বছর ১০ অথবা ১৫ আগে জাপানি খাবারের প্রতি ঢাকাবাসির আকর্ষণ কতটা ছিলো সেটা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। তবে সময় বদলেছে বেশ দ্রুতই। ঢাকায় গড়ে উঠেছে বেশ বড় ধরনের রেস্তোরাঁ বাণিজ্য।
Published : 10 Sep 2014, 08:42 AM
সামাজিক মাধ্যমগুলোতে আজকাল 'সুশি' খেয়ে ছবি আপলোড করা, অন্তত কিছু ঢাকাবাসির কাছে এখন আর কোনও ‘এলিয়েন’ বিষয় নয়।
জাপানি রেস্তোরাঁও হয়েছে এই মহানগরে বেশ কয়েকটি, ধানমণ্ডির সীমান্ত স্কয়ারে তো একটি কার্টেও মিলছে জাপানি খাবার। এই খাবার কতটা ‘খাঁটি’ সেটা নিয়ে কিছু ‘প্রশ্ন’ থাকতেই পারে।
তবে ঢাকার একটি রেস্তোরাঁ বেশ চুপিসারেই ‘খাঁটি’ জাপানি খাবার পরিবেশন করছে কয়েক বছর যাবৎ।
২০১০ সালের ‘ভালোবাসা’ দিবসে পাঁচ তরুণের উদ্যোগে শুরু ‘ইজুমি’ রেস্তোরাঁ। গুলশান অ্যাভনিউ থেকে বেশ কিছুটা ভেতরে, ১১৩ রাস্তার শেষে ২৪/সি বাড়ি। চোখ আটকে যাবে বাঁশঝাড়েই।
রেস্তোরাঁয় ঢোকার মুখেই বাঁ দিকে চোখে পড়বে চমৎকার একটি দেয়ালচিত্র। ভেতরে কিছুটা শৈল্পিক ছোঁয়া থাকার আভাস বলে মনে হতে পারে।
দেয়ালচিত্রে-- ঝড়ো হাওয়ায় একটি গাছের সব ডালপালা একদিকে উড়ে যাচ্ছে আর তাতে পড়ছে উজ্জ্বল আলো— এর মধ্যে অদ্ভুত ধরনের ‘বিষাদমাখা সৌন্দর্য’ লক্ষনীয়! তবে সন্ধ্যায় একবার ভেতরে ঢুকলেই মন ভালো হয়ে যাবে। মোমবাতির মৃদু আলো আর দেয়ালে ঝোলানো কিছু পেইন্টিং চোখের জন্য বেশ ভালো!
কথা হল অন্যতম কণর্ধার আলি আরর্সালানের সঙ্গে। বিলেতের প্রখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউসিএল’র গ্র্যাজুয়েট আরর্সালান জানালেন, বিদেশে পড়তে গিয়েই জাপানি খাবার ভালোভাবে চেখে দেখার সুযোগ হয়েছিল। সঙ্গে এই খাবারের ‘অসাধারণ’ স্বাস্থ্যগুণও মনে ধরেছিলো বেশ। পরে ব্যবসার কারণেও বহুদেশে গিয়ে শুরু করেন জাপানি খাবার খাওয়া। তারপরই চিন্তা আসে ঢাকাতে একটি রেস্তোরাঁ খোলার যেখানে ‘বিশ্বমানের’ জাপানি খাবার মিলবে।
মাসাউকি নাকাজিমায়ার নেতৃত্বে রসুইঘর পরিচালিত হয়। বুঝতেই পারছেন কেনও খাবার স্বাদ আসল জাপানি হবে।
এই রেস্তোরাঁয় ব্যবহৃত বহু উপকরণ যেমন টুনা ও অনান্য মাছ নিয়ে আসা হয় টোকিওর সুকিজি বাজার থেকে। এই বাজার আবার জাপানে মৎসজাত খাবার উপকরণ সরবরাহের জন্য বেশ প্রখ্যাত।
জাপানি বিভিন্ন খাবারে কাঁচামাছ ব্যবহৃত হয় হরহামেশাই। তাই টোকিওর বিখ্যাত এই বাজার থেকে সংগ্রহ করা উপকরণ যে কী পার্থক্য তৈরি করতে পারে তা বোধ করি কিছুটা অনুমেয়। আর ইজুমির দাবি— 'প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার টুনা মাছ এই বাজার থেকে সোজা ঢুকে পড়ে আমাদের রসুইঘরে।'
সুশি তো বেশ কয়েক রকম মিলবে এ আর নতুন কী!
সাশিমি প্ল্যাটার নিলে চোখ বুজে বলা যায় টেরই পাবেন না যে চমৎকারভাবে পরিবেশিত মাছগুলো আসলে রান্না করা হয়নি। আর সঙ্গে ওয়াসাবি সস তো আছেই! টুনা, স্ক্যালপ, চিংড়িসহ বেশ কয়েকটি পদ আছে এখানে। টুনামাছের বিভিন্ন অংশ থেকে কেটে তৈরি করা হয়, ফ্যাটের তারতম্যে স্বাদ পাল্টাবে পরতে পরতে।
আবার ডিপ ফ্রাইড টেম্পুরা দিবে পুরো উল্টো স্বাদ। এখানকার চিংড়ির ‘এবি নো টেম্পুরা' আমাদের দেশি জিভের জন্যও বেশ ‘আদর্শ’ বলা যায়। আর ১২ টুকরার মিক্সড টেম্পুরাতে মিলবে চিংড়ি, কাটল ফিশ ও সবজি। দাম পড়বে ১২শ' টাকা।
দ্বীপরাষ্ট্র জাপানে ঐতিহাসিক ভাবেই সামুদ্রিক মাছ খাবার চল রয়েছে। তবে এখন পৃথিবীর অন্যতম দামি এবং সেরা গরুর মাংসও জাপান থেকেই আসে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটির মধ্যে পড়ে ওয়াগু, মাতসুসাকা ও কোবে বিফ। কোবে আবার আরও বনেদি!
আর এসব মাংস সত্যি সত্যিই মিলবে ইজুমিতে।
আলি বলেন, "ঢাকাতে জাপানি বিফের জন্য ইজুমিই সেরা রেস্তোরাঁ।"
‘বিরল’ এই মাংসের ‘আসল’ স্বাদ নিতে চাইলে স্টেক বোধ হয় আদর্শ। আর চাইলে সুশিও নেওয়া যাবে। তবে, দাম যে কম হবে না সেটা কি আর বলে দিতে হবে!
ওয়াগু বিফের স্টেক অবশ্য ২ হাজার টাকাতেই মিলবে। দেশি বেঙ্গল মিটের বিফের স্টেকও চাইলে মিলবে।
মিলবে সুপ ও রাইস ডিশ। সালাদও আছে কয়েকরকম।
১২০ জনের বসার ব্যবস্থা থাকলেও ব্যুফে পার্টি না থাকলে কখনও পুরো বুকিং দেওয়া হয় না। খাবারের সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতেই এটি করা হয়।
ইজুমি খোলা থাকে দুপুর ১২টা থেকে ২টা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
রেস্তোরাঁর উপরের তলায় আছে একটি ক্যাফে, নাম 'ক্যাফে গুরমান্ড'। কফি ছাড়াও পাস্তা, স্যান্ডউইচ, বার্গার আর বেশ কয়েক ধরনের ডের্জাট মিলবে সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। এখানে ৪০ জনের বসার ব্যবস্থা আছে।
বিলেতের বিখ্যাত ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ গ্রাফিতি শিল্পী ব্যাঙ্কসির ‘ওয়াল অ্যান্ড পিস'এর কাভার ছবিটি হুবহু তুলে ধরা হয়েছে ক্যাফের বাইরের অংশের দেয়ালে।
কালিদাস অথবা অশরাফুল অথবা ব্যাঙ্কসির চিত্রের পাশে বসে মৃদুমন্দ মোমের আলো কিংবা সংগীতকে সঙ্গী করে খাঁটি জাপানি খাবারের স্বাদে হারিয়ে যাওয়াটা একেবারে মন্দ হবে না!
(*পরামর্শ: মাতসুসাকা ও কোবে বিফের স্টেক খেতে চাইলে পকেট ভারি থাকতে হবে।)
ছবি: ঋত্বিকা আলী।