যেসব ওজন কমানোর কৌশল কার্যকর নয়

দেহের বাড়তি ওজন কমাতে কিছু কৌশল কখনই কাজের নয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2021, 06:51 AM
Updated : 29 March 2021, 06:51 AM

শরীরের ওজন একবার অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে পৌঁছে গেলে তা কমিয়ে আনা মোটেই সহজ কাজ নয়।

বাড়তি ওজন কমাতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, অসংখ্য মুখরোচক খাবার বাদ দেওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, ঘুমের নিয়ম ঠিক রাখা সবকিছুই মেনে চলতে হয়।

ইন্টারনেটে ওজন কমানোর অসংখ্য পদ্ধতির ব্যাপারে বলা হয়। তবে সবই যে সবার জন্য কার্যকর হবে তা কিন্তু নয়।

এমনই কিছু অকার্যকর ওজন কমানোর পদ্ধতির ব্যাপারে জানানো হলে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে। 

ডিটোক্স ডায়েট: শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান বের করে দেওয়ায় সহায়ক একটি খাদ্যাভ্যাস এই ‘ডিটোক্স ডায়েট’। দাবি করা হয়, এই খাদ্যাভ্যাস ওজনও কমায়।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’য়ের মতে, “ডিটোক্স ডায়েট’য়ের সঙ্গে ওজন কমানোর কোনো সম্পর্ক নেই।”

কার্বোহাইড্রেইট বাদ দেওয়া: ওজন বেড়ে যাওয়া পেছনে কারণ জানতে চাইলে অধিকাংশ সময় সব দোষ চাপিয়ে দিতে চায় ‘কার্বোহাইড্রেইট’-ধরনের খাবারের ওপর।

এই উপাদান খাদ্যাভ্যাস থেকে বাদ দিতে পারলেই যেন সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তবে মনে রাখা উচিত, প্রতিটি পুষ্টি উপাদানই একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত প্রয়োজন।

আর প্রয়োজনের বেশি শরীরে সরবরাহ করা হলে সকল পুষ্টি উপাদানই ক্ষতির কারণ হবে। তাই ওজন কমানোর জন্য খাদ্যাভ্যাস থেকে ‘কার্বোহাইড্রেইট’ একেবারে নির্মূল করলে ওই ব্যক্তি শারীরিকভাবে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়বেন, পরিশ্রম না করেও ক্লান্তি হবে নিত্যসঙ্গী, মেজাজ থাকবে খিটখিটে।

ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ‘কার্বোহাইড্রেইট’ গ্রহণ করতে হবে। সরল ‘কার্বোহাইড্রেইট’ বাদ দিয়ে জটিল ‘কার্বোহাইড্রেইট’ আছে এমন খাবার বেছে নিতে হবে।

চর্বি বাদ দেওয়া: শরীর মুটিয়ে যাওয়া মানেই যদি চর্বি বেড়ে যাওয়া হয় তবে চর্বি-জাতীয় খাবার বাদ দেওয়াই তো তাহলে আদর্শ সমাধান। বাস্তবে বিষয়টা এতটা সহজ নয়।

সকল চর্বি শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় আর চর্বিও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।

প্রথমতো কোন খাবারে ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ থাকে সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং সেগুলো যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করতে হবে পরিমাণ বুঝে। বাদাম, মাছ এবং ‘ভার্জিন অলিভ অয়েল’য়ে থাকা চর্বি স্বাস্থ্যকর।

ফিটনেস ব্যান্ড পরলেই ওজন কমে না: কতক্ষণ শরীরচর্চা করলেন, তাতে কতটুকু ক্যালরি খরচ হল, হৃদস্পন্দন আর রক্তচাপের মাত্রা কেমন আছে ইত্যাদি কিছু তথ্য জানা যায় ‘ফিটনেস ব্যান্ড’ কিংবা ‘স্মার্টওয়াচ’ থেকে।

আপনার স্বাস্থ্যের কোনো উন্নয়ন করার ক্ষমতা এই যন্ত্রগুলোর নেই, শুধু তথ্য দিতে পারে। তাই ‘ফিটনেস’ ব্যান্ড হাতে পরে যদি শরীরচর্চাই না করেন তবে সারাজীবন তা হাতে দিয়ে রাখলেও ওজন কমবে না।

খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্যকর হলেও স্বাদহীন: স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললেন ঠিকই, কিন্ত সেই খাবারের স্বাদ যদি আপনার পছন্দ না হয় তবে ওই খাদ্যাভ্যাস বেশিদিন আপনি মেনে চলতে পারবেন না। তাই স্বাস্থ্যকর খাবারের পুষ্টিমান অক্ষুণ্ন রেখে কীভাবে তাকে সুস্বাদু করতে হয় সেটাও আপনাকে শিখতে হবে।

না খেয়ে থাকা: খাওয়া নিয়ে যখন এত কথা তখন খাবই না, এমনটা ভাবলেও বিপদ বাঁধবে। রোজা রাখা, মাঝেমাঝে কোনো এক বেলার খাওয়া বাদ দেওয়া, ইচ্ছে করে প্রয়োজনের চাইতে কম খাওয়া উপকারী হতে পারে। তবে শর্ত হল তা নিয়মিত হওয়া যাবে না এবং একবেলা কম বা না খেয়ে থেকে পরে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা যাবে না।

নিয়মিত অভুক্ত থাকা মানেই হল আপনার ক্ষুধা কখনই মিটছে না। ফলে মানসিকভাবে আপনি যেমন বিমর্ষ থাকবেন তেমনি ওই মানসিক বিষণ্নতাই অস্বাস্থ্যকর ‘কমফোর্ট ফুড’য়ের প্রতি আকর্ষণ বাড়াবে ক্রমাগত।

চিট ডে: ওজন কমাবেন বলে যে মুখরোচক প্রিয় খাবারগুলো খেলে পাপ হবে তা কিন্তু নয়। বরং মাসে দুতিন দিন বার্গার, পিৎজা, পাস্তা ইত্যাদি খাওয়া ওজন কমানোর জন্য সহায়ক হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণের মূল কথা হল পরিমাণ মতো খাবার খাওয়া।

সপ্তাহে তিন-চার দিন ‘জাঙ্কফুড’ খাওয়া যেমন ক্ষতিকর তেমনি অনেকদিন ‘জাঙ্কফুড’ খাননি বলে একদিনেই পিৎজা, বার্গার, কোমল পানীয়, তেলে ভাজা খাবার সব খেয়ে ফেলাও ক্ষতিকর।

সালাদ খেয়ে বেঁচে থাকা: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বাড়াবাড়ি করার এটি একটি আদর্শ উদাহরণ। প্রচুর মাছ, মাংস খেয়ে ওজন বেড়েছে বলে সিদ্ধান্ত নিলেন আজ থেকে সব বাদ, শুধু সালাদ খাবেন।

চিন্তা করতে হবে মাছ, মাংস খেয়েছেন বলেই যে ওজন বেড়েছে তা কিন্তু নয়। ওজন বেড়েছে অতিরিক্ত খাওয়ার জন্য। আর এখন সব বাদ দিয়ে শুধু সালাদ খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াতে হারাচ্ছেন মাছ, মাংস থেকে পাওয়া পুষ্টি উপাদানগুলো।

অপরদিকে সালাদ মানেই পুষ্টির ছড়াছড়ি নয়। চিজ, অতিরিক্ত লবণ, বিভিন্ন ‘ক্রিম ড্রেসিং’ দিয়ে বানানো সালাদও হতে পারে ওজন বাড়ার কারণ।

আরও পড়ুন