উর্বরতা বাড়াতে পুষ্টি গ্রহণে পরিবর্তন দরকার

প্রসবপূর্ব ভিটামিন ছাড়াও খাবার তালিকায় পরিবর্তন আনা উর্বরতার ফলাফল উন্নত করতে সাহায্য করে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2023, 02:01 PM
Updated : 7 May 2023, 02:01 PM

নারীর গর্ভধারণের ক্ষেত্রে উর্বরতা বাড়াতে সঠিক পুষ্টির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

ভিটামিন থেকে শুরু করে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ও পুষ্টিতে সামান্য কিছু সমন্বয় ব্যাপক পার্থক্য সৃষ্টি করে।

উর্বরতা বাড়াতে খাবারের কিছু পরিবর্তন যেমন- ভাজা চিপসের বদলে বাদাম খাওয়া শরীরে পুষ্টি যোগানোর পাশাপাশি উর্বরতা বাড়াতেও সহায়তা করে।

হেলদিশটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের গুরুগ্রামের ‘সিকে বিরাল হসপিটাল’য়ের প্রধান পরামর্শক ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আস্থা দয়াল বলেন, “নারীর উর্বরতা রক্ষায় পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে উর্বরতা বাড়ে ও গর্ভধারণ সহজ হয়।”

উর্বরতা বাড়াতে সহায়ক ভিটামিন

গর্ভাবস্থা বা তারপরের পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে অবগত থাকলেও অধিকাংশই গর্ভধারণের আগের পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন নয়।

গর্ভধারণের তিন মাস আগে থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও পুষ্টি পরিকল্পনা সম্পর্কে জানান ডা. দয়াল।

ফলিক অ্যাসিড: মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের ত্রুটি দূর করে।

ক্যালসিয়াম: মা ও শিশুর হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

লৌহ: রক্ত ও পেশি কোষের বিকাশ ঘটায়।

ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস: মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

ভিটামিন ডি: গর্ভাবস্থার পরবর্তি সময়ের জন্য জরুরি।

ফলিক অ্যাসিড থেকে শুরু করে ভিটামিন ডি উর্বরতা বাড়াতে সহায়ক

ভিটামিনের পাশাপাশি সুষম খাবার নিশ্চিত করা জরুরি। এটা ডিম্বানুর ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে ও গর্ভধারণ সহজ করে।

ডা. দয়াল বলেন, “কম গ্লাইসেমিক সূচক খাবার ‘পলিসিস্টিক’ ডিম্বাশয়যুক্ত নারীদের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা উন্নত করতে সহায়তা করে।”

ডা. দয়াল উর্বরতা বাড়াতে খাদ্যাভ্যাসে নিচের পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন।

ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের মাত্রা কমানো

প্রক্রিয়াজাত খাবারে ট্রান্স ফ্যাট পাওয়া যায়।

ডা.দয়াল বলেন, “এগুলো ইন্সুলিনের প্রতিরোধ বাড়ায়, ফলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।”

মনো অ্যানস্যাচুরেইটেড ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণের পরামর্শ দেন, ডা. দয়াল। যেমন- জলপাইয়ের তেল, বাদাম, অ্যাভাকাডো, আঙ্গুরের বীজের তেল ইত্যাদি প্রদাহ কমায় ও উর্বরতা বাড়াতে সহায়তা করে।

সরল কার্বোহাইড্রেইট বাদ দেওয়া

সরল কার্বোহাইড্রেইট যেমন- প্রক্রিজাত খাবার, মিষ্টি, মিষ্টান্ন, ঠাণ্ডা পানীয়, জুস, ময়দা, ভাত, আলু ইত্যাদি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় বা গর্ভধারণের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

ডা. দয়াল, এসকল খাবারের পরিবর্তে ধীরে হজম হয় এ্রকম আঁশজাতীয় খাবার, মটর, সবজি, ফল ও শস্য খাওয়ার পরামর্শ দেন।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ খাবার, যেমন- প্রাণিজ প্রোটিনের তৈরি মাখনের চাইতে বাদাম, বীজ, ডাল, চানা, রাজমা উর্বরতা বাড়াতে উপকারী।

সামদ্রিক খাবার

মাছ যেমন- স্যামল, টুনা ও সার্ডিন ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস সমৃদ্ধ। এগুলো উর্বরতা বাড়ানোর জন্য উপকারী।

দুধের তৈরি খাবার বাদ দেওয়া

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, কম চর্বিযুক্ত অতিরিক্ত দুধের তৈরি খাবার খাওয়া উর্বরতা কমায়।

দুধের তৈরি খাবারে থাকা হরমোন, যেমন- ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন- এগুলো ডিম্বস্ফোটন ও হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাঘাত ঘটায়।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার

রঙিন ফলমূল ও সবজি যেমন- শাক, বেরি ও টক ফল, মটর ও বাদাম উর্বরতা বাড়াতে সহায়তা করে।

তরমুজ, অ্যাস্পারাগাস খাবারে যুক্ত করা ডিম্বস্ফোটনে সহায়তা করে।

গ্লুটেইন মুক্ত খাবার খাওয়া

গ্লুটেন হল এক ধরনের প্রোটিন যা বার্লি, গম ও অন্যান্য খাদ্যশস্যে পাওয়া যায়। গ্লুটেইনের প্রতি সংবেদনশীলতা আছে এমন লোকদের গ্লুটেইন ধরনের খাবার গ্রহণে হজমে গোলযোগ দেখা দেয়। তাই কোনো কোনো নারীর ক্ষেত্রে এই ধরনের খাবার বাদ দেওয়া উপকারী।

বাকিদের গ্লুটেইন সমৃদ্ধ খাবার বাদ না দেওয়াই ভালো। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া গ্লুটেইন সমৃদ্ধ খাবার বাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।

ক্যাফেইন বাদ দেওয়া

ক্যাফেইন গ্রহণে হৃদগতি, রক্তচাপ ও অনিদ্রা বাড়াতে পারে। এটা অনেক পুষ্টি যেমন- ক্যালসিয়াম ও লৌহ শোষণেও বাধা দেয়, যা অনুর্বরতার অন্যতম কারণ।

ডা. দয়াল, দৈনিক ২০০ মি.গ্রা.য়ের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ না করার পরামর্শ দেন। মানে হল দৈনিক এক কাপ কফি বা দুই কাপ চা পান যথেষ্ট।

আরও পড়ুন

Also Read: গর্ভাবস্থার যে বিষয়গুলো একজন গর্ভবতী শুধু জানেন

Also Read: গর্ভাধারণ কালে যেসব খাবার এড়ানো ভালো

Also Read: অসাবধানতায় গর্ভধারণ

Also Read: গর্ভবতী মায়ের মানসিক যত্ন