অনূদিত কবিতা
‘বইয়ের মতো নেই এমন এক জাহাজ/ নিয়ে যেতে পারে যা অনেক দূরের দেশে।’
Published : 24 Nov 2024, 02:48 AM
এমিলি ডিকিনসন ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন মার্কিন কবি। তিনি ১৮৩০ সালের ১০ ডিসেম্বর ম্যাসাচুসেটসের অ্যামহার্স্টে জন্ম নেন। তাদের বাড়িটি বর্তমানে একটি জাদুঘর। তার বাবা ছিলেন একজন আইনজীবী ও রাজ্য সিনেটর। মা ছিলেন সুশিক্ষিত ও গৃহিণী। ডিকিনসন ছিলেন লাজুক স্বভাবের, তিনি নির্জন জীবনযাপন করতেন। জীবদ্দশায় তিনি এক ডজনেরও কম কবিতা প্রকাশ করেছিলেন। ১৮৮৬ সালে তার মৃত্যুর পর, তার বোন ল্যাভিনিয়া প্রায় এক হাজার কবিতা আবিষ্কার করেন সুতো দিয়ে বাঁধা অবস্থায়।
শরতের কবিরা গান গাওয়ার পাশে
শরতের কবিরা গান গাওয়ার পাশে
কিছু গদ্যময় দিন মেঘে চড়ে আসে।
তুষার এদিকে নামে হিম— ঝিরিঝিরি,
পাতারা ওদিকে ভাঙে কুয়াশার সিঁড়ি।
কিছু ধারালো সকালে একা সূর্যের আলো
আলতো সন্ধ্যায় নামে রাত গাঢ় কালো।
কোথাও বিলীন কারও ‘সোনার লাঠি’
আর,
কেউ খুঁজে পেল তার শান্তির মাপকাঠি।
তবুও,
হইচই বয়ে চলে আজও ঝরনায়
সুগন্ধ ভরে থাকে মিহি দরজায়।
হঠাৎ আজব এক মায়াবী আঙুল
চুপিসারে ছুঁয়ে যায়— পরীদের চুল।
হয়তো এক কাঠবিড়ালী থাকবে বেঁচে
আমার-ই আনন্দে সে উঠবে নেচে।
হে প্রভু, আমাকে দিও—
এক রোদ ঝলঝল মন,
আর ঝড়ো ইচ্ছা তোমার
সহ্য করার শক্তি- কয়েক টন।
বই
‘বইয়ের মতো নেই এমন এক জাহাজ/ নিয়ে যেতে পারে যা অনেক দূরের দেশে।’
শব্দগুলো যেন বা সোনালি মাছ
দুর্বার ঢেউয়ে যাচ্ছে ভেসে ভেসে।
পৃষ্ঠার মত নেই এত চৌকস কোনো ঘোড়া,
উদ্দাম নাচে বেসামাল যা
কবিতার অক্ষরে মোড়া।
এই যাত্রায় যে কেউ-ই যেতে পারে,
সেখানে নেই টিকেট কেনার বোঝা,
হিসেবি সে রথ টেনে নিয়ে যায় ঠিক-ই
আমাদের অন্তর আর আত্মার যত বোঝা।
বিশ্বাস
বিশ্বাস হলো এক বিশুদ্ধ আবিষ্কার
যেসব মানুষ ঝামেলা এড়াতে চায়।
কিন্তু যুক্তি-ই বিচক্ষণ প্রমাণ করে
যখন বিপদ এসে দাঁড়ায় দরজায়।
মৌমাছি
মৌমাছি আমাকে ভয় পায় না
আর প্রজাপতি— তাকেও আমি চিনি।
জঙ্গলের সুন্দর হে মানুষেরা
সাদরে আমাকে নাও, থাকব চিরঋণী।
আমি এলে নদীরা আরও জোরে হাসে
মেঘগুলো খেলা করে মাতাল বাতাসে।
আমি এলে শীতের এই মিহি কুয়াশায়
গ্রীষ্মের দিনও কেমন জলে ভিজে যায়!
জীবন
ছোট্ট এই জীবন—
কেবল এক ঘণ্টা যার স্থায়িত্ব রয়,
কতো কম আর অল্প আমাদের ক্ষমতায়
সাবধানে ঠিক-ই একে বয়ে নিতে হয়।
‘আশা’ হল এক পালক-পরা পাখি
এক পালক-পরা পাখি হল ‘আশা’
আত্মার কিনারে-ই যার বাসা।
গান গায় সে শব্দ-না-থাকা সুরে
সে গান ছড়ায় দূর থেকে আরও দূরে।
প্রবল ঝড়েও শোনা যায় তার— সবচেয়ে মধুর গান
ঝড়ে কেঁপে ওঠে আরও দৃঢ় হয়- সেই পাখিটির প্রাণ।
ছোট্ট সে পাখি হাওয়া ঠেলে ঠেলে ওড়ে
বহু হৃদয়ের উষ্ণতাকে পুঁজি করে।
আমি শুনেছি তার গান বরফ-ঢাকা ভূমিতে
আমি শুনেছি তার গান এক আজব নদীর ঢেউ,
আমি শুনেছি তার গান সমুদ্রের ঠিক ওপারে
ডুবন্ত এক শিরীষ পাতা, হবে পাখিটির-ই কেউ।
সবচেয়ে কঠিন বিপদেও সে
কিচ্ছু চায়নি আমার কাছে,
‘আশা’ হল এক পালক-পরা পাখি,
নিরিবিলি বসে থাকে সে আত্মার পাশে।