বইপত্র
“বড়রা যখন মিথ্যা বলে তখন তারা ছোট হয়ে যায়। কিন্তু যখন ছোটরা মিথ্যা বলে তারা বড় হয়ে যায় না।”
Published : 27 Nov 2024, 04:22 PM
মার্কিন কথাসাহিত্যিক টনি মরিসন গল্প বলার নিপুণ কারিগর। তার যুগান্তকারী উপন্যাস ‘বিলাভড’ ১৯৮৮ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পায় কল্পকাহিনি ক্যাটেগরিতে। তিনি ১৯৯৩ সালে ‘কালো নারী’ হিসেবে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।
টনি মরিসন তার ছেলে স্লেড মরিসনের সঙ্গে ছবির বই তৈরি শুরু করেন। ‘দ্য বুক অফ মিন পিপল’ শিরোনামে তার একটা বই একেবারে তার শুরুর দিকে লেখা। খুব সহজ ভাষায় এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এই বইয়ে তিনি সবাইকে তাদের জীবনের ‘মিথ্যুক মানুষদের’ পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
সবাইকে তাদেরকে নিয়ে মোটেও না ভাবার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখা আছে, “এই বইটা মিথ্যুক মানুষদের নিয়ে। বড়রা যখন মিথ্যা বলে তখন তারা ছোট হয়ে যায়। কিন্তু যখন ছোটরা মিথ্যা বলে তারা বড় হয়ে যায় না।”
এই বইয়ে লেখক কৌতুকপূর্ণ ভাষায় মিথ্যা বিষয়ে শিশুদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। সেটা হতে পারে একটা ফিসফিস কথা অথবা একটা চিৎকার। একটা হাসি অথবা একটা ভ্রুকুটি। একটা প্রশ্ন অথবা একটা উত্তর। অথবা মানুষ যখন বলে একটা, আর করে অন্যটা। মূল বিষয় হচ্ছে, আমরা যেন সেই মিথ্যার দ্বারা প্রভাবিত না হই।
বইটার অন্যতম আকর্ষণ প্যাসকেল লেমাইট্রির অদ্ভুত অলংকরণ যেটা বইটাকে আকর্ষণীয় করেছে। তাহলে শুরু করা যাক মূল গল্প-
এই বইটা মিথ্যুক মানুষদের নিয়ে। কিছু মিথ্যুক মানুষ হন বড়। অনেক ছোট মানুষও মিথ্যুক হতে পারেন।
অনেক মানুষ আছেন যারা হাসতে হাসতে মিথ্যা কথা বলেন। তবে বেশিরভাগ সময়ই তারা মিথ্যা বলার সময় ভ্রুকুটি করেন। চিৎকার করে কথা বলা মিথ্যুক মানুষদের সবচেয়ে পছন্দের বিষয়। আবার অনেকেই সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথাটা বলেন ফিসফিস করে।
আমি যেসব মিথ্যুক মানুষদের চিনি আজ তাদের কথায় বলবো। আমার দাদু-দিদা দুজনই ভীষণ রকমের মিথ্যা বলেন। আমার দিদা বলেন বসতে, তো দাদু বলেন উঠতে। তোমরাই বলো, আমি একটা মানুষ একই সময়ে কীভাবে বসবো আর উঠে দাঁড়াবো।
অবশ্য ব্যাপারটা এমন হতে পারে। আমি একটা চেয়ার মেঝেতে ফেলে তার উপর বসে থাকতে পারি। তাহলে একই সঙ্গে বসা এবং ওঠা সম্ভব। কিন্তু তোমরা জানো সেটা দেখতে কতখানি হাস্যকর!
আমার মা-ও মিথ্যা বলেন। তিনি বলেন, আমি তার কথা মোটেও শুনি না। তিনি বলেন, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না? তোমরাই বলো, কেউ যখন চিৎকার করে, তার কথা কি তোমরা বুঝতে পারো? মা বেশিরভাগ সময়ই আমার সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলেন। তাই আমি তার কথা মোটেও কিছু বুঝি না।
আমার ভাইও মিথ্যা কথা বলে। আমি তার সঙ্গে মাঝে মাঝে দাবা খেলি। খেলার মাঝে যখন আমার ঘোড়াটা তার মন্ত্রীকে আক্রমণ করে, তখন সে হঠাৎ বলে উঠে, তোমার ঘোড়াতো এখানে আসতে পারে না? তার ঘোড়াটা কিন্তু ঠিকই আমার গুটিকে যেকোনো সময় যেকোনো দিক থেকে আক্রমণ করে বসে।
আমার শিক্ষকরাও মিথ্যা বলেন। তারা বলেন, আমার লেখা লাইনের বাইরে চলে গেছে। এটা বলে তারা লাল কালির কলম চালিয়ে আমার লেখা শুদ্ধ করে দেন। তখন তাদের লেখাগুলো আমার লেখার উপর চেপে বসে। তোমরা বিশ্বাস করবে কিনা জানি না, তখন সেই লেখাগুলোকে দেখলে মনে হয় যেন সেগুলো শূন্যে ঝুলে আছে।
আমাকে একজন বেবিসিটার দেখাশোনা করেন। জানো, তিনিও মিথ্যা বলেন। তিনি প্রায়ই বলেন, তাড়াতাড়ি উঠো, তুমি কিন্তু সময় নষ্ট করছো। তোমরাই বলো, আমি যদি ঘুমিয়ে থাকি তাহলে কীভাবে সময় নষ্ট করলাম। আমিতো আসলে সময়ের সদ্ব্যবহার করলাম, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দারুণ সব স্বপ্ন দেখে।
বড় মানুষরা যখন মিথ্যা বলেন তখন তারা ছোটদের মতো আচরণ করেন। কিন্তু ছোটরা যখন মিথ্যা বলে তখন আবার তারা বড়দের মতো হয়ে যায় না। চিৎকার করে কথা বলাটা মিথ্যুক মানুষদের সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। তারা যখন চিৎকার করে কথা বলেন তখন তারা আমার কাছে অদৃশ্য হয়ে যান।
আমার খুব ভয় লাগে যখন মিথ্যুক মানুষেরা ভ্রুকুটি করে হাসতে হাসতে কথা বলেন। আমি কিন্তু তার বিপরীতে কখনও ভ্রুকুটি করি না বা মিথ্যা বলি না। আমি বরং তাদের মিথ্যাটা বুঝতে পারি। আর মুচকি মুচকি হাসি। আমি ঠিক কাজটাই করি। কি বলো তোমরা?