‘লাভ লেটার’ হয়ত পেয়েছেন। তবে স্বাদ নিয়েছেন কি কখনও?
Published : 24 Dec 2023, 05:18 PM
১৭৩ বছরের পুরানো বেকারি প্রিন্স অব ওয়েল্স। এর থেকেই বাংলাদেশে বেকারি ঘরানার প্রচলন ঘটে বলে ধারণা করা হয়।
আর শীতে এখানেই মিলবে মিষ্টি খাবার ‘লাভ লেটার’।
১৮৫০ সালে গ্রেট ব্রিটেনের ওয়েল্স থেকে এক ভদ্রলোক ভারতবর্ষে এসে একটি বেকারির যাত্রা শুরু করান। যার নাম ‘প্রিন্স অব ওয়েল্স’।
বর্তমানে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত রয়েছে সেই বেকারি দীর্ঘ ১৭৩ বছর ধরে সম্মান ও জনপ্রিয়তার সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় সেই জনাব ওয়েল্স বাংলাদেশ ছেড়ে নিজের দেশে চলে যাওয়ার সময় তার বাংলাদেশি শিষ্য শেখ বদরুদ্দিন আহমেদের হাতে এই বেকারি দিয়ে যান।
কালক্রমে তার নামটির সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে বুদ্ধু মিয়া নামে পরিচিত হন।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, বুদ্ধু মিয়া ১২ বছর বয়স থেকে ওয়েলসের এই বেকারিতে কাজ শেখেন। তারপর পৈতৃক সূত্রে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক হন আফতাব উদ্দিন আহমেদ, নুরুদ্দিন আহমেদ, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, আব্দুল কাদের ও মঞ্জুর আহমেদ।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন তাদের ভাতিজা ও ভাতিজি, ছেলে মেয়েরা।
সেই সময় ভারতবর্ষের এই অঞ্চলে যেসব ব্রিটিশ এসেছিল, তাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ওয়েল্স এই বেকারি প্রতিষ্ঠা করেন। জায়গা হিসেবে লক্ষ্মীবাজারকে বেছে নেওয়ার কারণ সম্ভবত সেখানে সেন্ট গ্রেগরি মিশন ও আশপাশের এলাকা। বেকারির সঙ্গেই কারখানা।
একজন বংশধর ও প্রতিষ্ঠানটি অন্যতম পরিচালক ইমরান আহমেদ দিপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে এখনও সনাতন পদ্ধতিতে খাবার প্রস্তুত কিংবা বেইক করা হয়। কারখানার যন্ত্রপাতি বা অন্যান্য সিস্টেম সেই আদিকালের। এখনও কাঠের আগুনে চুল্লি জ্বালানো হয়। স্টিলের লম্বা হাতায় করে ট্রেগুলোকে ভেতরে পাঠানো কিংবা বাইরে আনা হয়।”
কাঠের চুলায় বেইক করা হয় বলে এর স্বাদ হয় ভিন্ন। এখানে বেকারির সকল আইটেম সারা বছর পাওয়া যায়। বাটার বন, ক্রিম রোল, বিস্কুটের বেশ চাহিদা রয়েছে এখানে।
তিনি বলেন, “প্রতি বছর বড়দিন উপলক্ষ্যে এখানে বিশেষ কেক তৈরি করা হয়। বড়দিনের বিশেষ ফ্রুট কেকের পাশাপাশি তিন রকমের কেক- টার্ট, জ্যাম টার্ট ও ছানার কেক তৈরি করে থাকি। জনপ্রিয় আরেকটি পদ হল ‘লাভলেটার’ এই পদগুলো শুধু বছরের এই সময়েই পাওয়া যায়।”
“বেকারির শুরুর সময় থেকেই এই পদগুলোর কদর ছিল। এখন পর্যন্ত সকলের পছন্দ। দূরদূরান্ত থেকেও আমাদের কেক নিতে মানুষ চলে আসেন। কেবল খ্রিস্টানরাই নয় বড়দিনের কেক নিতে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ সব ধর্মের মানুষই আমাদের এইখানে আসে”- বলেন তিনি।
পাউন্ড হিসেবে বড়দিন স্পেশাল ফ্রুট কেক ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হয় এবং বাকি তিনটি ছোট কাপ কেক ৩০ টাকা প্রতিটি বিক্রি করা হয়।
এছাড়াও বাটার বান, ক্রিম রোল, ড্যানিশ, নোনতা ও মিষ্টি বিস্কুট, ড্রাই কেক, প্লেন কেক সারা বছরই পাওয়া যায়।
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিয়েতে কেক কাটার প্রচলন ছিল অনেক আগে থেকেই। শুরু থেকেই এই বেকারি অর্ডারের ভিত্তিতে খ্রিস্টানদের বিয়ের কেক তৈরি করে বলে জানান, তিনি।
যেভাবে যাবেন
পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার থেকে সদরঘাট যাওয়ার পথে ভিক্টোরিয়া পার্ক। পার্কের বাঁয়ে ঘুরে কিছুদূর এগোলেই লক্ষ্মীবাজার। এখানেই দেখা মিলবে বাংলাদেশের প্রাচীন বেকারি ‘প্রিন্স অব ওয়েল্স’।