ষাটের কাছাকাছি বয়সে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হাঁটতে গেলেও থাকতে হবে সাবধানে।
Published : 09 Jul 2021, 06:38 PM
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফিজিও থেরাপিস্ট’ ডেমিয়েন পওয়েল (পিটি) বলেন, “একজন সুস্থ, সবল তরুণ যখন হাঁটতে বের হয় তখন শরীরের নিচের অঙ্গের জোড়গুলো তাকে সমানভাবে শক্তি যোগায়। নিতম্বের জোড়, হাঁটু আর পায়ের পাতার জোড় সবই সমান পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করে। তবে একজন বৃদ্ধ মানুষ যার বয়স ষাট কিংবা তারও বেশি, তিনি কিন্তু একই গতিতে হাঁটার শক্তি পান না।”
বেস্টলাইফ অনলাইন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “এর পেছনে প্রধান সমস্যা হলো ‘অ্যাকিলিস টেনডন’ আর বার্ধক্যের কারণে হারানো পেশি। ফলে যে গতিতেই একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি হাঁটুন না কেনো, ৭৪ শতাংশ শক্তি যোগায় নিতম্বের জোড়, ১৩ শতাংশ হাঁটু আর ১২ শতাংশ পায়ের পাতা।”
বয়সের সঙ্গে মানুষের হাঁটার গতি কমে, ‘পশ্চার’ বা দেহভঙ্গী ঠিক থাকে না। তাল হারিয়ে যেতে থাকে। তার সঙ্গে হাঁড়ের কোনো রোগ, হৃদরোগ, হাঁপানি কিংবা কোনো ব্যথা থাকলে হাঁটা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
এজন্য বৃদ্ধদের হাঁটার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
স্ট্রেচিং করছেন না: পওয়েল বলেন, “বার্ধক্যের কারণে মনস্তাত্বিক যে পরিবর্তন আসে তা থেকে মানুষের হাঁটার ধরনে পরিবর্তন হয়। হাঁটাকে যখন ব্যায়াম হিসেবে নিচ্ছেন তখন তার আগে স্ট্রেচিং করে নিলে সেই প্রভাব কিছুটা দূর হবে।
‘কারেন্ট ট্রান্সলেশনাল জেরিয়াট্রিকস অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল জেরোন্টোলজি রিপোর্টস’ শীর্ষক সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায় জানা যায়, কিছু ব্যায়াম বয়স্ক মানুষের হাঁটার ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর। যেমন- চেয়ারে একাধিকবার উঠবস করা, পায়ের পাতার জোড়ের ‘স্ট্রেচিং’, ‘অ্যারোবিকস কন্ডিশনিং’ ব্যায়াম, শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয় এমন ব্যায়াম ইত্যাদি।”
‘এএসসিএম’ প্রশিক্ষক এবং ‘ফিট হাউস ডেভিস’য়ের প্রতিষ্ঠাতা লিসা হেরিংটন বলেন, “ব্যায়ামের জন্য হাঁটা শুরু করার আগে পিঠ, নিতম্ব, ‘কোয়াড’, ‘হ্যামস্ট্রিং’য়ের স্ট্রেচিং করতে হবে। সব বয়সের মানুষের জন্যেই এগুলো জরুরি। তবে বৃদ্ধদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।”
গান শোনা: হাঁটার সময় গান শোনা বৃদ্ধদের জন্য বিশেষ উপকারী বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা।
‘জার্নাল অফ ফিজিওথেরাপি’তে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, “স্ট্রোক থেকে সুস্থ হওয়া রোগীরা যদি হাঁটার সময় গান শোনার অভ্যাস করেন তবে তাদের হাঁটার গতি বাড়বে, প্রতি ধাপের দূরত্ব বাড়বে, শরীরের তাল বজায় রাখাও সুবিধা হবে।”
হাঁটার সঠিক ধরন: দুপেয়ে স্তন্যপায়ী মানব জাতির জন্য হাঁটতে জানা সহজাত ব্যাপার। তার মানে এই নয় সবার হাঁটার ধরনটা সঠিক।
বৃদ্ধদের জন্য এটি বিশেষভাবে সত্য।
‘ব্রিস্টল নরডিক ওয়াকিং’য়ের বিশেষজ্ঞরা বলেন, “হাঁটার সময় মাথা সঠিক অবস্থানে থাকা চাই। ঘাড়কে মেরুদণ্ডের একটি অংশ ভেবে নিতে হবে। এজন্য মনে করুন আপনি নিজের মেরুদণ্ডকে প্রসারিত করছেন। চোয়াল থাকবে মাটির সঙ্গে সমান্তরাল।”
‘দ্য ভেগা মেথড’য়ের প্রবর্তক জো ভেগা (সিএসসিএস) বলেন, “কার্যকরভাবে হাঁটতে হলে কদম ফেলার সময় পায়ের গোড়ালি সবার আগে মাটি স্পর্শ করবে, এরপর সামনের অংশ। আর কদম তোলার সময় পায়ের বুড়ো আঙুল মাটিতে ধাক্কা দেবে।
এজন্য হাঁটা শুরু করার আগে ‘শোল্ডার স্রাগস’ নামক ব্যায়াম করে নিতে হবে হাঁটার আগে ও হাঁটার মাঝে।
লেসলি বনসি (এমপিএইচ, আরডি, সিএসএসডি, এলডিএন) আর মাইকেল স্ট্যানটেন জোর দেন হাতের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার দিকে।
হাত কনুই থেকে ভাঁজ হয়ে থাকবে। ছোট ধাপ হবে কিন্তু দ্রুত পা চালাতে হবে। এত গতি বাড়বে, শরীরের ভারসাম্যও বজায় থাকবে।”
সাবধানতা: বয়স যেহেতু বেড়েছে, তাই হাঁটতে গিয়ে যে কোনো দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রবল।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্যানেট ডেপ্যাটি (সিপিটি), ‘এভিবড ক্যান এক্সারসাইজ’য়ের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, “বয়স্করা যখন হাঁটতে যাবেন তখন তাদের সঙ্গে অবশ্যই মোবাইল থাকতে হবে। যাদের কানে শোনা এবং চোখে দেখা নিয়ে সমস্যা আছে তাদের রাতে হাঁটতে যাওয়া উচিত হবে না। নিজের কি রোগ আছে এবং জরুরি সময়ে যোগাযোগের মানুষগুলোর নম্বর, ঠিকানা ইত্যাদি সঙ্গে থাকা জরুরি।”
“আবহাওয়াও সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। গরমের দিনে ব্যায়াম করা বেশি কষ্টের যা বৃদ্ধদের জন্য মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে হাঁটার জন্য শপিংমল বেছে নিতে পারেন যা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।”
অতিরিক্ত নরম কিংবা ঢিলা জুতা: পায়ে ‘সাপোর্ট’ দেয় এমন জুতা বেছে নিতে হবে হাঁটা কিংবা দৌড়ানোর জন্য। তলা সমান ঢিলেঢালা জুতা পরে হেঁটে স্বস্তি পাওয়া যায় না, আবার জোর কমে আসে।
অতিরিক্ত নরম জুতাও হাঁটার জন্য উপযোগী নয়। শক্ত জুতা পরতে হবে। শক্ত জুতার তুলনায় বরং নরম জুতা পরে হাঁটলেই ব্যথা হয় বেশি।
ওজন থাকা যাবে না: ডেপ্যাটি বলেন, “ব্যায়াম হিসেবে হাঁটার সময় সঙ্গে ব্যাগ বা এই ধরনের ভারী কিছু থাকা উচিত নয়। আর ব্যাগ যদি নিতেই হয় তবে এক কাঁধে নয়, দুই কাঁধে ঝোলানো হয় এমন ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে।”
হাতে পানির বোতল না রাখাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এই অসম ওজন শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করবে।
আরও পড়ুন