Published : 01 May 2025, 05:14 PM
ফ্যাশন জগতে হাতব্যাগ বা হ্যান্ডব্যাগ এখন আলাদা জায়াগা দখল করেছে।
ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে যেটা শেষ মুহূর্তে হাতে নেওয়া হয়, সেই হ্যান্ডব্যাগই হতে পারে নিজেকে আলাদাভাবে ফুটিয়ে তোলার আকর্ষণীয় অংশ।
এ সময়টা যেমন হালকা ও আরামদায়ক পোশাকের তেমনি এখনই নতুন ব্যাগের মাধ্যমে স্টাইলকে নতুন রূপ দেওয়া যায়।
রাফিয়া ও খড়ের ব্যাগ: দেশীয় ছোঁয়া, গ্লোবাল ফ্যাশন
গরমকালে বয়নের ব্যবহার যেমন আরামদায়ক তেমনি চোখে পড়ে। রাফিয়া (পাম গাছের পাতা) ও খড়ের তৈরি ব্যাগগুলো এ বছর আন্তর্জাতিক ফ্যাশন জগতে বেশ জনপ্রিয়। এতে একদিকে যেমন গ্রামীণ ঐতিহ্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়, তেমনি আধুনিক ফ্যাশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ ও ‘ডায়ান ইন স্টাইল’- এর প্রতিষ্ঠাতা ডায়ান বয়ার রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “খড়ের ফ্রিঞ্জ (ঝুলন্ত ঝালরওয়ালা ব্যাগ) ব্যাগগুলো এখনও জনপ্রিয়। বিশেষ করে ছুটিতে বা দৈনন্দিন কাজে, এগুলো একটি স্টাইলিশ অথচ স্বচ্ছন্দ অনুভব দেয়।”
ফ্রিঞ্জ ব্যাগ বলতে বোঝায়, যার গায়ে ঝুলন্ত কাটা কাটা ফিতের মতো অংশ থাকে। যেগুলো সাধারণত চামড়া, সুতা বা রাফিয়া দিয়ে তৈরি হয়। এগুলোর ঝুলন্ত অংশগুলোকে বলে ফ্রিঞ্জ; যা ব্যাগের নিচে বা পাশ দিয়ে ঝুলে থাকে, এবং হাঁটার সময় দুলে দুলে স্টাইলিশ লুক তৈরি করে।
বাংলাদেশেও পাট, খড়, ও বাঁশ দিয়ে তৈরি ব্যাগের কদর বাড়ছে।
উজ্জ্বল লাল: সাহসী রংয়ে নিজেকে মেলে ধরা
লাল সব সময়ই নজরকাড়া রং। বিশেষ করে হাতেব্যাগে লাল রংয়ের ব্যবহার একটি সাহসী অথচ সংযত ফ্যাশন সংযুক্তি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের তারকা ফ্যাশন স্টাইলিস্ট ও ‘ইমেজ কনসালট্যান্ট’ জেনি লি বলেন, “লাল, সাদা ও কালোর মিশ্রণ একটি ইতিহাসধারী প্যালেট। রাশিয়ান বিপ্লব থেকে শুরু করে ৮০-র দশক, এমনকি হোয়াইট স্ট্রাইপস ব্যান্ডের (যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী রক ব্যান্ড) মাধ্যমেও এটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন এটি আবার ট্রেন্ডে।”
লাল শাড়ি বা পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গে লাল ব্যাগ দারুণভাবে মানিয়ে যায়। বিশেষ করে উৎসবের সময়।
হাতের তৈরি বোনা ব্যাগ
করোনাভাইরাস-মহামারির সময়ে অনেকে বোনার কাজ শিখেছেন। সেই নকশা এখন রূপ নিচ্ছে হাতব্যাগে। নানান রংয়ের সুতা, সুতির কাপড় কিংবা উলের তৈরি এসব ব্যাগ এখন বিশ্ব ফ্যাশনের আলোচনায়।
যুক্তরাজ্যের স্টেলা ম্যাককার্টনি ও ইতালির জামবাতিস্তা ভালি’র মতো ডিজাইনাররাও বোনা ব্যাগ নিয়ে কাজ করছেন।
জেনি লি বলেন, “বোনা ব্যাগকে ক্ল্যাসি করে তুলতে এর সঙ্গে ‘স্ট্রাকচার্ড’ পোশাক পরাই বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন কোট বা হালকা সাদা শার্ট।”
‘স্ট্রাকচার্ড’ পোশাক বলতে বোঝায় - যার কাট, ফিটিং ও গঠন স্পষ্ট। এগুলো সাধারণত শরীরের গঠনকে ‘হাইলাইট’ করে এবং খুব নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে পোশাকটি ঝুলে না পড়ে বা ঢিলে না দেখায়।
পশ্চিমা বা রোডিও স্টাইল: কাউবয় থেকে ক্যানভাসে
‘রোডিও’ মানে বোঝানো হচ্ছে কাউবয় স্টাইল। চামড়ার ব্যাগ, দড়ির ফিনিশিং, কাঠ বা মেটাল সামগ্রীসহ এই স্টাইলের ব্যাগ হঠাৎই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফ্যাশন ব্যান্ড ‘ব্রামিন লাক্সারি লেদার’-এর প্রধান সান থ্যাকার বলেন, “পশ্চিমা স্টাইল এখন সংগীত ও ফ্যাশনে ভীষণ প্রভাব ফেলছে। চামড়া ও প্রাকৃতিক উপাদানের মিশ্রণে এক নতুন ধারা তৈরি হচ্ছে।”
বাকেট (বালতি) ব্যাগ: পুরোনো আকৃতি, নতুন ধারায়
স্মৃতিময় আকৃতির এই ব্যাগ আবার ফিরেছে ফ্যাশনে। কখনও ছোট, কখনও বড় বাকেট ব্যাগ এ বছর সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যাচ্ছে।
বাকেট ব্যাগ হল এক ধরনের হাতব্যাগ যা দেখতে বালতি আকৃতির হয়। এটি সাধারণত গোলাকার বা উঁচু প্রান্তের একটি ব্যাগ, যার ওপরের অংশ খোলামেলা থাকে এবং তার চারপাশে ফিতা বা স্ট্র্যাপ থাকে। অনেক সময় এর মধ্যে একটি টানা ফিতাও থাকে যা ব্যাগটি বন্ধ করতে সাহায্য করে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হাতব্যাগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘ব্যাগ বরো অর স্টিল’-এর প্রধান কেলি সেইড বলেন, “বাকেট ব্যাগ এখন একটি অলরাউন্ডার। একে একরংয়া পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায় বা এর হাতলে একটি রঙিন স্কার্ফ বেঁধে দিতে পারেন।”
অফিসগামী তরুণীরা সহজেই কালো-সাদা ফর্মাল পোশাকের সঙ্গে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
স্ট্রাইপ বা ফিতা ব্যাগ: নটিকাল ও প্রিপ্পি ফিউশন
গ্রীষ্মের ছুটিতে নটিকাল থিমের ব্যাগ মানেই স্ট্রাইপ। তবে এবার সাদা-নীল ছাড়াও দেখা যাচ্ছে বহুরঙা স্ট্রাইপ।
নটিকাল (নৌকা বা সাগর সম্পর্কিত দূরত্বের মাপ বোঝাতে ব্যবহার হয়) এবং প্রিপ্পি (একটি ক্ল্যাসিক, প্রমিত স্টাইল যা সাধারণত কলেজ-ভিত্তিক বা অ্যাথলেটিক পোশাকের সঙ্গে সম্পর্কিত) ফ্যাশনের মিশ্রণ।
এখানে নটিকাল স্টাইল সাধারণত সাগরের বা সমুদ্রের সাথে সম্পর্কিত রং, স্ট্রাইপ বা সামুদ্রিক উপাদান ব্যবহার করে। যেমন- নেভি ব্লু, সাদা এবং নৌকায় ব্যবহৃত প্রপস বা ফিটিং।
আর প্রিপ্পি স্টাইল হল ক্ল্যাসিক, লিগ বা ক্যাম্পাস ফ্যাশনের ধারায় পোশাক, যা খুব সাধারণ এবং পেশাদার ‘লুক’ তৈরি করে। এই দুটি স্টাইলের মিশ্রণ মানে হল- সাগরের বা সমুদ্রের থিমের সঙ্গে প্রিপ্পি ফ্যাশনের শৌখিনতা ও সাদৃশ্য যোগ করা।
যেমন নটিকাল স্ট্রাইপ টোট ব্যাগ বা প্রিপ্পি প্যাটার্নের সঙ্গে সাগরের অনুপ্রেরণায় সে রংয়ের ব্যাগ ব্যবহার করা।
ডায়ান বয়ার বলেন, “ক্যানভাস টোট ব্যাগে স্ট্রাইপ সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে। তবে এবার স্ট্র মানে খড় বা আঁশের তৈরি, লেদার এমনকি কটনেও (সুতি) এই স্টাইল দেখছি।”
ডেনিম ব্যাগের নতুন রূপ: আধুনিক রূপে ডেনিম
ডেনিম মানেই শুধু জিন্স নয়। এখন এই কাপড়ও হয়ে উঠছে বিলাসী ফ্যাশনের অংশ। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো এখন ডেনিমকে নতুনভাবে ব্যবহার করছে।
চীনভিত্তিক ‘নোয়ারগেজ’ ব্র্যান্ডের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ভিঙ্গি ওয়ং বলেন, “ডেনিম ব্যাগ এখন অনেক বেশি টেক্সচার্ড (উপকরণে কিছুটা অমসৃণতা) ও রিফাইনড (সূক্ষ্মভাবে পরিপাটি বা উন্নত করা)। এটি এখন শহরের ডে-টু-ডে বা প্রতিদিনের স্টাইলে দারুণ মানিয়ে যায়।”
ডেনিমের জ্যাকেট, টপ, এমনকি জুতাও এখন বাজারে জনপ্রিয়। সুতরাং একটি স্টাইলিশ ডেনিম ব্যাগ সঙ্গে থাকলে পুরো ব্যাপারটাই অন্যরকম হয়ে উঠবে।
বড় ও সাহসী ফুলের নকশা
ফুল ছাড়া বছরের এই সময়টা কল্পনাই করা যায় না। এবার সেই ফুলের ডিজাইনগুলো হচ্ছে বড় ও বেশি নজরকাড়া।
ডায়ান বয়ার বলেন, “এবারের ফুলের ডিজাইনগুলো একটু বিমূর্ত ও স্টাইলিশ। ব্যাগে শুধু প্রিন্ট নয়, সঙ্গে অ্যাপ্লিক বা থ্রিডি মাধ্যমের ব্যবহারেও দেখা যাচ্ছে।”
আর্ট পিস ব্যাগ: ফ্যাশনের গ্যালারিতে হাঁট
এগুলো কোনো সাধারণ ব্যাগ নয়, বরং একেকটা ‘আর্ট পিস’। ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘থম ব্রাউন’ বা ‘কাল্ট গায়া’ তাদের ডিজাইন করা ব্যাগগুলোকে এখন রীতিমতো ভাস্কর্য বানিয়ে ফেলেছে।
জেনি লি বলেন, “এখন ব্যাগ মানেই শুধু বহনের জিনিস নয়। এটি একজন ব্যক্তির নিজস্ব পরিচয় প্রকাশের মাধ্যম।”
চিত্রশিল্পীদের আঁকা থিম ব্যবহার করে বা ঢাকাই মসলিনের কারুকাজ দিয়ে তৈরি এমন ব্যাগ দেশীয় ফ্যাশনেরও বেশ কাদর পাচ্ছে।
আরও পড়ুন