উমবের্তো একোর গল্প: দ্য বম্ব অ্যান্ড দ্য জেনারেল

বই: দ্য বম্ব অ্যান্ড দ্য জেনারেল, লেখক: উমবের্তো একো (ইতালি, ১৯৩২-২০১৬), অলঙ্করণ: ইউজেনিও কার্মি, পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৪০, প্রকাশক: হারকোর্ট ব্রেইস জোভানোভিচ, নিউ ইয়র্ক, প্রথম প্রকাশ: ১৯৮৯

আসাদ জামানআসাদ জামানমূল: উমবের্তো একো
Published : 14 August 2022, 02:55 AM
Updated : 14 August 2022, 06:01 AM

কোন এক সময় ছিল এক পরমাণু। সেই সময় একজন বাজে জেনারেলও ছিল যে সোনার বিনুনিতে জড়ানো উর্দি পরতো।

আমাদের গোটা পৃথিবীটাই পরমাণুতে ভরপুর। সবকিছুই পরমাণুর তৈরি। আর পরমাণু হচ্ছে খুব ক্ষুদ্র একটি জিনিস, কিন্তু তারা একসঙ্গে মিলে অণুর সৃষ্টি করে।

আর এটা জানা কথা যে, এ অণুই সবকিছুর রূপ দেয়। যেমন-

আমাদের মা পরমাণুর সৃষ্টি,

দুধ পরমাণুর সৃষ্টি,

নারীরা পরমাণুর সৃষ্টি,

বাতাস পরমাণুর সৃষ্টি,

আগুন পরমাণুর সৃষ্টি,

আমরা সবাই পরমাণুরই সৃষ্টি।

এই পরমাণুগুলো যখন একটা ছন্দে চলতে থাকে তখন তারা খুব স্বাভাবিকভাবে কাজ করে। আমাদের জীবনও এমন স্বাভাবিক ছন্দের ওপর নির্ভর করে চলে।

কিন্তু পরমাণুকে যখন আঘাত করা হয়, এর অংশগুলো অন্য পরমাণুকে আঘাত করে, যেটি আরও পরমাণুকে আঘাত করে, এভাবেই চলতে থাকে...। তারপর ঘটে বিশাল এক বিস্ফোরণ। আর এটাই হচ্ছে পারমাণবিক মৃত্যু।

গোটা পৃথিবী যেমন পরমাণুতে ভরপুর তেমনই কিন্তু প্রচুর জেনারেলেও ভরপুর, বোমা সাজিয়ে সাজিয়ে তাদের জীবন কেটে যায়।

যাই হোক, আমাদের ওই পরমাণুকে যখন পারমাণবিক বোমার মধ্যে রেখে দেওয়া হলো তখন তার খুব মন খারাপ হলো। অন্যান্য পরমাণুর সঙ্গে সেও সেই দিনটির অপেক্ষা করছিলো, যেদিন বোমাটি ছোড়া হবে এবং তারা সবকিছু গুড়িয়ে ধ্বংস করে দেবে।

এখন সমস্যা হচ্ছে, গোটা পৃথিবী যেমন পরমাণুতে ভরপুর তেমনই কিন্তু প্রচুর জেনারেলেও ভরপুর, বোমা সাজিয়ে সাজিয়ে তাদের জীবন কেটে যায়। আমাদের সেই জেনারেলও তার চিলেকোঠা বোমা দিয়ে পূর্ণ করে রাখতো।

সে বলতো, ‘আমার যেহেতু অনেক অনেক বোমা আছে, তখন একটা বড়সড় যুদ্ধ বাঁধানো উচিত’। এসব বলে সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তো।

কিন্তু কথা হচ্ছে, যার নাগালের মধ্যে এতো বোমা আছে, তুমি তাকে খারাপ হওয়া থেকে কীভাবে রক্ষা করবে? পরমাণুদের ধন্যবাদ যে তারা একটি বিশাল বিপর্যয় ঘটাতে যাচ্ছিলো। এটা হলে-

অনেক শিশু মারা যেতো,

অনেক মা,

অনেক বেড়ালছানা,

অনেক বাছুর,

অনেক পাখি,

সবাই মারা যেতো।

সমস্ত শহর ধবংস হয়ে যেতো, যেখানে ছোট ছোট লাল ছাদের সাদা বাড়িগুলোকে সবুজ গাছপালা আগলে রেখেছিল। শুধু বীভৎস কালো ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই বাকি থাকতো না।

জেনারেল যুদ্ধ ঘোষণা করলো। পারমাণবিক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ চারদিকে প্রচারিত হতে লাগলো, লোকজন ভয়ে দিশেহারা হয়ে গেলো।

কিন্তু পরমাণুরা জেনারেলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নিলো। একদিন রাতে তারা চুপিসারে, গোপনে বোমা থেকে বেরিয়ে পড়লো আর কুঠুরিতে লুকিয়ে রইলো। পরেরদিন সকালে জেনারেল আরও কয়েকজন লোকসহ চিলেকোঠায় এলো। তারপর ওই লোকগুলো বললো, ‘আমরা এই বোমাগুলো বানিয়ে শুধু শুধু কাড়ি কাড়ি টাকা নষ্ট করেছি। আমরা কি খোলগুলো সংগ্রহ করার জন্য এগুলো এখানে রেখে দিতে পারি না? সে যাই হোক, কিন্তু জেনারেল কী চায়?’

‘একদম ঠিক বলেছো’, জেনারেল জবাব দিলো। ‘কিন্তু আমাদের সত্যিই যুদ্ধটা শুরু করা উচিত নইলে আমার ভাগ্য কোথাও দাঁড়াবে না’।

জেনারেল যুদ্ধ ঘোষণা করলো। পারমাণবিক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ চারদিকে প্রচারিত হতে লাগলো, লোকজন ভয়ে দিশেহারা হয়ে গেলো। তারা বলতে লাগলো, হায় হায়, যদি আমরা কোনভাবে জেনারেলকে বোমা বানানোর অনুমতি না দিতাম!

কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সবাই ভয়ে শহর ছেড়ে পালাচ্ছে। কিন্তু কোথায় আশ্রয় পাবে তারা? জেনারেল ইতোমধ্যে একের পর এক শহরগুলোতে বোমাগুলো ফেলার জন্য একটা বিমানে ভরে ফেলেছে। কিন্তু ফেলে দেওয়া সে বোমার (যে-গুলো আগে থেকেই শূন্য ছিল) একটিও বিস্ফোরিত হলো না।

লোকজন খুব খুশি হলো (যারা খুব একটা ভাগ্যে বিশ্বাস করতো না) তাদের এই সাময়িক পলাতক অবস্থায় যেন তাদের ফুলের বিছানায় রেখে দেওয়া হয়েছিলো। তারা অনুভব করলো বোমাবিহীন জীবন কতই না সুন্দর! তারা আর কোন যুদ্ধ না বাঁধানোর প্রতিজ্ঞা করলো।

এখন মায়েরা খুশি,

সুতরাং বাবারাও খুশি,

একইভাবে সবাই খুব খুশি।

সবাই যখন শান্তিতে বসবাস করা শুরু করলো তখন অনেক পর্যটক সে হোটেলে আসতে লাগলো। আসতে লাগলো পুরনো শত্রুরাও। এমনকি অনেক সৈন্যরাও আসতে লাগলো যারা আগে জেনারেলের নির্দেশ মানতে বাধ্য ছিলো।

কিন্তু জেনারেলের কী হলো?

যখন আর কোন যুদ্ধ থাকলোই না তখন তাকে চাকরিচ্যুত করা হলো। আর তাকে সেই সোনার বিনুনিতে জড়ানো উর্দিসহ একটি হোটেলের দারোয়ান করা হলো।

সবাই যখন শান্তিতে বসবাস করা শুরু করলো তখন অনেক পর্যটক সে হোটেলে আসতে লাগলো। আসতে লাগলো পুরনো শত্রুরাও। এমনকি অনেক সৈন্যরাও আসতে লাগলো যারা আগে জেনারেলের নির্দেশ মানতে বাধ্য ছিলো।

সবাই যখন হোটেলে প্রবেশ করতো জেনারেল তখন কাচের বড় একটি দরজা খুলে দিয়ে মাথা নিচু করে বলতো, ‘দিনটি শুভ হোক, স্যার’। তারা (যারা তাকে চিনতো) তার দিকে কুদৃষ্টি দিয়ে বলতো, ‘এই হোটেলের সেবা খুবই মারাত্মক। এটা রীতিমত একটা অত্যাচার’।

জেনারেল এগুলো শুনে গাঢ় লাল হয়ে যেতো আর চুপ করে থাকতো। কারণ ততদিনে সে তার মর্যাদা হারিয়েছে।

কিডজ পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!