অনূদিত গল্প
বাতাসের দেবী ছোট্ট মেঘকে কোলে নিয়ে আকাশের অন্য প্রান্তে উড়ে চলল। তাদেরকে একদল কালো মেঘ তাড়া করলো।
Published : 06 Nov 2024, 11:54 AM
১৯৯৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী টনি মরিসনের লেখা ৮টি গল্পের বই নিয়ে সংকলন ‘অ্যা টনি মরিসন ট্রেজারি’, ২০২৩ সালে এটি প্রকাশ করে মার্কিন প্রকাশনী সংস্থা ‘সাইমন অ্যান্ড শুস্টার’। আজ প্রকাশিত হলো সেই বইয়ের অনূদিত সপ্তম পর্ব ‘লিটল ক্লাউড অ্যান্ড লিটল উইন্ড’।
আকাশের মেঘেরা সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘোরাফেরা করছিল। হঠাৎ সবচেয়ে বড় মেঘটা বলে উঠলো, শুনো সবাই। একা থাকাতে কোনো শক্তি নেই। আমরা যদি পৃথিবীকে ঝড় এবং বজ্রপাত দিয়ে ভয় দেখাতে চাই, তাহলে আমাদের একত্রিত হতে হবে।
সব মেঘই তার কথা শুনে একত্রিত হলো। কিন্তু একটা ছোট্ট মেঘ নিজেকে আলাদা করে রাখলো। সে অন্যদের সঙ্গে যোগ দিয়ে নিজের স্বাধীনতা হারাতে চাইছিল না। সে পৃথিবীকেও ভয় দেখাতে রাজি নয়। আকাশের কোণে একটা শান্ত জায়গা খুঁজে নিল সে।
তারপর সে আকাশে একা একা ঘুরে বেড়াতে লাগলো। সে এই স্বাধীনতাটা উপভোগ করছিল। কিন্তু একটা মেঘ হিসেবে তার তেমন কিছুই করার ছিল না। তাই তার মন খারাপ হচ্ছিল।
সে আকাশ থেকে নিচে পৃথিবীর সুন্দর সুন্দর সব জিনিস দেখছিল। বেগুনি রঙের পাহাড়গুলো তুষারের চাদরে আবৃত। উপত্যকাগুলো উজ্জ্বল রঙের ফুলে এবং উঁচু ঘাসে ছাওয়া। রুপালি রঙের ঢেউগুলো সাগরের গায়ে আছড়ে পড়ছে আর ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাচ্ছে।
এসব কারণে ছোট্ট মেঘ পৃথিবীকে ভালোবাসতো এবং তাকে ভয় দেখাতে চায়নি। সে মনে মনে ভাবলো, আমি যদি হাঁটতে পারতাম বা শুয়ে থাকতে পারতাম কিংবা সাঁতার কাটতে পারতাম, তাহলে আমি পৃথিবীকে স্পর্শ করতে পারতাম। এভাবে অবিরাম ভেসে বেড়াতে আমার একঘেয়ে লাগে। আমি তুষারের মধ্যে স্কিপিং করতে চাই। আমি ফুলের মধ্যে ঘুমাতে চাই। আমি রুপালি রঙের ঢেউয়ের সঙ্গে খেলতে চাই।
রাত নেমে এলো। এগুলো ভাবতে ভাবতেই ছোট্ট মেঘটা ঘুমিয়ে পড়লো। আর স্বপ্নে এগুলো দেখতে থাকলো। হঠাৎ সে একটা আলতো ধাক্কা অনুভব করলো। তারপর আরেকটা। তারপর আরেকটা, যতক্ষণ না সে পুরোপুরি জেগে উঠলো।
ঘুম থেকে উঠেই সে জিজ্ঞেস করলো, কে তুমি? আমাকে ঘুম থেকে তুললে! প্রশ্ন শুনে বাতাসের দেবী বলল, আমি বাতাস। আমি তোমার স্বপ্নগুলো দেখেছি। তুমি আমার সঙ্গে আসো। আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবো।
তারপর বাতাসের দেবী ছোট্ট মেঘকে কোলে নিয়ে আকাশের অন্য প্রান্তে উড়ে চলল। তাদেরকে একদল কালো মেঘ তাড়া করলো। সেই মেঘ থেকে বজ্রপাত হচ্ছিল। ফলে সাগর লাফাতে শুরু করলো। আর উপত্যকার গাছগুলো নুয়ে পড়লো। ছোট্ট মেঘ বলল, আমার খুব ভয় করছে। বাতাসের দেবী বলল, তুমি আমাকে শক্ত করে ধরে রাখো।
তারপর তারা মেঘের তাড়া খেয়ে সারারাত উড়ে বেড়ালো। তারা বিদ্যুতের চোখ ফাঁকি দিয়ে উড়ে চলল। অন্ধকারে তারা পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেলো। সাগরের ঢেউয়ের উপর দিয়ে লাফিয়ে চলল। পুরো সময়টা ছোট্ট মেঘ বাতাসের দেবীর আঁচলে মুখ লুকিয়ে শক্ত করে তাকে ধরে রাখলো।
অবশেষে ভয়ে ক্লান্ত হয়ে সে দেবীর কোলের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো ছোট্ট মেঘ। যখন ঘুম ভাঙলো তখন সকাল হয়ে এসেছে। দেবী বলল, নিচের দিকে দেখো। তখন ছোট্ট মেঘ দেখলো তার গায়ের পোশাক থেকে ছোট ছোট মুক্তোর দানা ঝরে পড়ছে। সে তখন দেবীকে জিজ্ঞেস করলো, এগুলো কী? দেবী বলল, এগুলো আসলে শিশির বিন্দু।
তারপর মেঘ দেখলো, আকাশে তার বাসা থেকে একটা বর্ণিল হার নিচের উপত্যকা পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। তখন সে জিজ্ঞেস করলো, এটা কী? দেবী বলল, এটাকে আমরা রঙধনু বলি। তারপর মেঘ দেখলো, তার মতোই ছোট ছোট অনেক মেঘ সার বেঁধে সাগরের ঢেউয়ের উপর ভেসে বেড়াচ্ছে। তখন সে জানতে চাইলো, এগুলো কী? দেবী বলল, এগুলোকে কুয়াশা বলে।
ছোট্ট মেঘ তখন বলল, এইবার আমি বুঝতে পারলাম। আমি মেঘ হয়েও অন্য কিছুর অংশ হতে পারি। আমি শিশির বিন্দু হয়ে পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়তে পারি। আমি রঙধনু হয়ে উপত্যকায় ঘুমিয়ে পড়তে পারি। আমি কুয়াশা হয়ে সাগরের ঢেউয়ে খেলা করতে পারি। অনেক ধন্যবাদ দেবী তোমাকে, আমার চোখে খুলে দেওয়ার জন্য।
আমিই মেঘ। আবার আমি চাইলেই আমার স্বপ্নের অনেক কিছু হয়ে উঠতে পারি।