একজনের উচ্চ রক্তচাপ হলে অন্যজনের হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
Published : 28 Feb 2024, 05:15 PM
বিয়ে নানান দিক থেকে উপকারী। এমনকি হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে।
‘হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং’য়ের তথ্যানুসারে, দীর্ঘমেয়াদে সুখী দম্পতিরা মানসিক চাপের ঝুঁকি কমিয়ে যেমন দীর্ঘ-জীবন পেতে পারেন তেমনি মুক্তি পেতে পারেন হৃদরোগ ও স্ট্রোকের হাত থেকে।
তবে একটা ব্যতিক্রমও রয়েছে। সেটা হল উচ্চ রক্তচাপ।
এর আগে বরং জানা যাক বিয়ে হৃদস্বাস্থ্যের জন্য আসলেই উপকারী কি-না?
এই বিষয়ে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘নর্থওয়েল হেল্থ’য়ের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ স্টেসি রোজেন বলেন, “গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে, সহায়ক সঙ্গী সুস্বাস্থ্যর জন্য উপকারী, বিশেষ করে বিবাহিত সঙ্গী।”
‘জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (জাহা)’তে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, চার বছরের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- বিবাহিতদের তুলনায় অবিবাহিত যাদের হৃদরোগ আছে তাদের মধ্যে ৫২ শতাংশের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বা মৃত্যু ঘটেছে।
এমনকি যারা বিয়ে করেন-নি, বিচ্ছেদ ঘটেছে, বিধবা বিপত্নীক তাদের তুলনায় বিবাহিতের মৃত্যুর হারও কম।
ডা. রোজেন বলেন, “এর কারণ হল শারীরিক অন্তরঙ্গতা। যেমন- সঙ্গীর হাত বা জড়িয়ে ধরার ফলে মানসিক চাপের হরমোন বা কর্টিসল হ্রাস পায়। যা কিনা দেহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ রোচেস্টার মেডিকেল সেন্টার’ জানাচ্ছে, যখন কর্টিসল উচ্চমাত্রায় থাকে তখন হৃদস্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। জীবনে কিছুটা মানসিক চাপ বোধ করা স্বাভাবিক। তবে ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মাত্রার কর্টিসলে কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
‘সাইকোনিউরোএন্ডোক্রিনোলজি’তে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘কার্নেগি মেলোন ইউনিভার্সিটি’ পরিচালিত পর্যবেক্ষণের ফলাফলে জানানো হয়- দেখা গেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিবাহিতদের কর্টিসলের মাত্রা কম।
এই গবেষণার জন্য ২১ থেকে ৫৫ বছর বয়সি ৬শ’ স্বাস্থ্যবান প্রাপ্ত বয়স্ককে তিনটি দলে বিভক্ত করা হয়: সম্প্রতি বিবাহিত, আগে বিবাহিত এবং কোনো দিনও বিয়ে করেনি।
দিনের বিভিন্ন সময়ে তাদের লালা পরীক্ষার মাধ্যমে কর্টিসলের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
গবেষকরা দেখতে পান, যারা একবারও বিয়ে করেনি তাদের তুলনায় সারাদিনে বিবাহিতদের কর্টিসলের মাত্রা বেশি মাত্রায় কমেছে। আর বিবাহিত ও পূর্বে বিবাহিত- এরকমদের মধ্যে পার্থক্য খুবই কম।
কোনো সম্পর্কই চাপ মুক্ত নয়। বিশেষ করে ঝামেলাকর সম্পর্ক। তবে সঙ্গীর হাত ধরা, তার্ সাথে সময় কাটানোর মতো বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হৃদস্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এক্ষেত্রে ডা. রোজেন বলেন, “আরও বিষয় হল, সহায়ক সঙ্গী স্বাস্থ্যকর পন্থায় উৎসাহ দিতে পারে- যেমন ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া বা প্রয়োজনে ডাক্তার দেখানো।”
বিয়ের সাথে উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে সম্পর্ক
সাধারণভাবে বিয়ের ক্ষেত্রে ‘শেয়ারিং’ বিষয়টা ধরা হয়। রোমান্টিক সঙ্গীরা নিজেদের মধ্যে প্রায়ই অর্থনৈতিক, পারিবারিক দায়িত্ব, সম্পত্তি, বন্ধুবান্ধবের সাথে সম্পর্কগুলো আদান প্রদান করেন।
একইভাবে বিবাহিত দম্পতিরা উচ্চ রক্তচাপও নিজেদের মধ্যে ‘শেয়ার’ করতে পারে। আর এই বিষয়টা উঠে আসে ২০২৩ সালে ডিসেম্বর মাসে জাহা’তে প্রকাশিত বহু-দেশ নিয়ে করা গবেষণায়।
ডা. রোজেন বলেন, “এটা হওয়ার বড় একটি কারণ হল যুগলরা নিজেদের মধ্যে অভ্যাস ও জীবনযাপন বিষয়ক নানান কিছু আদান প্রদান করেন। যেমন- খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের অভ্যাস, মানসিক চাপ। যা রক্তচাপে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।”
উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, “বিবাহিত জীবনে যুগলরা সাধারণত একসাথে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেন আর তাদের মধ্যকার অভ্যাসগুলো বিপরীতমুখী হয়। একজন যদি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে চায় অন্যজন চায় বিপরীত। একজন যদি বাইরে থেকে খাবার কিনে আনা বন্ধ করেন, অন্যজন হয়ত খাবার অর্ডার দিয়ে বাসায় আনেন।”
“হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ালেও হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ পরিবর্তন যোগ্য। আর যুগলার একসঙ্গে এই পরিবর্তনের সুযোগ নিতে পারেন”- বলেন ডা. রোজেন।
যেভাবে যুগলরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন
‘আমেরিকান হার্ট সোসাইটি (এএইচএ)’ এবং ডা. রোজেন- এই ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেয়।
সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ার পাশাপাশি সোডিয়াম বা লবণ গ্রহণ কমানো।
মদ্যপান না করা।
ধূমপান না করা।
অলস জীবন যাপন না করে দুজনে মিলে শরীরচর্চা করা।
শরীরের আকার অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
যদিও এই বিষয়গুলো সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য তবে যুগলরা এই সুবিধা বেশি ভোগ করতে পারেন, পরস্পরকে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে।
যুগলদের জন্য হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখার পন্থা
রাতের খাবার স্বাস্থ্যকরভাবে রান্না করা।
রাতের খাবার পর বা আগে একসঙ্গে হাঁটতে যাওয়া।
দুজন মিলে স্বাস্থ্যকর খাবার রান্নার প্রশিক্ষণ নেওয়া।
আশপাশে ঘোরার জায়গা একসঙ্গে খুঁজে বের করা।
অ্যালকোহল বাদ দিয়ে মজাদার ফলের রস গ্রহণ করা। অবশ্যই চিনি ছাড়া।
মানসিক চাপ সামলাতে একসঙ্গে ইয়োগা, ধ্যান করার মতো বিষয়ে একসঙ্গে অভ্যস্ত হওয়া।
“জীবনযাত্রা পরিবর্তন করা সম্ভব হয় যদি আরেকজন সঙ্গী পাওয়া যায়। তাই যুগলদের ক্ষেত্রে এটা বাড়তি সুযোগ”- বলেন ডা. রোজেন।
ক্যালিফোর্নিয়া’র ‘মোমেন্ট অফ ক্ল্যারিটি হেল্থ সেন্টার’য়ের নিবন্ধিত ম্যারেজ থেরাপিস্ট জেফ উ, এই ক্ষেত্রে কিছু বিষয় নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন।
যখন একসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ সামলানোর চেষ্টা করবে যুগলা তখন তাদের কিছু বিষয় মানতে হবে।
বিচ্ছিন্নতা পরিহার করা।
যোগাযোগ কথাবার্তার ক্ষেত্রে খোলামেলা ও সৎ থাকা।
প্রয়োজন মেটাতে একে অন্যকে সাহায্য করা।
স্বাস্থ্য নিয়ে ভয়ভীতি ও অনুভূতি একসঙ্গে কাটানো।
আরও পড়ুন
এই সময়ে যুগলরা যে সমস্যায় ভুগছে
সঙ্গীর সঙ্গে ঘুমের রুটিন না মিললে