পুরো পুকুরে জ্বরের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ল। টেংরা, শোল, বোয়াল, মাগুরও রেহাই পেল না৷ কাঁকড়াও ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ল।
Published : 18 Jan 2023, 03:01 PM
এই যে একটা পুকুর। পুকুরটাতে কারা বসবাস করে? নিশ্চয়ই মাছেরা। কাঁকড়ারাও থাকে।
পুকুরের চারদিকে সারি সারি দালান। কোনোটা তিনতলা, আবার কোনোটা পাঁচতলা। ওরে বাবা! কোনোটা তো আবার দশতলাও হবে!
দশতলা, পাঁচতলা, তিনতলা দালানের সবাই আরাম-আয়েশেই আছে। কিন্তু এই যে পুকুরটা মোটেও ভালো নেই। ভীষণ অসুস্থ। চিকিৎসা করার মতো কেউ নেই।
পুকুর কেমন করে এতো অসুস্থ হয়ে পড়ল শুনবে না? তাহলে বলি কেমন!
পুকুরটা অতো বড় নয়৷ এই তো দৈর্ঘ্যে সাড়ে সাতাশ ফুট আর প্রস্থে সাড়ে পনেরো ফুট। কিছুদিন আগেও মাছেরা এখানে সুখে-শান্তিতে থাকত। মাছেদের সঙ্গে কাঁকড়ারাও থাকত।
পুকুরের এরকম অবস্থার কথা শুনে পাশের একটা নর্দমা থেকে মৃগেল এলো। মৃগেল অনেক বড় ডাক্তার।
কিন্তু এখন মাছেরা তেমন ভালো নেই৷ এই তো সেদিন পুঁটি পাড়ায় কান্নার রোল পড়ে গেল। দু'একজন বাদে সবার সে কী জ্বর! একশো তিন ডিগ্রিও পার করেছিল। পুঁটি পাড়ার পর টেংরা পাড়ায়। টেংরা পাড়ায় তো একশো তিন ডিগ্রিরও বেশি। জ্বরের তোড়ে তো বুড়ো টেংরা দাদু পটল তুলল।
টেংরা পাড়ার পরপরই জ্বর ছড়িয়ে পড়লো খলসে পাড়ায়। নিমিষেই পুরো পুকুরে জ্বরের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ল। এমনকি শোল, বোয়াল, মাগুরও রেহাই পেল না৷ কাঁকড়াও ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ল।
পুকুরের এরকম অবস্থার কথা শুনে পাশের একটা নর্দমা থেকে মৃগেল এলো। মৃগেল অনেক বড় ডাক্তার। মাঝে মাঝেই এই পুকুরে আসা-যাওয়া তার৷ পুকুরের এরকম ভয়াবহ অবস্থা দেখে সবাইকে বোয়ালের ডেরায় ডাকল মৃগেল ডাক্তার।
বিকেলবেলা সবাই এলো। মৃগেল ডাক্তার বলল, আমার কথা মন দিয়ে শোনো সবাই। আচ্ছা, তোমাদের পুকুরে আচানক এরকম অবস্থা হলো কেন? তোমরা কি তা জানো?
বোয়াল রাজা বলল, আমরা কী করে জানব মৃগেল ডাক্তার! তুমিই বলো?
মৃগেল ডাক্তার বলল, তোমাদের এরকম অবস্থার কারণ, তোমরা এতোটাই নোংরা পানিতে বাস করো যে বলে বোঝানো যাবে না। এই যে দেখো উপরে কত্ত কত্ত ময়লা-আবর্জনা। বাসি পঁচা খাবার৷ নোংরা নোংরা সব জিনিসপত্র পড়ে আছে। যেগুলো শ্যাওলা আগে ছিল ওগুলোও আর নেই, ময়লা ওদের খেয়ে ফেলেছে।
মৃগেল ডাক্তারের কথা শেষ হতেই শোল দাদু বলল, এর থেকে কীভাবে বাঁচব মৃগেল ডাক্তার? মৃগেল ডাক্তার বলল, তোমাদের কিছুই করার নেই। ওই যে...
এসব নোংরা ময়লা-আবর্জনার জন্যই পানি দূষিত হচ্ছে। আর সেইসঙ্গে তোমরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছ৷ মূল কথা হলো, পুরো পুকুরটাই আজ ভীষণ অসুস্থ।
মৃগেল ডাক্তারের কথা শেষ হতেই শোল দাদু বলল, এর থেকে কীভাবে বাঁচব মৃগেল ডাক্তার? মৃগেল ডাক্তার বলল, তোমাদের কিছুই করার নেই। ওই যে পুকুরের চারপাশে দালান-কোঠায় যারা থাকে ওরা যদি সচেতন হয় তাহলেই তোমরা সুস্থ থাকবে।
খলসে পিসি বলল, ওরা কবে সচেতন হবে ডাক্তার বাবু? মৃগেল ডাক্তার বলল, তা আমি জানি না খলসে পিসি। ওরা যতদিন না সচেতন হবে ততদিন তোমরা অসুস্থ থেকেই যাবে। অসুস্থ থেকে যাবে এই পুকুর।
হঠাৎ ছোট্ট পুঁটি মা চেঁচিয়ে বলে ওঠে, এই যে দালানের মানুষেরা একটু তো সচেতন হও! আমাদের বাঁচতে দাও। পুকুরটাকে বাঁচতে দাও।
ছোট্ট পুঁটি মায়ের চিৎকার মানুষের কানে পৌঁছায় না। হয়তো কোনদিন পৌঁছাবেও না।
কিডজ ম্যাগাজিনে বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected] সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!