ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানা গেল, তীব্র গরমে স্বস্তি পেতে ক্রেতাদের ভরসা এবার সুতি কাপড়ে।
Published : 30 Mar 2024, 11:13 AM
এবার রোজার ঈদ এপ্রিলের মাঝামাঝিতে অর্থাৎ চৈত্রের শেষ দিকে, যে সময়কে বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম সময় ধরা হয়। আর গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে আরামদায়ক পোশাকেও এবার নজর রাখছেন পুরুষরা। বিক্রেতারাও নিয়ে এসেছেন আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক।
রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতান বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট ও মিরপুরের বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানা গেল, তীব্র গরমে স্বস্তি পেতে ক্রেতাদের ভরসা এবার সুতি কাপড়ে।
আজিজ সুপার মার্কেটে বার্ডস আই থেকে সুতির পাঞ্জাবি পছন্দ করতে দেখা গেল আরাফাত রহমানকে। তিনি বলেন, গরমের কারণেই তার এই পছন্দ। এর আগে তিনি মিরপুর-১ নম্বরের ইনফিনিটি ব্র্যান্ড থেকে টি-শার্ট আর ধানমন্ডির নওয়ার নামের একটি দেশিয় ব্র্যান্ড থেকে কিছু কেনাকাটা করেছেন।
“এবার ঈদে ঘটা করে বাজার করা হয়নি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে একেক দিন একেক মার্কেট থেকে কিছু কেনাকাটা করেছি।”
তবে এবার অন্যান্যবারের চেয়ে পোশাকের দাম তার কাছে বেশি মনে হয়েছে। যে পাঞ্জাবি তিনি গেল বছর ১৪০০ টাকায় কিনেছেন, সেটা এবার ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বলেন তিনি।
“এবার দেশি ব্র্যান্ডগুলো ভালো ভালো ডিজাইন নিয়ে এসেছে। কিন্তু গলাকাটা দাম। থ্রি পিসের ক্ষেত্রে একই পরিস্থিতি। অন্যান্য বছর আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় যেসব থ্রিপিস পাওয়া যেত সেগুলো এবার চার হাজার থেকে সাড় চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”
বসুন্ধরা শপিং মলে ‘এমব্রেলা’র ফ্লোর ইনচার্জ রাব্বি খন্দকার নাদিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে এবার তারা নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি নিয়ে এসেছেন।
“ঈদে সবসময় আমাদের পাঞ্জাবিতে ফোকাস থাকে। সেখান থেকেই বেশিরভাগ আর্ন হয়। সব বয়সীরাই পাঞ্জাবি নিচ্ছে। তবে হাওয়াই শার্ট, টি শার্ট এসবও আছে।”
বিভিন্ন শ্রেণির ক্রেতার পছন্দের কথা বিবেচনা করে ‘রাইজ’ নিয়ে এসেছে ফর্মাল প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি-পাজামা, টিশার্ট, হাফ শার্ট, পোলো শার্ট।
এখানকার বিক্রয়কর্মী ইমন হোসাইন বলেন, “ঈদের সময় একেক কাস্টমার একেক জিনিস পছন্দ করে। সব চাহিদা পূরণ করার জন্যই অপশন রাখি আমরা।”
সেখানে পোশাক পছন্দ করতে দেখা গেল মোয়াজ্জেম হোসেনকে।
তিনি বলেন, “শার্ট-প্যান্ট কিনতে এসেছি। কারণ এগুলো সবসময় ব্যবহার করা যায়। পাঞ্জাবি মেইনটেইন করাটা ঝামেলা, তাই কখনো পাঞ্জাবি কিনি না।”
লুবনানের বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, এবার গরমের কারণে কটন ফেব্রিক আর সাদা পোশাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।
“ঈদ তো, তাই পাঞ্জাবি পছন্দ করছে সবাই। তবে তরুণ গ্রাহকরা টি-শার্ট বেশি পছন্দ করছে। কটনের মধ্যে পাতলা কাপড় বেশি রাখছি, যেটা পড়লে গরম লাগবে না। অন্যান্য ঈদে কালারফুল পোশাকও সবাই পছন্দ করত, এবার গরমে ঈদ পড়ায় সাদা পোশাকই সবাই নিচ্ছে।”
দোকানটিতে এক হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে।
‘সেলাই ঘর’র ব্যবস্থাপক ফারান হোসেন বলেন, তারা খুবই সুলভ মূল্যে পাঞ্জাবি বিক্রি করছেন।
প্রিন্ট ও এমব্রয়ডারি কাজের মধ্যে ২ হাজার ৮৯০ থেকে ৩ হাজার ২৯০ টাকা পর্যন্ত দামের পাঞ্জারি পাওয়া যাচ্ছে এখানে।
“কম টাকায় কাস্টমারকে ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে বেশি বিক্রি হচ্ছে না। কারণ গতবারের চেয়ে এবার দাম বেড়েছে ৭০০-৮০০ টাকা। তাই দেখে দেখে অনেকে চলে যায়।”
এবার ঈদে দেশি ব্র্যান্ড ‘দেশি দশ’ ছেলেদের জন্য রাখছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টিশার্ট ও পোলো শার্ট।
দেশি পোশাকের শীর্ষ ১০টি ব্র্যান্ড অঞ্জনস, কে ক্র্যাফট, বাংলার মেলা, রঙ বাংলাদেশ, সাদাকালো, বিবিয়ানা, নিপুন, দেশাল, প্রবর্তনা ও সৃষ্টি ব্র্যান্ড সম্মিলিতভাবে ‘দেশি দশ’ নামে বিপণিবিতান খুলে পণ্যের বিপণন করে থাকে।
‘দেশি দশ’র বসুন্ধরা শাখার ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, আগুন, পানি, মাটি ও বাতাস- প্রকৃতির এই চারটি উপাদানের সমন্বয়ে এবার স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক, সুতার কাজ, হাতের কাজ আর কারচুপি ডিজাইনে বিভিন্ন পোশাক তৈরি করা হয়েছে।
“প্রত্যেক অকেশনেই আমরা আলাদা থিম নিয়ে কাজ করি। এবারও আলাদা হয়নি। সব পোশাকই বিক্রি চলছে, তবে ছেলেদের আইটেমের মধ্যে পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে। বাবা- ছেলে কম্বো বেশি চাচ্ছে।”
স্ত্রী ও বাচ্চার কেনাকাটা শেষে বসুন্ধরায় নিজের জন্য ঈদের পাঞ্জাবি কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী রাশেখ উর রহমান। তিনি মনে করছেন, এবার বাজারে পাঞ্জাবির দাম প্রায় ১ হাজার টাকার মত বেড়েছে।
“রোজার ঈদে পাঞ্জাবিটা পছন্দের শীর্ষে থাকে। আমার বাবা, শ্বশুর, ছেলে সবার জন্যই পাঞ্জাবি কিনেছি। এবার যেহেতু গরম পড়েছে, তাই সুতি পাঞ্জাবি পায়জামা কিনব। এছাড়াও গরমে পরার জন্য টি শার্ট কিনেছি।”
মিরপুর ১০ নম্বরের শাহ আলী প্লাজার স্টাইলিশ পয়েন্টের স্বত্তাধিকারী নজরুল ইসলাম বলেন, এবার তারা সিকোয়েন্স কাজের উপর পাঞ্জাবি বেশি এনেছেন।
“ঈদে গর্জিয়াস পাঞ্জাবির চাহিদাও থাকে। সাদা কাপড়ের ভেতরে এক্সক্লুসিভ কিছু কাপড় নিয়ে এসেছি যেগুলো পড়ে গরমে আরাম পাবে। তবে ভারি কাজ কম চলছে, দামও বেশি; পছন্দও করছে না। হালকা কাজের পোশাক পছন্দ করছেন ক্রেতারা।”
যে পাঞ্জাবি গত বছর ১২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন এবার সেটি ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। ফলে এবার ক্রেতা কম আসছে বলে জানালেন তিনিও।
ঈদের পোশাক কিনতে এসে সাশ্রয়ী মূল্যে ‘ভালো মানের’ পোশাক কেনার চেষ্টা করেছেন বলে জানান মাসুদ রানা৷
তিনি বলেন, আয় কম হওয়ায় পোশাক নির্বাচন করার সময় অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকেও বিবেচনায় নিতে হয়েছে তাকে।
“আমাদের সবকিছু মেইনটেইনও করতে হয়৷ তবে গরমের দিন দেখে সুতি কাপড় কিনলাম। আবার যেহেতু ঈদ, একটা উৎসবের ব্যাপার আছে তাই পাঞ্জাবি কিনেছি। পাঞ্জাবিটাই যায় উৎসবের সঙ্গে।”
মার্কেটটির ‘চন্দ্রবিন্দু’র শাখা ব্যবস্থাপক সোহান আহমেদ ইকবাল বলেন, “পাঞ্জাবির ডিজাইনের প্যাটার্ন আগের মতই আছে। কাজ আর কাপড় একটু ভিন্ন রাখা হয়েছে।”
মিরপুর-১ নম্বরের ফ্যাশন হাউজগুলোর সামনে ক্রেতা ইমরান হোসাইন জানালেন, প্রতি ঈদের মত এবারও তিনি পাঞ্জাবি কিনেছেন।
প্রতি ঈদে পাঞ্জাবি কিনলেও এবার টি শার্ট কিনেছেন নূর ইসলাম।
তিনি বলেন, “টিশার্ট অনেক আরামদায়ক। এবার অনেক গরম পড়বে। আর ঈদের মধ্যেই বাড়ি যাওয়া হয়, তখন অনেক ঘুরাঘুরিও হয়, তাই রিলাক্স কাপড় হলেই ভালো৷”