসাথে পড়ে। ফলে মনে হয় বেশি চুল পড়ছে”- বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও ভিত্তিক ত্বক-বিশেষজ্ঞ ডা. মোনা ফোয়াদ।
তিনি আরও বলেন, “পানি এবং কন্ডিশনারও মাথার চুলকে একত্রিত করে, তাই চুল পড়া কিছুটা বেশি নাটকীয় মনে হতে পারে।”
গোসলের সময়ব কতটা চুল পড়া স্বাভাবিক?
প্রতিদিন গড়ে ১০০ তেকে ১৫০টি চুল পড়া খারাপ বিষয় নয়। তবে বাস্তবে কেউ কখনও প্রতিটি চুল গুনে সংখ্যা বের করে না।
“এটা স্বাভাবিক যে প্রতিটি চুল গোনা সম্ভব নয়। আবার সব চুল কিন্তু একই সাথে গোসলের সময় পড়ে না। কিছু চুল ব্রাশ করার সময় বা সারা দিনে পড়ে”- বলেন ফ্রিস।
স্বাভাবিক বা রুটিন মতো সাধারণ চুল পড়া হয়ত খুব একটা লক্ষ করা হয় না। অন্য কথায় প্রতিদিন যে পরিমাণ চুলে ঝরে যাচ্ছে তা স্বাভাবিক হলে, এর প্রতি মনোযোগ যায় না।
আর চুল ঝরে যাওয়া বেশি পরিমাণে হতে শুরু করলে বুঝতে হবে, কিছু একটা অস্বাভাবিক বিষয় ঘটছে।
কীভাবে বোঝা যাবে অতিরিক্ত চুল ঝরছে?
“হঠাৎ করে গোসলের সময়ে বেশি চুল ঝরে যাচ্ছে মনে হলে কয়েকদিন খেয়াল রাখতে হবে, এটি কি অব্যাহত থাকছে কিনা। তারপর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে” ফ্রিস পরামর্শ দেন।
“তেমনি গোসলের সময়ে বড় বড় চুলের গুচ্ছ না পড়লেও যদি সারা দিনে অতিরিক্ত পড়ে বা চুলে আঙুল দিলেই অতিরিক্ত চুল উঠে আসে, তবে সেটি কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ হতে পারে” বলেন ড. ফোয়াদ।
"আরেকটি ভালো উপায় হল- চুলে সোজা করে একটি পনিটেল বাঁধা। যদি এটি স্বাভাবিকের তুলনায় পাতলা হয়, তবে বুঝতে হবে মাথা থেকে অতিরিক্ত চুল ঝরে যাচ্ছে” বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
কী করা উচিত?
“হঠাৎ করে চুল পড়া বেড়ে যাওয়া, ‘স্কাল্প’ বা মাথার ত্বকের পরিবর্তন বা কোনো চুলকানি থাকলে অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ নেওয়া উচিত। যাতে কোনো সমস্যা থাকলে শনাক্ত করা যায়” পরামর্শ দেন ডা. ফোয়া।
চুল পড়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস, হরমোনের পরিবর্তন এবং এমনকি কিছু চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এতে ভূমিকা রাখতে পারে।
ডা. ফোয়াদ বলেন, “এমনকি একটি নির্দিষ্ট রকমের চুল পড়ার ধরন রয়েছে, যাকে ‘টেলোজেন এফ্লুভিয়াম’ বলা হয়। অতিরিক্ত চাপে থাকার পরের তিন থেকে চার মাসে হঠাৎ করে চুল পড়া বৃদ্ধি পেতে পারে” যোগ করেন এই চিকিৎসক।
তবে এই ধরনের চুল পড়া সাধারণত অস্থায়ী এবং স্বাভাবিকভাবেই নিজে ঠিক হয়ে যায়। তবুও গোসলের সময়ে চুল পড়া হঠাৎ করে বেশ চিন্তার বিষয় হয়ে উঠলে পেশাদার চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া গুরত্বপূর্ণ।
চুল পড়া ও সমাধান
চুল পড়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ধরা হলেও, অতিরিক্ত চুল পড়ার ক্ষেত্রে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
পুষ্টি
সঠিক পুষ্টি চুলের বৃদ্ধি এবং তার স্বাস্থ্য বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন এ, বি, সি, ডি, ই এবং জিংক, লৌহ, প্রোটিন চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই চুলে এ ধরনের ভিটামিন সমৃদ্ধ পণ্য বেশি বেশি ব্যবহার করতে হবে, পাশাপাশি খেতে হবে।
চাপ নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত চাপের কারণে চুল পড়া বৃদ্ধি পায়। তাই ধ্যান, যোগব্যায়াম বা শখের কাজের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো গুরুত্বপূর্ণ।
সঠিক চুল পরিচর্যা
হালকা কন্ডিশনার এবং মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুলের যত্ন নিতে হবে। যা চুলের প্রাকৃতিক তেল ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়া চিরুনি বা ব্রাশ করার সময় অনেক বেশি কোমল হতে হবে। খুব জোরে বা তাড়াহুড়া করে চিরুনি ব্যবহার চুল ভেঙে যেতে পারে বা গোড়া থেকে উঠে আসবে।
ত্বক-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
অতিরিক্ত চুল পড়ার লক্ষণগুলো শনাক্ত হলে অবশ্যই একজন পেশাদার ত্বক-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এই উপায়ে নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে এবং চুলের স্বাস্থ্য ঠিক করতে সঠিক চিকিৎসাও নেওয়া যাবে।
আরও পড়ুন