‘প্যাট আ পেট’ ক্যাফেতে পোষা বিড়াল-কুকুর নিয়ে খাবার খাওয়া যায়।
Published : 04 Jul 2023, 09:23 PM
সিঁড়ির ধাপ একটু উঁচু। তাই বিড়ালের মতো লাফিয়ে ওঠার নোটিশ সাঁটানো হয়েছে সিঁড়িতে।
মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডের ৮০ নম্বর প্লটের ভবনের ঈষৎ সরু সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় যদি ওই নোটিশ চোখে পড়ে তবে বুঝে নেবেন পৌঁছে গেছেন ‘প্যাট আ পেট’ ক্যাফেতে। কারণ বিড়াল পুষবেন কিন্তু বিড়ালের মতো লাফাতে পারবেন না, সেটা তো হয় না!
যদিও রাস্তা থেকেই চোখে পড়ে এই ক্যাফের সাইনবোর্ড।
দেশে সাধারণ ভাত-মাছের খাবারের দোকানে দুয়েকটা বিড়াল পায়ের ফাঁক গলে খাওয়ার জন্য ঘুর ঘুর করলেও, দামি কোনো রেস্তোরাঁয় এই দৃশ্য দেখা যাবে না। তবে ‘প্যাট আ পেট’ ক্যাফের নিয়ম আলাদা।
এখানে পোষা প্রাণী নিয়ে সময় কাটানোর ব্যবস্থাতো আছেই, পাশাপাশি রেস্তোরাঁতেও রয়েছে নানান ধরনের বেড়ালের বিচরণ। কারণ সেগুলো ওখানেই থাকে, খায়, ঘুমায়।
প্রাণীদের প্রতি সদয় হওয়া আর বিরূপ মনোভাব দূর করার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০২২ সালে এই ক্যাফে গড়ে তোলেন প্রাণীপ্রেমী পেশায় স্থপতি রাকিবুল হক এমিল, সারিয়া সাওয়ারো এবং ফারজানা আলম।
তিনতলায় অবস্থিত এই ক্যাফেতে শুধু খাওয়া দাওয়া নয়, প্রাণীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য দোতলায় রয়েছে প্রাণী অধিকার ও কল্যাণ নিয়ে কাজ করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘প ফাউন্ডেশন’য়ের পশু হাসপাতাল ‘প লাইফ কেয়ার’।
এমিল কথায় কথায় বললেন, “এই হাসপাতালে শুধু পোষা প্রাণী নয়, কেউ যদি কোনো জায়গা থেকে অসুস্থ প্রাণী উদ্ধার করে নিয়ে আসন, তাদেরও চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি আশ্রয় দেওয়া হয়।”
আর ক্যাফের পাশেই রয়েছে ‘ফারিঘর’, যা কি-না আসলে প্রাণীদের হোটেল।
এমিল বলেন, “যার পোষা প্রাণী রয়েছে, সে যদি কোনো কারণে কয়েকদিনের জন্য তার পোষ্যকে কোথাও রাখতে চায় তাহলে আমাদের এই ‘ফারিঘর’য়ে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে রেখে যেতে পারবেন। কারণ এখানে রাখা প্রাণীদের দেখভাল করার জন্য রয়েছে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেবক। শুধু খাবারটা মালিককে কিনে দিয়ে যেতে হবে।”
জানা গেল, ‘প ফাউন্ডেশন’য়ের উদ্যোক্তার তত্বাবধানে এই ‘ফারিঘর’য়ের দায়িত্বে তিনি ছাড়াও রয়েছেন স্থপতি ও প্রাণী অধিকার আন্দোলনের সাথে যুক্ত নুজহাত নাবিলা, তানিয়া এবং ‘ডিজিটাল মার্কেটার’ হিসেবে পরিচিত খালিদ ফারহান।
ক্যাফের দায়িত্বে রয়েছেন শিল্পী এবং শেফ সারিয়া সাওয়ারো। আর পশুদের চিকিৎসা প্রদানের দায়িত্বে রয়েছেন ইউরিপিয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও প্রাণী চিকিৎসক ডা. ফারজানা আলম শম্পা।
যা যা করা যাবে
বিড়ালে গায়ে হাত বুলিয়ে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বিকেলের আড্ডাটা এখানে মন ভরেই দেওয়া যাবে।
এমিল বলেন, “এখানে পোষা প্রাণী নিয়ে আসার নিয়ম হল তাকে সবগুলো ভ্যাকসিন দেওয়া থাকতে হবে। এতে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকবে না। তাছাড়া কারও কুকুর যদি অন্য কোনো প্রাণী বা মানুষ সহ্য করতে না পারে, সেটা সামলিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়েই মালিককে এখানে আসতে হবে।”
আরও বলেন, “শুধু খাওয়া দাওয়া নয়, এই ক্যাফের ছাদে আমরা কৃত্রিম একটা ‘লন’ বা উঠানের মতো করেছি। সেখানে কুকুর নিয়ে দৌড়ঝাঁপ খেলাধূলা করা যাবে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে।”
আর চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল তো রয়েছেই।
নিজে খাবেন প্রাণীকেও খাওয়াবেন
ক্যাফেতে শুধু মানুষের নয়, প্রাণীদের জন্যও রয়েছে নানান পদের খাবার। বিড়ালের জন্য রয়েছে টুনা মাফিন। কুকুর-বিড়ালের জন্য রয়েছে নানান ধরনের বিস্কুট, কাপ কেক।
আর যেহেতু প্রাণীদের প্রতি সদয় হওয়ার উদ্যোগে এই ক্যাফের যাত্রা শুরু তাই মানুষের জন্য এখানে রয়েছে ‘ভেজিটেরিয়ান’ খাবারের আয়োজন। স্বাদ নেওয়া যাবে- ভেজ বার্গার, মাংসহীন নানান পদের মোমো, পাস্তা-পিৎজাসহ, বিভিন্ন ধরনের ‘শেইক’ ও কফি।