বিবাহিতরা কি অবিবাহিতদের চাইতে বেশি সুখী?

জরিপের তথ্যানুসারে বিবাহিতদের সুখী হওয়ার পরিমাণ বেশি।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2024, 03:15 PM
Updated : 13 Feb 2024, 03:15 PM

‘তারপর তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকলো’- গল্পের শেষের এই কথা শুধু এখন রূপকথা নয়। উপাত্ত বলছে বিবাহিতরা সুখী বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্লেষণ এবং উপদেষ্টা ধর্মী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘গ্যালআপ’ পরিচালিত জরিপের ফলাফলে এই তথ্য উঠে এসেছে।

শুক্রবার প্রকাশিত এই জরিপ সম্পর্কে গ্যালআপ’য়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জনাথান রথওয়েল সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “যেভাবেই এই তথ্য বিশ্লেষণ করা হোক না কেনো, কীভাবে মানুষ তার জীবনকে মূল্যায়ন করছে, সে ব্যাপারে বিশদ একটা ধারণা পেয়েছি বিবাহিত হওয়ার বিষয়ে।”

২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৫ লাখেরও বেশি প্রাপ্ত বয়স্ক মার্কিন নাগরিকদের ওপর জরিপে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, বর্তমানে তাদের জীবনকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন? শূন্য ছিল সবচেয়ে বাজে আর ১০ ছিল সবচেয়ে ভালো অবস্থার নির্দেশক।

তারপর উত্তরদাতাদের আন্দাজ করতে বলা হয়েছিল, তাদের সুখী হওয়ার পরিমাণ পাঁচ বছরে কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে।

সমৃদ্ধ হওয়ার বিষয় বুঝতে ও অংশগ্রহণকারীদের শ্রেণিবদ্ধ করতে বর্তমান সময়ের হিসেবে সাত বা এর ওপরের নম্বর এবং ভবিষ্যতের আন্দাজে আট বা এর ওপরের নম্বরকে উচ্চ মাত্রা হিসেবে ধরা হয়।

জরিপের সময়কাল জুড়ে বিবাহিতরা ধারাবাহিকভাবে জানিয়ে গেছেন, তাদের সুখী হওয়ার মাত্রা অবিবাহিতদের চেয়েও অধিক। বিভিন্ন বছরের ওপর নির্ভর করে এই হিসাবের মাত্রাটা ১২ থেকে ২৪ শতাংশ বেশি।

এমনকি জরিপে বয়স, জাতি ও জাতিগত বিষয়, লিঙ্গ, শিক্ষা যোগ করেও এই ফারাক পূরণ করা যায়নি।

শিক্ষা ভবিষ্যতে সুখী হওয়ার একটি প্রভাবক হওয়ার পরও দেখো গেছে, বিবাহিতদের মধ্যে যারা উচ্চ বিদ্যালয়ে পা রাখেনি তারাও অবিবাহিত স্নাতকোত্তরদের তুলনায় জীবনের মান উন্নয়ন করেছে ভালোভাবেই।

“জাতী, বয়স, লিঙ্গ এবং শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। তবে জীবনের সেরা পরিমাপক হিসেবে গণনা করতে গেলে হয়ত বিয়ে বিষয়টা বেশি গুরুত্ব পায়”- একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়া’র ‘ন্যাশনাল ম্যারেজ প্রোজেক্ট’য়ের পরিচালক ও সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্র্যাডফোর্ড উইলকক্স।

তিনি আরও বলেন, “আমরা সামাজিক প্রাণী। আর অ্যারিস্টোটল বলেছেন, ‘উই আর হার্ডওয়ার্ড টু কানেক্ট’।”

সঙ্গী বাছাই করাতে পার্থক্য

“মানুষ যা আশা করে সেটার কারণেই হয়ত বিয়ের সাথে সুখের বিষয়টা জড়িত”- মন্তব্য করেন মার্কিন ম্যারেজ অ্যান্ড ফ্যামিলি থেরাপিস্ট ইয়ান কার্নার।

তিনি আরও বলেন, “গত এক যুগের অভিজ্ঞতায় দেখেছি মানুষ ‘রোমান্টিক বিয়ে’ থেকে ‘সঙ্গ-বিয়ে’র দিকে ধাবিত হচ্ছে। মানে এখন মানুষ আবেগঘন সঙ্গীর চাইতে যে সেরা বন্ধু হতে পারবে তাকে বেছে নিচ্ছে।”

হয়ত আকর্ষণের দিক থেকে এটা সমস্যা হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মানুষ সঙ্গী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই ও সন্তুষ্ট থাকার গুণাবলীগুলো প্রাধান্য দিচ্ছে।

এই বিষয়ে বস্টন-ভিত্তিক মনোবিজ্ঞানি ডা. মনিকা ও’নিল বলেন, “প্রতিশ্রুত থাকার ধারণাটি অন্যের সাথে আবদ্ধ থাকার অভিজ্ঞতাকে বোঝায়। সার্বিকভাবে এর অর্থ হল, যে ধারাবাহিকভাবে ঘরোয়া-ভিত্তিক নিরাপদ ও সুরক্ষিত বন্ধন দিতে পারবে তার সঙ্গে থাকা।”

তাহলে সুখী হতে কি বিয়ে করা লাগবে?

রথওয়েল বলেন, “এই উপাত্ত থেকে আমরা অনেক কিছু জানতে পারছি। তবে উচ্চ মাত্রায় সুখী হওয়ার জন্য বিয়ে-ই যে একটা কারণ সেটা বলা কঠিন।”

যাদের ধারাবাহিকভাবে সুখে থাকার যোগ্যতা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে যেমন দেখা গেছে, তেমনি যারা বিয়ে করার চেষ্টায় আছেন তাদের ক্ষেত্রেও বিষয়টা উঠে এসেছে জরিপে।

“এছাড়া জনপ্রিয়তার দিক থেকে পুরুষদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বিয়ে আয় বৃদ্ধির প্রধান উপাদান”- বলেন রথওয়েল।

তিনি আরও বলেন, “এটা নিয়ে অবশ্য অনেক তর্ক বিতর্ক রয়েছে যে- সফল, সুন্দর, বুদ্ধিমান- পুরুষের এই গুণগুলো শ্রমিকবাজারে চাহিদা তৈরিতে ভূমিকা রাখে আর তারাই বিয়ে করতে পারে।”

যদিও বিয়ের মান নির্ভর করে ব্যক্তিগত কারণ, সামাজিক পরিবর্তন ও সংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর।

যেমন- যে সমাজে বিয়েটা প্রায়ই ব্যবহারিক প্রয়োজন হিসেবে দেখা হয়, সেখানে এককভাবে ব্যক্তিরা সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে বিয়ের জন্য সঙ্গী খুঁজে নেওয়াতে বেশি সক্ষম হয়।

তবে ও’নিল মানতেই পারেন না, অসুখী বিবাহিত জীবন সার্বিকভাবে জীবন ভালো করতে পারবে।

তিনি বলেন, “আমি এখনও বিশ্বাস করি যারা অসুখী বিবাহিত জীবনে আছেন তারা অবিবাহিতদের চাইতে কম সুখী।”

তিনি মন্তব্য করেন, “বিয়ে বা ডেইটিং যাই হোক না কেনো, একে অপরের প্রতি প্রতিশ্রুতিতে কী অন্তর্ভুক্ত থাকছে সেটা ভালোভাবে বুঝে নেওয়ার মাধ্যমে একটি সুখী সম্পর্কের সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করা যেতে পারে।”

“আমি মনে করি না যে, সমাজ-বিজ্ঞানে আমরা এমন একটি বিন্দুতে পৌঁছাতে যাচ্ছি যেখানে নির্ভুলভাবে বলা যেতে পারে বিয়ে সুখের কারণ”- বলেন রথওয়েল।

আরও পড়ুন

বিয়ের জন্য আপনি কি প্রস্তুত?

বিয়ে মানেই সমাধান নয়

Also Read: বিয়ে যেভাবে জীবনে পরিবর্তন আনে

Also Read: যেসব সিদ্ধান্ত বিয়ের জন্য ভুল