সঙ্গী যদি ঠিক মতো নজর না দেয় তবে সেই সম্পর্ক বেশি দূর নাও যেতে পারে।
Published : 25 Jun 2024, 04:15 PM
‘দেখ দেখ পাখিটা কত সুন্দর’- রাখীর কথাতে বই থেকে মাথা তুলে পাখিটা খোঁজা শুরু করলো রাফি। আর ঠিক সেই সময়েই রাখী বুঝে ফেললো, তাদের সম্পর্কের মাত্রাটা অনেক আন্তরিক।
শারীরিক বা মৌখিকভাবে এভাবে সাড়া দেওয়ার মাত্রার ওপর সম্পর্ক কতটা স্থায়ী হতে পারে সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায়।
আর এই ধারণা পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণার মাধ্যমে প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল’য়ে অবস্থিত ‘গটম্যাট ইন্সটিটিউট’য়ের সম্পর্ক-বিষয়ক অভিজ্ঞরা।
তারা এই পন্থার নাম দিয়েছেন ‘বিডস ফর কানেকশন’।
দম্পত্তিদের নিয়ে ৪০ বছর ধরে গবেষণায় অভিজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠানের মনোবিজ্ঞানী ডা. জুলি শোয়ার্টজ গটম্যান বলেন, “এই ধরনের সাধারণ আহ্বানে সাড়া দেওয়ার বিষয়টা হয়ত অন্যের কাছে গুরুত্ব পায় না। তবে দুজনের ক্ষেত্রে এই ভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ।”
সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “বিডস ফর কানেকশন’ হল অন্যের নজর কাড়ার সাধারণ ভঙ্গি। আর সঙ্গী কীভাবে সাড়া দিচ্ছে সেটার ওপর নির্ভর করে সম্পর্কের মাত্রা।”
‘বিডস ফর কানেকশন’ চিহ্নিত করার পন্থা
গটম্যানদের ‘লাভ ল্যাব’ গবেষণার ফলাফল হল ‘বিডস ফর কানেকশন’। যে পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। আর দম্পতিদের ছয় বছর ধরে অনুসরণ করা হয়।
গবেষণা শেষে দেখা গেছে- যেসব দম্পতি এখনও টিকে আছেন তাদের মধ্যে আহ্বানে সাড়া দেওয়ার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ; অন্যদিকে যাদের বিচ্ছেদ হয়েছে তাদের ছিল ৩৩ শতাংশ।
শোয়ার্টজ গটম্যান ব্যাখ্যা করেন, “তিনবারের মধ্যে অন্তত একবার সাড়া দেওয়াটা ভালো লক্ষণ। যা কিনা ‘টার্নিং টুওয়ার্ডস’ বা ‘অভিমুখে বাঁক নেওয়া’র সাধারণ লক্ষণ। আর এটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে উপকারী প্রভাবক।”
আর সঙ্গী যদি সাড়া না দিয়ে এড়িয়ে যায় বা মৌখিকভাবেও কোনো উত্তর না দেয়, সেটা হল ‘টার্নিং অ্যাওয়ে’ বা দূরে দিকে বাঁক নিচ্ছে সম্পর্ক।
তবে সবচেয়ে বাজে হল ‘টার্নিং এগেন্সট’ অর্থাৎ বিপক্ষে যাওয়া বা বিরুদ্ধ আচরণ করা। যেমন সঙ্গী বলে উঠলো - ‘কাজের মধ্যে ঝামেলা কর না তো’।
“দিন শেষে সবাই তার প্রিয় মানুষের কাছ থেকে গুরুত্ব আশা করে”- বলেন মিনেসোটা কেন্দ্রিক মনোবিজ্ঞানি ও সেক্স থেরাপিস্ট ডা. লরেন ফোগাল মার্সি।
“যখন অতিরিক্ত মাত্রায় ‘বিডস’ বা আহ্বানে সাড়া না মেলে, প্রত্যাখ্যাত হতে হয় কিংবা নিজের মধ্যে গুরুত্বহীন, ভুল বোঝা বা খেয়াল না করার মতো অনুভূতি জন্ম নেয় সেই সম্পর্কে দেখা দিতে পারে নিরাপত্তার অভাব”- ব্যাখ্যা করেন মার্সি।
সঙ্গীর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার পন্থা
ফোগাল মার্সি বলেন, “কেউ পুরোপুরি শুদ্ধ নয়। সঙ্গী আহ্বানে সবসময় সাড়া নাও দিতে পারে। হতে পারে সে তখন ক্লান্ত বা কোনো দুঃশ্চিন্তায় আছে। তাই সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উত্তরের মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্যটা নিরূপন করা দরকার।”
সঙ্গী যদি কোনো কারণে সাড়া না দেয় তবে তাকে সরাসরি বলা যেতে পারে- ‘আরে আমি তো তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছিলাম’ বা ‘তুমি কিন্তু আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছ না’- পরামর্শ দেন মার্সি।
বেশিরভাগ সময় সাড়া দেওয়ার মাত্রাটা ইতিবাচক হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ছোট বা বড় কোনো বিষয় না।
‘টাইর্নিং অ্যাওয়ে’ বা ‘টার্নিং এগেন্সট’ সম্পর্কে মাঝে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
শোয়ার্টস গটম্যান বলেন, “আসল বিষয় হল- একে অপরের প্রতি সঠিকভাবে সাড়া দেওয়ার বিষয়ের ওপর সম্পর্কের শক্ত খুঁটি নির্ভর করে। আর সেটা শুধু রোমান্টিকতায় নয় বরং যে কোনো সম্পর্কে যেমন- বাবা বা মায়ের সাথে সন্তানের, বন্ধু, সহকর্মী সব ধরনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
আরও পড়ুন