প্রথমে মনে হবে কোনো সাজানো গোছানো বাগানে ঢুকছেন।
Published : 29 Jan 2024, 06:18 PM
রেস্তোরাঁর নাম শুনলেই নানান রকম খাবারের ছবি চোখে ভাসে।
আর রাজধানীর আনাচে কানাচে গড়ে ওঠা নানান ধরনের খাবারের দোকানে সবুজের ছোঁয়া তো দূরে থাক ফাঁকা জায়াগাও থাকে না। অন্যের সঙ্গে গায়ে গা ঠেকিয়ে খেতে হয়।
অথচ এই ইট-কাঠ-পাথরের জঙ্গলের মাঝে সবুজের ছোঁয়ার সঙ্গে নান্দনিকতার পরশ মিলবে ‘অজ আইডিয়া স্পেস’য়ে।
এটা শুধু রেস্তোরাঁ নয়; কারণ খাবার ছাড়াও এখানে রয়েছে চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা, ফুল ও গাছের আধুনিক নার্সারি, আধুনিক ডিজাইনের ব্যাগের দোকান, খোলা সবুজ উঠান, উঠানের পাশে সুসজ্জিত গাছ ও ফুলে ফুলে ছড়িয়ে থাকা পায়ে হেঁটে বেড়ানোর নান্দনিক পথ।
এই ব্যতিক্রমী আয়োজনের পেছনে রয়েছেন খালিদ মাহমুদ। যিনি বহুদিন ধরে রেস্তোরাঁর ব্যবসা ছাড়াও নানান ধরনের শৈল্পিক ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত রয়েছেন।
তিনি এমন একটি জায়গা তৈরি করবার পরিকল্পনা করেছিলেন যা হবে নান্দনিক, পরিবেশ-বান্ধব এবং সকল অতিথিদের পরিপূর্ণ সেবার স্থান।
তাই ‘অজ আইডিয়া স্পেস’ নগরের মাঝে হয়েও নগরের থেকে অনেক বেশি সবুজ ও প্রাণবন্ত।
উঁচু উঁচু অট্টালিকার ভীড়ের মাঝে ‘১০১ এন আর্ট স্পেস’, ইকেবানা বাংলাদেশ, ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ সমন্বিত ডিজাইনে শৈল্পিকভাবে স্থান করে নিয়েছে।
এখানে সচেতনভাবে পরিবেশের কোনো প্রকার ক্ষতি না করে পরিবেশবান্ধবভাবে সবকিছু সাজানো।
প্রাচীন মহাস্থানগড়কে প্রেরণা হিসেবে ধরে অনেকটা বৌদ্ধমঠের আদলে নকশা করা হয়েছে। ‘গ্রুপ অব আর্কিটেক্ট অ্যান্ড থিংকার্স’ নামক একটি কমিউনিটি এই সৃজনশীল নকশার পেছনে কাজ করেছে।
খালিদ মাহমুদ বলেন, “এয়ারকার্গোতে ব্যবহৃত পারটেক্স বোর্ড দিয়ে তৈরি হয়েছে দেয়াল, জাহাজের স্ক্র্যাপ মেটালে তৈরি হয়েছে টেবিল, পল্লীবিদ্যুতের পুরানো কাঠের খুঁটি কেটে তৈরি করা হয়েছে মেঝে এবং অন্যান্য জিনিস।”
সোফা আর চেয়ারে গার্মেন্টসের কাপড় পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে।
ছোট জায়গায় প্রায় ৪৫ প্রজাতির গাছ, জলাধার, সবুজ ঘাসের মাঠ, বই, পেইন্টিংস, আরামদায়ক লাউঞ্জ।
শৈল্পিক ছোঁয়া দেওয়া হয়েছে এখানকার খাবার, আবহ, নকশা আর পুরো ভাবনার মধ্যে।
জলাধারের পাশে প্রাচীর হিসেবে কংক্রিটের ব্যবহারের পরিবর্তে পুরানো কাঠের ফ্রেমে গ্লাসের জানালা ব্যবহার করা হয়েছে। যেন ভেতরের তাপমাত্রা দুতিন ডিগ্রি কম থাকে। একই সাথে জলের ঝিরিঝিরি শব্দ, মৃদু হাওয়া আর মৃদু সংগীত যে কারও মনে প্রশান্তি এনে দেয়। আর পাশ ফিরলেই প্রকৃতিকে কাছাকাছি পাওয়া যায়।
খালিদ মাহমুদ বলেন, “জানালার পাশে জলাধারটির পানি জানালার ভেতরের পরিবেশকে ঠাণ্ডা রাখে। বাইরের তাপমাত্রা থেকে প্রায় ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমিয়ে আনে।”
তিনি দাবি করেন, “আমাদের এই জায়গা পরিবেশের দিক থেকে টেকসই, অর্গানিক আর সাদামাটা। এখানে এসে সবাই নিজের মস্তিষ্কের জটগুলো খুলতে পারবেন। আর শান্ত পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন প্রাণভরে।”
গুলশান দুইয়ের ১০১ নম্বর সড়কের একটি পুরানো বাড়িকে এভাবেই নতুন রূপে সাজিয়ে ভোজন রসিকদের খাবার উপভোগ করার পাশাপাশি প্রকৃতি ও নান্দনিকতার স্পর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
এখানে খাবারের প্রতিও নেওয়া হয়েছে বিশেষ যত্ন। ব্যবহার করা শতকরা ৯৭ ভাগ স্থানীয় খাবার। উপকরণগুলোকে আন্তর্জাতিক মাত্রা দিয়েছে।
স্প্যানিশ টাপাস প্ল্যাটার, ইন্ডিয়ান নান উইথ কারি, পাস্তা, ফ্রায়েড কালামারি— সবকিছুই দেশি উপকরণ দিয়ে তৈরি।
এছাড়াও মেনুতে আছে বেশ কিছু বাহারি নামের মকটেল। রংবাজ, দুই পয়সার আলতা, সঞ্চারিণী, সবুজ সাথির মতো মজার সব নাম দেওয়া হয়েছে এই মকটেলগুলোর।
অজ আইডিয়া স্পেস’য়ে মনোরম পরিবেশ থাকায় পড়াশুনা ও কাজ করার জন্য বেশ উপযোগী, জানান খালিদ মাহমুদ।
শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার অনেকেই এসে বসে বই পড়েন, কাজ করেন।