আলাওল গিয়ে হাজির হন আরাকান রাজ্যে। কেউ কেউ বলেন, আলাওল ক্রীতদাস হিসেবে আরাকানে গিয়েছিলেন। চাকরি নেন অশ্বারোহী সৈন্যের।
Published : 21 Dec 2024, 03:13 PM
আলাওল সপ্তদশ শতকের কবি ছিলেন। তখন মধ্যযুগ। কবি আলাওলের পূর্ণনাম সৈয়দ আলাওল। কেউ কেউ বলেন, তিনি মাদারীপুর জেলার ফতেহাবাদে জন্ম নেন। এটি বর্তমানে মাদারীপুরের জালালপুরে অবস্থিত। তখন মাদারীপুর ফরিদপুরের অন্তর্গত ছিল। এ কারণে কেউ কেউ বলেন, তিনি ফরিদপুরে জন্মেছেন।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যপুস্তক পর্ষদ কর্তৃক প্রকাশিত ‘পদ্মাবতীর’ আত্মপরিচয় পর্বের সম্পাদকীয় টীকায় আছে, তখন এই ফতেহাবাদ ছিল ‘ফরিদপুর জেলার একটি পরগনা’। আবার অন্য একদল বলছেন, না, আলাওল চট্টগ্রামের মানুষ। এ বলার মধ্যে যৌক্তিকতা আছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে ফতেহাবাদ নামে গ্রাম আছে। আলাওলের দিঘী নামে একটা দিঘী আছে।
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, আলাওলের জন্ম ষোড়শ শতকের শেষ ভাগে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যপুস্তক পর্ষদের প্রকাশিত ‘পদ্মাবতীর’ আত্মপরিচয় পর্বে সম্পাদক মন্তব্যে করেছেন, ‘১৬০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মজলিশ কুতুব ফতেহাবাদের অধিপতি ছিলেন। তার অমাত্যপুত্র আলাওল তরুণ (১৫ বছর) বয়সে ১৬১২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ যদি আরাকানে উপস্থিত হয়ে থাকেন, তবে তার জন্মসাল আনুমানিক ১৫৯৭ খ্রিস্টাব্দ।’
কেউ কেউ হিসাব করে দেখান, আলাওল ১৬০৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আলাওল ‘পদ্মাবতী’ কাব্যে আত্মপরিচয়ে জন্মস্থান ফতেহাবাদ উল্লেখ করাতে অনেকে তাকে চট্টগ্রামের সন্তান বলে ভেবে নিয়েছেন। যাই হোক, আলাওল মধ্যযুগের এ জনপদেরই কবি ছিলেন এবং বড় কবিই ছিলেন। গোপাল হালদার তাকে আমাদের ‘জাতীয় সাহিত্যের ভিত্তি’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
আলাওলের পিতার নাম মজলিশ কুতুব। তিনি ফতেহাবাদের রাজা ছিলেন। মজলিশ কুতুব বার ভূঁইয়াদের একজন সামন্ত হিসেবে স্বাধীন রাজা ছিলেন। পরে তিনি মোগলদের বশ্যতা স্বীকার করেন। তখন তিনি তাদের বার্ষিক কর দিয়ে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করছিলেন। এ কারণে রাজ-দরবার সম্পর্কে তার ধারণা শৈশব থেকেই ছিল। তিনি দরবার সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। বোঝা যায়, আলাওল অভিজাত শ্রেণির সন্তান ছিলেন। তার এই আভিজাত্য চলন-বলনে প্রস্ফুটিত হয়েছিল।
আলাওল যুদ্ধবিদ্যা, নৌকা ও অশ্ব-চালনায় পারদর্শী ছিলেন। একদিন তরুণ আলাওল পিতার সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। তখন নৌ-পথে ফিরিঙ্গি-পতুর্গিজ জলদস্যুদের উপদ্রব ছিল। সুযোগ পেলেই সাধারণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত। এক্ষেত্রেও তাই হলো। আলাওলদের নৌ-বহরেও হামলা চালায়। দীর্ঘ যুদ্ধের পর আলাওলের পিতা মজলিশ কুতুব মারা যান। পুরো নৌ-বহর ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আলাওলের জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা।
তারপর আলাওল গিয়ে হাজির হন আরাকান রাজ্যে। কেউ কেউ বলেন, আলাওল ক্রীতদাস হিসেবে আরাকানে গিয়েছিলেন। চাকরি নেন অশ্বারোহী সৈন্যের। এসময় আলাওল মাগন ঠাকুরের নজরে আসেন। মাগন ঠাকুরের পুরো নাম কোরেশী মাগন ঠাকুর। সিদ্দিক বংশজাত মাগন ঠাকুর ছিলেন আরাকানের মুখ্যমন্ত্রী। মাগনের পিতা বড়াই ঠাকুর (কারো মতে, শ্রীবড় ঠাকুর) ছিলেন আরাকানের একজন মন্ত্রী। আরাকানের অধিপতি নরপতিগি একমাত্র মেয়ের অভিভাবকত্বের ভার মাগন ঠাকুরের ওপর দেন। তার মৃত্যুর পর রাজকন্যা মুখ্য-পাটেশ্বরী হলে মাগন ঠাকুর মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা পান। তিনিও মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একজন কবি ছিলেন।
মাগন ঠাকুর ‘চন্দ্রাবতী’ কাব্যের লেখক ছিলেন। রতনে রতন চিনলেন। তিনি আলাওলকে আরাকান রাজসভায় স্থান দিলেন। আরাকান রাজদরবারের সুধীজন আলাওলের সঙ্গীত ও সাহিত্য প্রতিভার সঙ্গে পরিচিত হলেন। তার সুর, তাল, লয় ও ছন্দ জ্ঞানে সবাই বিস্ময় প্রকাশ করলেন। অপরাপর গুণীজনদের সঙ্গে বসবাস করে আলাওলের সঙ্গীত ও সাহিত্য প্রতিভা ক্রমেই বিকশিত হয়। মাগন ঠাকুর উপলব্ধি করলেন, আলাওলের মধ্যে বিশাল কবি প্রতিভা লুকিয়ে আছে। তিনি ঠিক করলেন, এ প্রতিভাকে যে-করেই হোক কাজে লাগাতে হবে।
১৬৫১ সালের কথা। একদিন আরাকান রাজসভায় পণ্ডিত, শিল্পী ও সাহিত্যিকদের নিয়ে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা চলছিল। পণ্ডিতদের একজন হিসেবে আলাওল এখানে উপস্থিত। কেউ কবিতা পাঠ করলেন, কেউ গান করলেন, আর কেউ গল্প বললেন। প্রত্যেকে এজন্য মাগন ঠাকুরের কাছ থেকে উপহার পেলেন। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে গুরু-গম্ভীর আলোচনা হলো। কথার পিঠে কথা আসল। সে আলোচনায় ‘পদুমাবৎ’ কাহিনিকাব্যের কথা আসে। ‘পদুমাবৎ’ হিন্দিতে লেখা প্রেমের অনন্য এক কাহিনিকাব্য। ১৫৪০ সালে হিন্দি কবি শেখ মোহাম্মদ জায়সী ‘পদুমাবৎ’ লেখেন।
সে আলোচনার আরও কয়েকদিন পর। একদিন মাগন ঠাকুর ডাকলেন আলাওলকে। বললেন, ‘আপনাকে একটা মহান কাজের দায়িত্ব দেব। ‘পদুমাবৎ’ হিন্দুস্থানি ভাষায় লেখা। আরাকানের অনেক লোকই তা বোঝে না। বাংলা ছন্দে যদি আপনি এটি নতুন করে রচনা করেন তবে সবাই সেই কাহিনি পড়ে আনন্দ পাবে। আপনি কবি, অশেষ জ্ঞানী মানুষ। ‘পদুমাবৎ’ কাব্যে কবি শেখ মোহাম্মদ জায়সী পদ্মাবতীর যে রূপ বর্ণনা করেছেন বাংলা ভাষায় তা আপনি ছাড়া কেউ পারবে না। আপনার প্রতি সেই বিশ্বাস আমার আছে।’
আলাওল এর আগে দু’চারটি কবিতা ছাড়া তেমন বড় কাজ করেননি। মাগন ঠাকুরের কথা শুনে আলাওল দ্বিধায় পড়ে গেলেন। আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিলেন না। না বলার মতো সাহসও নেই। মাগন ঠাকুর তার আশ্রয়দাতা। আলাওল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে বললেন, ‘পদুমাবৎ’ কাব্যটি আমি কয়েকবার পড়েছি। অসাধারণ এই কাব্যটি কাহিনিকাব্য হলেও এর মাঝে রয়েছে অনেক আধ্যাত্মিক বিষয়। আমারও অনেকবার মনে হয়েছে এটি বাংলা ভাষায় রচিত হওয়া প্রয়োজন। আমার গ্রন্থ রচনার অভিজ্ঞতা নেই। দু-একটি পদ রচনা করেছি মাত্র। আপনি আমাকে উপযুক্ত মনে করেছেন ভেবে সম্মানিত বোধ করছি। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব। আপনার যশ-কীর্তির কথা বর্ণনা করার সাধ আমার অনেকদিনের। আজ সুযোগ এসেছে। এই কাজ আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে অসম্ভব বটে, তবু আমি আমার সমস্ত মেধা দিয়ে কাজটি করব শুধু আপনার গুণে আর ‘পদুমাবৎ’ কাহিনির আকর্ষণে। আপনি এবং আপনার সভাসদ আমাকে দোয়া করবেন।’
মাগন ঠাকুর বললেন, ‘আপনি আল্লাহতালার নাম নিয়ে কাজ শুরু করে দিন। ইনশাআল্লাহ আপনি সফল হবেন।’ কবি শেখ মোহাম্মদ জায়সী ‘পদুমাবৎ’ কাব্য রচনার ১১১ বছর পর আলাওল এর ভাষান্তরের কাজে হাত দিলেন। ভাষান্তরের কাজ শুরুর আগে তিনি এটা বারকয়েক পাঠ করলেন। কাজ শুরু হলে মাগন ঠাকুর নিয়মিত বিরতি দিয়ে জানতে চাইতেন, ‘আর কতদূর?’ আলাওল প্রতিবারই বলতেন, ‘এই তো হয়ে এলো!’
আলাওল ‘পদ্মাবতী’ রচনায় তিন বছর সময় নেন। একদিন সত্যি সত্যি শেষ হয়। আলাওল নাম রাখলেন ‘পদ্মাবতী’। মাগন ঠাকুরকে এসে সে খবর দিলেন। মাগন ঠাকুর স্বপ্ন সত্যি হওয়াতে খুশিতে আটখানা। তিনি পরদিন সভাসদসহ রাজ্যের গুণী-জ্ঞানীদের ডাকলেন। আলাওল পড়ে শুনালেন সম্পূর্ণ পদ্মাবতী কাহিনি-কাব্য। কাহিনি-কাব্যে ধারাবাহিকভাবে তিনি আল্লাহ-রসুল, চার খলিফা ও মাগন ঠাকুরের গুণকীর্তন করেন। কবি শেখ মোহাম্মদ জায়সীর পরিচয় দিলেন। আরাকানেরও দীর্ঘ বর্ণনা দিলেন।
দীর্ঘ আত্মপরিচয় শেষে কাহিনিসূত্রের মাধ্যমে আলাওল সিংহলের রাজকুমারী পদ্মাবতীর জীবনগাঁথা ছন্দে ছন্দে বর্ণনা করেন। আরাকান রাজসভায় সেদিন উপস্থিত সবাই আলাওলের দীর্ঘ পাঠাভিনয়ে মুগ্ধ হন। অনেকে অশ্রু-সজল হয়ে পড়েন। বিশেষ করে মাগন ঠাকুর। সবাই সাধু, সাধু, ধন্য, ধন্য করলেন। বিনয়ী আলাওল নরম-সুরে বললেন, ‘আমার যতটুকু শক্তি আছে, তার সবটুকু আমি ব্যয় করেছি পদ্মাবতীর কাহিনিটি বাংলায় রচনা করতে গিয়ে। মাগন ঠাকুর এবং আপনারা অন্য যারা শুনলেন তাদের যদি ভালো লাগে থাকে তবে আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।’
আলাওলের কথা শুনে মাগন ঠাকুর তাকে জড়িয়ে ধরে আবেগাপ্লুত হয়ে বললেন, ‘আপনি যে মহান কাজ করেছেন, তাতে আপনার নাম অমর হয়ে থাকবে। যুগ যুগ ধরে আপনার রচিত এই কাহিনি লোকের মুখে মুখে ফিরবে। আপনাকে অভিনন্দন জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।’ মাগন ঠাকুরের এমন প্রশংসা-বাণীতে বিগলিত আলাওল বললেন, ‘আমি আপনার গুণকীর্তি সামনে রেখেই পদ্মাবতী রচনায় ব্রতী হয়েছিলাম। আপনার উৎসাহে আমি এই দায়িত্বখানি শেষ করতে পেরেছি। সবার ভালো লাগাই আমার পুরস্কার।’
‘পদ্মাবতী’ কাহিনি-কাব্যে সিংহলের বর্ণনার পাশাপাশি রত্নসেন-নাগমতী-আলাউদ্দিন খিলজীর বর্ণনা আছে। হীরামন পাখির কথা আছে। সব মিলিয়ে পদ্মাবতী ইতিহাস নয়, ইতিহাস আশ্রিত কাহিনি কাব্য। এখানে কল্পনা আছে, বাস্তবতা আছে। সত্য আর কল্পনার মাঝামাঝি এর অবস্থান। এটাই শিল্প।
মধ্যযুগের কবিদের মধ্যে সপ্তদশ শতকের কবি আলাওল সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থের প্রণেতা। তিনি সর্বাধিক সংখ্যক কাব্যও রচনা করেছেন। পয়ার ত্রিপদী মিলিয়ে তিনি ৪০ হাজারের বেশি পদ রচনা করেন। হিন্দি-ফারসি-সংস্কৃত-বাংলাসহ ৭ ভাষায় তিনি পারদর্শী ছিলেন। এ কারণে আঠারো শতকের কবি মুহম্মদ মুকীম কবি আলাওলকে বলেছেন, ‘কবিগুরু’ ও ‘মহাকবি’।
এপর্যন্ত আলাওল রচিত পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ কাব্য, একটি অর্ধেক কাব্য, একটি সঙ্গীতবিষয়ক খণ্ডকাব্য এবং ১৫টি গীতিকাব্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ‘পদ্মাবতী’ (১৬৪৮ মতান্তরে ১৬৫১), ‘সতীময়না ও লোরচন্দ্রানী’ (১৬৫৯ মতান্তরে ১৬৫৮), নীতিকাব্য ‘তোহফা’ (১৬৬৪), ‘সপ্তপয়কর’ (১৬৬৫ মতান্তরে ১৬৬০), ‘সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামান’ (১৬৬৯) ও ‘সিকান্দরনামা’ (১৬৭৩)।
তার এসব রচনায় প্রধান-অমাত্য মাগন ঠাকুর ছাড়াও রাজ-অমাত্য সৈয়দ মুসা, প্রধান-অমাত্য সোলায়মান, সৈন্যমন্ত্রী সৈয়দ মুহাম্মদ খান এবং রাজ-সচিব মজলিস নবরাজ প্রমুখ পৃষ্ঠপোষকতা করেন। সতীময়না কাব্যটি শুরু করেছিলেন মধ্যযুগের আরেক বিখ্যাত কবি দৌলত কাজী। দৌলত কাজীও আরাকান রাজসভার কবি ছিলেন।
কবি আলাওলের এ অমূল্য সম্পদ একসময় হারিয়ে গিয়েছিল। হারানো পুঁথির কথক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ধূসর জগৎ থেকে এ অমূল্য সম্পদ সমকালের আলোর জগতে প্রতিস্থাপন করেন। তিনি আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ রচনার আরও ১০০ বছর পর চট্টগ্রামের আনোয়ারার এক কৃষকের কুটিরে এর সন্ধান পান। করিম ‘পদ্মাবতী’র ৩৬টি পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেছিলেন। তারপর ‘পূর্ণিমা’ পত্রিকায় ১৩০৬ বঙ্গাব্দে আলাওলকে নিয়ে প্রথম প্রবন্ধ লিখেন। শুরু হয় আলাওলের কাব্য-প্রতিভার অনুসন্ধান। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ‘পদ্মাবতী’ পাঠ্য-তালিকাভুক্ত করে।
আলাওলের কবিখ্যাতি যখন মধ্যগগণে, কবির জীবনে আবার নেমে আসে অমানিশা। মোগল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে শাহ সুজা ১৬৫৯-৬০ সাল নাগাদ পালিয়ে আশ্রয় নেন আরাকানে। ‘রাজদ্রোহিতার’ অভিযোগে কিছুদিন পর সুজা খুন হন। এ বিদ্রোহে ‘জড়িত থাকার’ অভিযোগে আলাওলকেও বন্দী করা হয়। বলা হয়, ‘আলাওল শাহ সুজার লোক ছিলেন।’ তাকে ৫০ দিন আটক রাখা হয়। কবি তার দুঃসময় সম্পর্কে বেদনাহত হয়ে লিখেন, ‘আয়ুবশ আমারে রাখিল বিধাতায়। সবে ভিক্ষা প্রাণরক্ষা ক্লেশে দিন যায়।’
কবির বিভিন্ন কাব্যে এ বেদনার উল্লেখ আছে। আলাওল তার সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ ‘সিকান্দরনামা’-তে এ জীবনকে বলেছেন, ‘মন্দকৃতি ভিক্ষাবৃত্তি জীবন কর্কশ। দারাপুত্র সঙ্গে অঙ্গে হৈল পরবশ।’ এ কারণে জীবনসায়াহ্নে এসে কবি আলাওল পরিবার নিয়ে মহাসংকটে পড়েন। তবে আরাকানবাসী কখনও কবিকে অশ্রদ্ধা করেনি, কবির প্রতি তাদের ভালোবাসা ছিল। তিনি আরাকানবাসী অনেকের বাড়িতে ‘পাঠ গীত সংগীত’ শিক্ষা দিতেন।
আলাওলের জন্মসালের মতো একাধিক মৃত্যুসাল পাওয়া যায়। কারো মতে, আলাওল আনুমানিক ৭৬ বছর বয়সে ১৬৭৩ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। আবার কারো মতে, আলাওল ৭৩ বছর (জন্মসাল বিবেচনায় নিয়েছেন ১৬০৭ খ্রিস্টাব্দ) বয়সে ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে মারা যান।
তথ্যসূত্র:
১. হুমায়ুন আজাদ: লাল নীল দীপাবলি
২. শিপ্রা গোস্বামী: কবি আলাওল ও তাঁর পদ্মাবতী
৩. ওয়াকিল আহমদ: মহাকবি আলাওল, জীবন ও কাব্য
৪. গোলাম কুদ্দুস: ভাষার লড়াই ও রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন
৫. পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যপুস্তক পর্ষদ কর্তৃক প্রকাশিত ‘পদ্মাবতী’
৬. সৈয়দ আলী আহসান সম্পাদিত ‘আলাওল পদ্মাবতী’