বকা দিয়েও সন্তানের হাত থেকে ফোন সরানো যাচ্ছে না, তাহলে করবেনটা কী?
Published : 26 Sep 2024, 04:25 PM
স্মার্ট ফোনের শিকার হয়ে শিশুদের নানান কাজের ব্যঘাত তৈরির ঘটনা নতুন নয়। এমনকি অনেক গবেষণাতেও দেখা গেছে, ‘স্মার্ট ফোন, শিশুদের স্মার্ট বানায় না’।
‘দি আমেরিকান অ্যাকাডেমি ও পেডিয়াট্রিকস’ নির্দেশনা দেয়, শোয়ার সময়ে শিশুদের ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত না, এতে ঘুমের সমস্যা হয়।
আর এই নীতি মানাতে গিয়ে অভিভাবক কিংবা বাবা-মা’য়ের হয়ত সন্তানের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধে নামতে হয়।
তবে চিন্তার কিছু নেই। কারণ ‘জামা পেডিয়াট্রিকস’য়ে প্রকাশিত নিউ জিল্যান্ড’য়ের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওটাগো’র করা গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমাতে যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে ফোন ব্যবহার করলে শিশুদের ঘুমে তেমন সমস্যা হয় না। খুব বেশি হলে তারা দেরিতে ঘুমায় আর দেরি করে ওঠে।
নিউ জিল্যান্ডের ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের ওপর করা এই পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণার ফলাফলে আরও জানানো হয়, তবে ঘুমের আগে লুকিয়ে ফোন ব্যবহার করলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
প্রধান গবেষক ব্র্যাডলি ব্রসনান সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলেন, “আমরা দেখেছি যে, ঘুম এবং ‘স্ক্রিন টাইম’ একসাথে হওয়া ক্ষতিকর। ‘স্ট্রিমিং’ নাকি ‘ড্রিমিং’ করবে?”
আরও বলেন, “একটা সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে এই গবেষণায়। সেটা হল ছোট বাচ্চাদের আর বড় হতে যাওয়া কিশোরদের মধ্যে ফোন ব্যবহারের প্রভাব ভিন্ন হতে পারে।”
ঘুমের প্রয়োজনীয়তা
সবারই ঘুম প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশুর স্বাস্থ্যের জন্যে-তো অবশ্যই। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে স্থূলতা, বিষণ্নতা-সহ নানান স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকস’ জানাচ্ছে, ঘুমের অভাব থেকে শিশুদের মনোযোগে ঘাটতি ও স্বভাবে পরিবর্তন দেখা দেয়।
এই গবেষণা পরামর্শ দেয় যে, ঘুমের সময় বিছানায় শিশুদের ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত না।
আবার বিভিন্ন অ্যাপগুলো এমনভাবে তৈরি যাতে, স্মার্ট ফোনে আঠার মতো লেগে থাকতে দেখা যায় তাদের। আর এই সময়ে বারণ করলেও কথা শুনতে চায় না শিশুরা।
স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ম বেঁধে দেওয়া
অভিভাবকদের নিশ্চিত করতে হবে, যেন ফোনের কারণে শিশুদের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে। এছাড়া পড়াশোনা-সহ অন্যান্য কার্যক্রম, মুখোমুখি কথা বলা বা পারিবারিক সময়ে যেন মনোযোগ ফোনের দিকে না যায়।
বাড়ির-কাজ কিংবা রাতের খাওয়ার সময়ে ফোন নামিয়ে রাখার নীতি চালু করার পরামর্শ দেন গবেষকরা।
ব্রসনান বলেন, “আমাদের মস্তিষ্ক ‘মাল্টিটাস্ক’ বা একসাথে কয়েকটা কাজ করতে পারে না। তাই পড়ার সময় ‘সোশাল অ্যাপ’ দেখলে মনোযোগ অন্যদিকে যাবেই। আবার স্কুলের অনেক কাজ থাকে যা ইন্টারনেট ছাড়া করা সম্ভব না। অথবা কোনো সাজেশন বা প্রশ্নের সমাধানের জন্য সন্তান হয়ত তার বন্ধুকে অনলাইনে জিজ্ঞেস করতে পারে।”
শিশুদেরকে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিপজ্জনক দিক সম্পর্কে অভিভাবকদের আলোকপাত করার বিষয়ে গুরুত্ব দেন এই গবেষক।
‘সেক্সট্র্যাপ’ বা অপরিচিত ভূয়া প্রোফাইল বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করে শিশুদের সাবধান করে দেওয়া জরুরি।
ভালো বুদ্ধি হল শিশুর সঙ্গে অনলাইনে স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করা। এক্ষেত্রে একসঙ্গে কোনো কিছু ‘সার্চ’ করা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারটাকে শখের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
এরফলে অভিভাবকরা আশপাশে না থাকলেও শিশুরা অভ্যস্ততায় একই রকম বিষয় খোঁজ করবে ইন্টারনেটে। কারণ একই ধরনের জিনিস ‘সার্চ’ করলে পরে ওই ধরনের বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করেই নতুন কন্টেন্ট আসতে থাকে।
বিপজ্জনক বিষয় সম্পর্কে শিশুর সঙ্গে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধুসুলভ আচরণে বুঝিয়ে বললে শিশু সেটাতে অভ্যস্ত হবে। ফলে স্মার্টফোনের সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে দিন দিন শিশু নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখবে।
আরও পড়ুন