চর্বি কমাতে চর্বিযুক্ত খাবার

যারা স্বাস্থ্য সচেতন বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তারা সব সময়ই চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলেন। তবে সব চর্বিযুক্ত খাবারই কি ওজন বাড়াতে দায়ী!

কামরুন নাহার সুমিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2014, 01:14 PM
Updated : 21 Jan 2015, 03:40 PM

খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে জানানো হয়, বৈজ্ঞানিকরা দেখিয়েছেন চর্বি খাওয়া মানেই মোটা হওয়া নয়।

যেসব খাবারে শরীরের জন্য ক্ষতিকর চর্বিতে ভরপুর সেগুলোই ওজন বাড়ায়। পাই ক্রাসট এবং অন্যান্য বেইক করা খাবারে ট্র্যান্স ফ্যাট থাকে। প্রক্রিয়াজাত করা এবং শস্য খাওয়া পশুর মাংসে স্যাচারেইটেড ফ্যাট থাকার পাশাপাশি অত্যধিক ক্যালোরি থাকে যা শেষ পর্যন্ত শরীরের পুষ্টির সীমারেখায় ক্ষতিগ্রস্ত করে।

কিন্তু স্বাস্থ্যকর চর্বি ঠিক তার উল্টোটা করে যেমন: ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীর থেকে প্রতিদিনের খাওয়া বাড়তি ক্যালোরি ঝরিয়ে ফেলে। তাই হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং বিপাকক্রিয়া সচল থাকে।    

ঘাস খাওয়া পশুর মাংস

‘ঘাস খাও’ বলতে অকর্মা বুঝালেও ঘাস খাওয় পশুর মাংস কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। দামে একটু বেশি হলেও এর চর্বি স্বাস্থ্যের জন্য এত উপকারি যে তা দাম পুষিয়ে দেয়। নিউট্রিশন জার্নালের এক গবেষণায় দেখা গেছে- ঘাস খাওয়া পশুর মাংসে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য পরিচিতি। আর সাধারণ মাংসের তুলনায় এই মাংস প্রাকৃতিকভাবেই চর্বিহীন ও কম ক্যালোরি যুক্ত।

চর্বি ছাড়া ৭ আউন্সের একটি ফালি করা সাধারণ স্টেক থেকে ৩৮৬ ক্যালোরি এবং ১৬ গ্রাম চর্বি শরীরে ঢুকে যেতে পারে। সেখানে একই পরিমাণ ও আকারের ঘাস খাওয়া পশুর মাংস খেলে ২৩৪ ক্যালোরি ও ৫ গ্রাম চর্বি শরীরে ঢুকে।      

অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েলে আছে ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধকরা পলিফেনল উপাদান ও হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক মনোআনস্যাচারেইটেড ফ্যাট। সম্প্রতি স্থূলতা বিষয়ের উপর করা এক গবেষণায় জানা যায়- শর্করা বা আমিষ সমৃদ্ধ খাবারের তুলনায় অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরি খাবার শরীরে অ্যাডিপোনেক্টিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অ্যাডিপনেক্টিন হচ্ছে এমন একটি হরমোন যা শরীর থেকে চর্বি কমাতে সাহায্য করে এবং যত বেশি অলিভ অয়েল খাওয়া হবে ততবেশি বিএমআই কমার প্রবণতা থাকবে।       

ডার্ক চকলেট

যারা চকলেট খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য সুখবর, চকলেট পেট মেদহীন করতে পারে, তবে সেটা ডার্ক চকলেট। তবে এই উপকার পেতে ডেজার্ট পর্যন্ত অপেক্ষা না করাই ভালো।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে- যারা খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা আগে ৩.৫ আউন্স চকলেট খেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ডার্ক চকলেট গ্রহণকারীরা মিল্ক চকলেট গ্রহণকারীদের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম ক্যালোরি গ্রহণ করেন। গবেষকদের মতে, ডার্ক চকলেটে আছে বিশুদ্ধ কোকো বাটার, যা হজম প্রক্রিয়া ধীর করার জন্য দায়ী স্টিয়ারিক অ্যাসিডের অন্যতম উৎস। ডার্ক চকলেট হজম হতে সময় নেয়, ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং ওজন কমাতে ভুমিকা রাখে।    

কাঠ বাদামের মাখন

উচ্চ মাত্রার চর্বি থাকার পরেও কাঠবাদাম ওজন কমাতে সহায়তা করে।

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল ৬ মাস ধরে স্থুলতা ও বিপাকীয় রোগের উপর দুই ধরনের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে তুলনামূলক গবেষণা করে।

গবেষণায় একদল কম-চর্বি ও সীমিত ক্যালোরিযুক্ত খাবার খায় (যাতে ছিল ১৮ শতাংশ চর্বি)। অন্য দল পরিমিত-চর্বি যুক্ত খাবার (৩৯ শতাংশ চর্বি) খায় যেখানে অতিরিক্ত চর্বি হিসেবে কাঠবাদাম খেতে দেওয়া হয়েছে।

দেখা গেছে আগের দলের তুলনায় পরের দল বেশি ওজন হারিয়েছে। যদিও দুই দল সমপরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ করেছিল। আরও দেখা গেছে যারা কাঠ বাদাম খেয়েছেন তাদের কোমরের মেদ ৫০ শতাংশ বেশি কমেছে।

একটা কীভাবে হল? কাঠবাদামে থাকা উপাদানসমুহ শরীরকে বেশি চর্বি শোষণ করতে দেয় না। ফলে কিছু চর্বি হজম না হয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কাঠবাদামের মাখন ওটমিলের সঙ্গে মিশিয়ে টোস্টে মাখিয়ে কলা দিয়ে খেতে পারেন, বা কয়েক চামচ কাঠবাদাম হালকা খাবার হিসেবেও খাওয়া যায়।

ছবি: রয়টার্স।