গ্রামসির উক্তি, “ইতিহাস শেখায়, কিন্তু তার কোনো ছাত্র নেই”।
Published : 05 Nov 2024, 01:29 PM
ইতালিয়ান লেখক আন্তোনিও গ্রামসি (১৮৯১-১৯৩৭) ছিলেন একজন বামপন্থী রাজনীতিবিদ। তিনি দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বেনিতো মুসোলিনির স্বৈরাচারী শাসনামলে তিনি কারাবন্দি হন, জেলে থাকা অবস্থায় লিখেন ৩০টির বেশি নোটবুক ও প্রায় ৩ হাজার পৃষ্ঠা।
জীবনের শেষ অংশটা কারাবন্দি হিসেবেই কাটান এ চিন্তাবিদ। এসময় তিনি তার নোটবুক এবং চিঠিতে অনেক সাহিত্য রচনা করেছেন। পরবর্তীতে এগুলো বই আকারে প্রকাশিত হয়।
জেলে থাকা অবস্থায় একটি চিঠিতে তার দুই সন্তানকে ইঁদুর ও পাহাড়ের গল্প লিখেন গ্রামসি। এটি ছিলো আমাদের ছোটবেলায় শোনা রূপকথা বা উপকথাগুলোর মতোই।
তিনি এই গল্পে এমন একটি চরিত্রকে দেখান যার কোনো একটা কিছুর প্রয়োজন। তাই সে অপর একটি চরিত্রের কাছে সেটা চায়। সেই চরিত্রটি আবার তার বিনিময়ে অন্য আরেকটি জিনিস চায়, এভাবে প্রথম চরিত্রটি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে গল্প এগিয়ে চলে।
আমাদের ছোটবেলায় দাদা-দাদির কাছ থেকে শোনা একটি পাখির কলসি করে জল খাওয়ার গল্পের মতো, যে কিনা একটি কলসি বানাতে কুমারের কাছে যায়, কুমার আগুন দাবি করে, সে আগুনের জন্য যায় চুলোর কাছে ইত্যাদি।
আন্তোনিও গ্রামসির লেখা এই গল্পে একটি ছেলের খাওয়ার জন্য দুধ শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তাই ইঁদুরটি একটি ছাগলের কাছে ছেলেটির জন্য দুধ চায়, কিন্তু ছাগল তার বিনিময়ে ইঁদুরটির কাছে তার খাবার হিসেবে ঘাস চায়।
তাই ইঁদুরটি মাঠের কাছে ঘাস চায়, মাঠ তার বিনিময়ে চায় পানি। ইঁদুর এবার একজন মিস্ত্রির কাছে গিয়ে সেচ ব্যবস্থা মেরামত করতে বলে। আর সেই মিস্ত্রি তার কাছে এর জন্য কিছু পাথর চায়।
এবার ইঁদুরটি যায় পাহাড়ের কাছে পাথর চাইতে, পাথর এসময় ইঁদুরকে একটা শর্ত দেয়। শর্তটা এমন যে ছেলেটি যখন বড় হবে তখন সে বন উজারের মাধ্যমে যে গাছ কেটে ফেলা হয়েছিলো, সেই জায়গায় আবার নতুন গাছ লাগাবে। ছেলেটিও বড় হয়ে তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করে।
এই গল্পের শিক্ষা হলো একে অপরকে সাহায্য করার মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ গঠন করা যায়। গ্রামসির দুটি বিখ্যাত উক্তি, “প্রত্যেক মানুষই বুদ্ধিজীবী, কিন্তু বুদ্ধিজীবী হওয়া সমাজের সব মানুষের কাজ নয়।” এবং “ইতিহাস শেখায়, কিন্তু তার কোনো ছাত্র নেই”।