দারুচিনি-যুক্ত পানি দিয়ে কুলিকুচি করলে মাউথওয়াশের মতো কাজ করে।
Published : 30 Jan 2023, 08:59 PM
কিছু খাবার দাঁতের ক্ষতি করে, দাগ ফেলে। আবার কিছু খাবার দাঁতের এনামেল সরক্ষিত রাখে ও চকচকেভাব আনে।
ফল ও সবজি এমনই খাবার যা দাঁত সুস্থ রাখার পাশাপাশি সুন্দর রাখতেও সহায়তা করে।
নিউ ইয়র্কয়ের দন্ত চিকিৎসক মার্ক লোয়েনবার্গ ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “ফল ও কচকচে সবজি সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস দাঁতের প্লাক দূর করে। এছাড়াও কম শর্করা ধরনের খাবার দাঁতের প্লাক কমায়। ফলে দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় ও রোগ প্রতিরোধ করে”।
কচকচে সবজি
ডা. লোয়েনবার্গ বলেন, “আমি কচকচে সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেই। কারণ এতে থাকা আঁশ দাঁতের উপরিভাগে লেগে থাকা ব্যাক্টেরিয়া ধরনের পদার্থ বা ‘প্লাক’ দূর করতে সহায়তা করে।”
গাজর, ব্রকলি, মরিচ বা ক্যাপ্সিকামের মতো কচকচে সবজি দাঁতের জন্য উপকারী।
দুধের তৈরি খাবার
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশভিলে অবস্থিত ‘স্মাইল ডিরেক্ট ক্লাব’য়ের প্রধান ক্লিনিকাল অফিসার জেফ্রি সুলিৎজার বলেন, “দুধ, দই, পনির ও দুধের তৈরি খাবার ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়াতে দাঁতের এনামেল শক্তিশালী করে এবং ক্যাভিটির বিরুদ্ধে কাজ করে।”
‘ইউএস ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেল্থ’ অনুযায়ী দেহের প্রায় সকল ক্যালসিয়াম হাঁড় ও দাঁতের মধ্যে সঞ্চিত থাকে ও এদের আকার ঠিক রাখে। ক্যালসিয়ামের অভাবে দাঁত ও হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাদাম
সুলেৎজার বলেন, “বাড়তি কোনো উপাদান বিশেষত চিনিমুক্ত উচ্চ আঁশ ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ বাদাম যেমন- কাঠবাদাম দাঁতের এনামেল মজবুত করতে সহায়তা করে।”
‘অ্যামেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন (এডিএ)’ অনুযায়ী, বাদাম দাঁতের জন্য উপকারী খাবার। এতে কার্বোহাইড্রেইটের মাত্রা কম যা ব্যাক্টেরিয়ার কারণে হওয়া দাঁতের ক্ষয় কমায়।
এছাড়াও বাদাম চিবিয়ে খাওয়া লালাগ্রন্থিকে সক্রিয় করে। ফলে দাঁতের ক্ষয় হ্রাস পায়।
পাতাবহুল সবজি
ডা. সুলেৎজার বলেন, “পাতাবহুল সবজি যেমন- লেটুস ও পালংশাকে রয়েছে ফোলেইট, যা দাঁতের এনামেল মজবুত করে, মাড়ির রোগ ও প্রদাহ কমায়।”
এছাড়াও ডালজাতীয় খাবার, অ্যাস্পারাগাস ও কালো মটর দাঁতের জন্য উপকারী।
পেঁয়াজ ও রসুন
‘লিস্টেরিন’য়ের দাঁত বিশেষজ্ঞ ক্যাটরিস অস্টিন বলেন, “অনেকেই জানেন না যে কড়া ঘ্রাণযুক্ত পেঁয়াজ ও রসুন কেবল খাবারের স্বাদ বাড়ায় না বরং তা দাঁতের জন্য উপকারী।”
পেঁয়াজ ও রসুনে থাকা উপাদান মুখের ব্যাক্টেরিয়া কমিয়ে মাড়ির প্রদাহ, দাঁতের ক্ষয়, ক্যাভিটি এবং মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সহায়তা করে।
স্ট্রবেরি
ডা. অস্টিন বলেন, “এই ফল দাঁতের দাগ দূর করে। এতে থাকা ম্যালিক অ্যাসিড দাঁত সাদা করে।”
আপেল
নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটেনের দন্তচিকিৎসালয় ‘লে বেলস’য়ের দন্তবিশেষজ্ঞ শ্যারন হুয়াং বলেন, “প্রতিদিন একটা আপেল খাওয়া দাঁতের ক্ষয় দূর করে।”
আঁশ-জাতীয় খাবার যেমন- আপেল, নাশপাতি ইত্যাদি হৃদপিণ্ড, মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। অন্য ফলের তুলনায় কিছুটা বেশি সময় চিবাতে হয় বলে তা মুখের লালাগ্রন্থিতে সক্রিয় করে তোলে। ফলে মুখের অ্যাসিডভাব কমে এবং ক্যাভিটি হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পায়।
দারুচিনি
ডা. হুয়াং বলেন, “মুখের ব্যা্ক্টেরিয়া ধ্বংস করতে দারুচিনি উপকারী। প্রতিদিন দারুচিনির পানি দিয়ে মুখ কুলকুচি করা প্লাক ও ব্যাক্টেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।
পানিতে কয়েকটা দারুচিনি দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিতে হবে। ঠাণ্ডা হয়ে এলে তা দিয়ে নিয়মিত স্বাভাবিক মাউথওয়াশের মতো কুলকুচি করে নেওয়ার পরামর্শ দেন, এই চিকিৎসক।
পুদিনা
মুখে সজীবভাব আনতে পুদিনার মতো চমৎকার আর কিছু নেই।
“তাজা পুদিনা চিবিয়ে খাওয়া মুখে সজীবভাব আনে। এতে থাকা ব্যাক্টেরিয়া-রোধী উপাদান দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে”, বলেন ডা. হুয়াং।
চর্বিহীন প্রোটিন
খাবারে চর্বিহীন প্রোটিন বা মাংস যোগ করলে মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
ডা. হুয়াং বলেন, “প্রোটিন ও ফসফরাস পাওয়া যায় চর্বিহীন মাংসে। যেমন- মুরগি ও টার্কি। এগুলো দাঁত সুস্থ ও শক্ত করতে সহায়তা করে।”
ফসফরাস সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবারের মধ্যে রয়েছে মাছ ও ডিম।
পূর্ণশস্য ধরনের খাবার
ওটস, বার্লি ও বাদামি চালের মতো শস্য ধরনের খাবার মুখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে জানান ডা. হুয়াং।
তিনি বলেন, “গোটা শস্যে রয়েছে ভিটামিন বি এবং লৌহ, যা মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আর ম্যাগনেসিয়াম দাঁত মজবুত করে।”
আরও পড়ুন