‘স্টারডাস্ট সার্কাস’ নব্বই দশকের গোড়ার দিকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যবাহী এ সার্কাসের দল প্রতিষ্ঠা করে লেনন ও ওয়েস্ট পরিবার।
Published : 06 Sep 2022, 11:46 AM
সারা বিশ্বেই শীতকালে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়। আর অস্ট্রেলিয়াতে শীতকাল ব্যাপি চলে সার্কাস।
সিডনিতে বর্তমানে চলছে এমনই এক আয়োজন। ‘স্টারডাস্ট সার্কাস’ নামে একটা দলের এখন শো চলছে। সিডনির রাউজ হিলের পর এখন লিভারপুল সাবার্বে এ শো চলছে। এ দলটি পরিচালিত হয় পঞ্চম ও ষষ্ঠ প্রজন্মের পারফর্মারদের দিয়ে।
‘স্টারডাস্ট সার্কাস’ নব্বই দশকের গোড়ার দিকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যবাহী এ সার্কাসের দল প্রতিষ্ঠা করে লেনন ও ওয়েস্ট পরিবার। এটি প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত চলে, অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বড় শহরগুলো ভ্রমণ করে।
সব রকমের পারফর্মার আছে এ দলে। তার মধ্যে আছে অত্যধিক হাসিখুশি ভাঁড়, প্রশিক্ষিত ছাগল, কুকুর, টাট্টু ঘোড়া আর আছে একদল প্রশিক্ষিত অ্যাক্রোব্যাটিক পারফর্মার। সিডনির লিভারপুলে এখন তাদের শো চলছে। লিভারপুলের ক্যাথলিক ক্লাবের পাশেই মাঠে বিশাল তাবু ফেলেছে তারা।
আমি, আমার ছেলে রায়ান ইসলাম (৬) আর আমার মেয়ে ইসমাত জাহান তাহিয়া (১২) মিলে গিয়েছিলাম তাদের শো দেখতে। শো দেখতে গিয়ে আমরা যারপরনাই মুগ্ধ হয়েছি। আমরা প্রত্যেকটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি। ক্যাথলিক ক্লাবের কার পার্কে গাড়ি রেখে আমরা এগিয়ে গেলাম মূল প্রবেশদ্বারের দিকে। গত কয়েকদিনের সামান্য বৃষ্টিতে মাঠের পরিবেশ কর্দমাক্ত। মূল প্রবেশদ্বারের বাইরে সার্কাস ছাড়াও বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আছে শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন প্রকারের গেম শো।
আরও রয়েছে খাবার, কফি ও কোমল পানীয়ের দোকান। আর ‘শো ব্যাগ’ বলে একটা ব্যাগ বিক্রি হচ্ছিলো যার মধ্যে অনেক ধরণের খেলনা একসঙ্গে ছিল। আমরা একটু আগেই চলে গিয়েছিলাম। তাই গিয়েই শিশুদের জন্য পপকর্ন আর স্ল্যাসি নিয়ে নিলাম। তারপর অনলাইনে কাটা টিকেট দেখিয়ে কাউন্টার থেকে সিট নম্বর সংগ্রহ করে অপেক্ষার পালা কখন সার্কাস শুরু হবে।
রায়ানের যেন আর তর সইছিলো না। সে বারবার জিজ্ঞেস করছিলো কখন শো শুরু হবে! সময় কাটানোর জন্য আমরা ছবি তোলা শুরু করলাম। শুরুতে তেমন ভিড় না থাকলেও শো-এর সময় যতই ঘনিয়ে আসছিলো ভিড় ততই বাড়ছিল। অবশেষে নির্দিষ্ট সময়ে আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে বিভিন্ন আলোকের ঝলকানি দেখে মনে হলো যেন কোন কল্পলোকে ঢুকে পড়েছি। একজন সাহায্যকারী আমাদের সিট খুঁজে দিলেন। আমাদের সিট ছিল মূল মঞ্চের একেবারে সামনে।
তারপর চমৎকার উদ্দীপনাময় সুরের তালে তালে শুরু হলো এক একটা দুর্দান্ত পরিবেশনা। আর এরই ফাঁকে কয়েকজন ভাঁড় তাদের মজার সব কাজকর্ম দিয়ে দর্শকদের মাতিয়ে রাখছিলো। শুরুতেই একজন ভাঁড় সামনে বসা কয়েকজনকে বাংলাদেশের দিল্লির লাড্ডুর মতো একটা চৌকোণা বাক্স থেকে প্লাস্টিকের গ্লাসে করে শরবত খেতে দিলেন। খাওয়ার পর সেই বাক্স খুলে তার মধ্যে থেকে গিনিপিগ বের করলেন, যেন ব্যাপারটা এমন যে সবাই গিনিপিগের মূত্র পান করলেন। শো-এর মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেলো।
তারপর ছাগলের একটা বাক্সে ঢুকে রং বদলানো এবং একজন বড় ভাঁড় ঢুকে ছোট হয়ে বের হবার খেলাটাও সবাইকে ভীষণ আনন্দ দিলো। আর অ্যাক্রোব্যাটিক পারফরমেন্সগুলো দেখে গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলো। সবাই অনেক বেশি প্রশিক্ষিত, তবুও নিরাপত্তার বিষয়টা খেয়াল রাখা হচ্ছিলো।
যাই হোক, পারফরমেন্সের মাঝে একটা পনের মিনিটের বিরতি দিয়ে আবারও শুরু হলো। এভাবে কখন যে দুই ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে আমরা খেয়ালই করিনি। অবশেষে পারফরমেন্স শেষ হলো মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে দিয়ে।
বাইরে এসে দেখি আবার ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সেই বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে এসে গাড়িতে উঠলাম। ফেরার সময় রাতের অন্ধকারের সার্কাসের তাঁবুটাকে সত্যি সত্যিই আরব্য রজনীর গল্পের রূপকথার কোন মহল বলে মনে হচ্ছিলো।
কিডজ ম্যাগাজিনে বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected] সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!