দিন যায় মাস যায়। দোয়েল পাখিরও ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। কলাবোনেরা তখন কী খুশি!
Published : 12 Dec 2023, 10:49 AM
কলার কাঁদির খোপে বাসা করেছে দোয়েলটি। বেশ আরামসে আছে। খায়-দায় আর কলাবোনদের গল্প শোনায়। এটাই ওর চাকরি!
কলার কাঁদি যখন কেবলই মোচা ভেঙ্গে বেরিয়েছে, তখই এলো দোয়েল পাখি। ইতিউতি খুঁজতে লাগলো কী যেন। কলার কাঁদিতে ছিল ৮০টি কলা। তার মানে ৮০ জন বোন!
এক বোন বললো, ও মিষ্টি পাখি, কী খোঁজো গো হাপুস হয়ে?
সে আর বলো না কলাবোন। পেটের ভেতর ডিম গুরগুর করছে। ডিম পাড়তে যে বাসা লাগবে। তা কই পাই জুতসই একটা জায়গা?
ও, তাই বুঝি! এই যে আমরা কোল বিছিয়ে ঝুলে আছি। এখানেই এসো না। বাসা বানাও বেশ করে। তবে হ্যাঁ, আমাদের গল্প শোনাতে হবে কিন্তু! দোয়েল উঁকি দিলো কলাবোনদের খোড়লে। খাসা জায়গা! বাসা বানাতে এমন কুঠুরির জুড়ি নেই।
বেশ তো! তোমাদের এখানেই বাসা বানাবো। আর গল্পও শোনাবো!
কী মজা! কী মজা! শোনে ৮০টি কলাবোন খলবল করে উঠল আনন্দে।
সেদিনই চাকরিতে জয়েন করলো দোয়েল। গান শোনানোর চাকরি। কলাপাতার ঠান্ডা ছায়ায় কলাবোনরা সারাদিন ঘুমায়। দোয়েল যায় মাঠে ঘাটে খাবার খুঁজতে। সন্ধ্যা হলে কলাবোনদের ঘুম ভাঙে। দোয়েল পাখিটিও ফিরে আসে বাসায়। দোলে দোলে গল্প করে দোয়েল পাখি। কলাবোনরা শুনে ঝিম ধরে!
দিন যায় মাস যায়। দোয়েল পাখিরও ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। কলাবোনেরা তখন কী খুশি! লুফালুফি করে ছানাদের নিয়ে। আলতো আলতো শরীরের উম দেয় ওদের। গরম পড়লে জল শুষে শীতল করে রাখে গাও গতর। কলাবোনদের সবার আদরে আদরে বড় হতে থাকে দোয়েলের চপল ছানারা। দোয়েল দেখে আর সুখে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে ঘুমায়। এভাবেই কাটে তাদের সুখের দিন।
একদিন দোয়েল ফিরেছে বেলা করে। মুখে তার খাবার দাবার। বাচ্চাদের জন্য এনেছে। ওদের খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়ালো, মুখটি মুছলো ডলে ডলে। এবার সে গল্প শোনাবে কলাবোনদের। এতক্ষণে খেয়াল হলো তার! কলাবোনদের সাড়া নেই সেই কখন থেকে! প্রতিদিন বাসায় ফিরতেই কলাবোনদের হাসির হল্লা শুনতে পায় সে। কত কী জানতে চায় ওরা দোয়েলের কাছে। আজ এতো চুপচাপ কেন সবাই?
দিন কয়েক পর একেবারেই পেকে গেল তারা। আর অমনি চাষী এসে কেটে নিলো কলার ছড়া। ততদিনে দোয়েলের ছানারা বড় হয়েছে। শিখে গেছে উড়তে। দোয়েল তাদের নিয়ে উড়ে গেল আরেক বনে।
দোয়েল ডাকলো, ও বড়বোনেরা, ওঠ ওঠ। কত ঘুমাও তোমরা? ও মেজো বোনেরা, ছোট বোনেরা, তোমরাও ওঠ তো জলদি। গল্প শুনবে না আমার? আজকে ঝুড়ি ঝুড়ি গল্প শোনাবো তোমাদের! দোয়েল দেখলো, সবাই ঘুম থেকে উঠতে চাইছে। কিন্তু কেমন ঢুলে ঢুলে পড়ছে। যেন ঘুম আর ফুরাতেই চায় না!
শেষে কলবোনদের মধ্যে যে সবার বড়, সেই বললো কথাটা। দোয়েল, এবার আমাদের পাকার সময় হয়ে এসেছে। আর কদিন বাদেই হলুদ হবে খোসা। পেকে নরম হয়ে যাবে ভেতরটা। মানুষেরা এসে তখন নিয়ে যাবে আমাদের। বেচে দেবে হয়তো পথেঘাটে। তাইতো ঘুমে ঢলে পড়ছি এমন!
শুনে দোয়েলের মন খারাপ হয়ে গেলো। দোয়েলের যে বড্ড মায়া ধরে গেছে! কলাবোনদের আদর যত্ন সে কীভাবে ভুলবে? কষ্টে সে কাঁদতে লাগলো জবুথবু হয়ে। কলাবোনেরা বললো, কেঁদো না তো। খুশির একটা
খবর শুনো আগে! আমাদের পেটেও কিন্তু ডিম গুড়গুড় করছে!
দোয়েল কান্না রেখে থ মেরে বসলো। ধুর, কী বলছো আবোল তাবোল! কলা আবার ডিম পাড়ে নাকি? ছি! ছি! বাপের জন্মেও তো শুনিনি!
ওমা! কেন! কেন! আমাদের পেটে যে বিচি আছে, ওগুলো বুঝি ডিম নয়! শুধু তোমার গুলোই ডিম!
হা! হা! হা! কষ্ট ভুলে বেদম হাসিতে ফেটে পড়ল দোয়েল। এবার সে বুঝতে পেরেছে, কলাবোনদের মজার কথা! তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাসতে লাগল কলাবোনেরাও।
বেশ একচোট হেসে নিয়ে দোয়েলকে ওরা বললো, আমাদের বিচিগুলো বুনে দিয়ো ভাই। সেই বিচি থেকে যে গাছ হবে, তাদেরই শুনিও তোমার গল্প। তাহলেই আমাদের মনে থাকবে তোমার! সেখানেই থাকবো আমরা।
দোয়েল কি তার বোনদের কথা ফেলতে পারে? কক্ষনো না! কথা দিল সে, খুব সুন্দর ভিটেমাটিতে বুনে দেবে কলাবোনদের বিচি। তারপর বেশ গুছিয়ে বসলো সে। শেষবারের মতো গল্প বলতে লাগলো। ঘুমো ঘুমো হয়ে শুনলো আধপাকা সব কলাবোনেরা।
দিন কয়েক পর একেবারেই পেকে গেল তারা। আর অমনি চাষী এসে কেটে নিলো কলার ছড়া। ততদিনে দোয়েলের ছানারা বড় হয়েছে। শিখে গেছে উড়তে। দোয়েল তাদের নিয়ে উড়ে গেল আরেক বনে। তবে যাবার সময় ঠোকরে নিতে ভুললো না। মুখে করে নিয়ে গেলো অনেক অনেক কলার বিচি।
জানো, দোয়েলটি এখনো খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই একচিলতে ভিটে! নরম তুলতুলে যার মাটি। ফুরফুরে বাতাসে ভরপুর যার চারপাশ। যেখানে পুঁতে দেবে সে কলাবোনদের বিচিগুলো। তারপর ঠায় বসে থাকবে। আর কলাশিশুরা মাথা তুলতেই শোনাবে মজার মজার সব গল্প!