বই আলোচনা
৮০ পৃষ্ঠার এ গল্পটিতে আছে ডুলসি নামের ছোট একটি মেয়ে। ওইদিন ছিল তার জন্মদিন।
Published : 20 Oct 2024, 01:36 AM
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান ঔপন্যাসিক উইলিয়াম ফকনার (১৮৯৭-১৯৬২)। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী লেখক। তার খ্যাতি বেশিরভাগই উপন্যাস ও ছোটগল্পের কারণে। তবে তিনি কবিতা ও মাঝে মাঝে চিত্রনাট্যও লিখেছেন।
শিশু-কিশোরদের জন্য ফকনারের একমাত্র বই ‘দ্য উইশিং ট্রি’ বা ‘ইচ্ছেপূরণ গাছ’। ১৯২৭ সালে লেখা এটি একটি ভিন্নধর্মী গল্প। তার অন্যান্য লেখার মতো এ বই জটিল ও গভীর নয়, বরং শিশুদের জন্য সহজভাবে কল্পনার জগতে যেন এক ভ্রমণ। অনেকটা লুইস ক্যারলের ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’-এর মতো শিশু-কিশোর উপযোগী।
৮০ পৃষ্ঠার এ গল্পটিতে আছে ডুলসি নামের ছোট একটি মেয়ে। ওইদিন ছিল তার জন্মদিন। লাল মাথার একটি ছেলেকে সে তার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায়।
অদ্ভুত এই ছেলেটির নাম মরিস। মরিস ছিলো জাদুকরী ক্ষমতার অধিকারী। মরিস, ডুলসি এবং তার ভাই তাদের বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ‘দ্য উইশিং ট্রি’ খুঁজতে বের হয়। এই গাছটিকে নিয়েই গল্পের নামকরণ করা হয় ‘দ্য উইশিং ট্রি’।
উইশিং ট্রি আবিষ্কারের যাত্রাপথে তারা একটি মেলোম্যাক্স গাছ থেকে বিভিন্ন রঙের পাতা ছিঁড়ে লিলিপুটদের আকার ধারণ করে, লুইস ক্যারলের ছোট্ট অ্যালিসের মতো। তারা একটি পানির প্রাচীরের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আরও একটি জাদুকরী গাছ খুঁজে পায়।
গাছটি একটি বৃদ্ধ ব্যক্তিতে পরিণত হয়। তার ছিলো রূপার মতো চকচকে লম্বা দাড়ি। গাছের পাতাগুলো ছিলো বিভিন্ন ধরনের রঙিন পাখি। গল্পটি এই শিক্ষা দেয় যে, আমরা যদি অসহায় জিনিসগুলোর প্রতি সদয় ব্যবহার করি, তাহলে আমাদের ইচ্ছেগুলো পূরণের জন্য কোনো উইশিং ট্রি বা ইচ্ছেপূরণ গাছের প্রয়োজন নেই।
গল্পটি শৈশব থেকে বড় হওয়ার পথচলাকে শিশুর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখায়। পুরো গল্প জুড়ে আদর্শ ও বিশ্বাসের অনুভূতি হয়। যদিও গল্পের শেষে এক ধরনের ট্র্যাজেডি রয়েছে, জানতে পারা যায় যে শিশুটি গুরুতর অসুস্থ। তবুও গল্পটি শেষ হয় সেই আশার সঙ্গে যে, পরের বছরের জন্মদিন নতুন ও অপ্রত্যাশিত সব অভিযানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসবে।
ডুলসি এবং তার বন্ধুরা তাদের ‘উইশিং ট্রি’ খোঁজার অভিযানে বের হয়, যা সমস্ত শৈশবের ইচ্ছেগুলো পূরণ করতে পারে। এই খোঁজার যাত্রায় তারা নিজেদের সম্পর্কে এবং ইচ্ছেগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে বেছে নেওয়ার দায়িত্ব সম্পর্কে শিখে।
‘দ্য উইশিং ট্রি’ বইটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশনা সংস্থা ‘র্যানডম হাউস’, অলঙ্করণের কাজ করেছেন জন বোলোগনিজ। প্রথমে এটির মাত্র ৫০০ কপি মুদ্রণ করা হয়েছিলো।
ইউরোপীয় আধুনিকতা দিয়ে প্রভাবিত ফকনারের বেশিরভাগ কাজ তার জন্মভূমি মিসিসিপিকে কেন্দ্র করে লেখা। ১৯৪৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগ পর্যন্ত তুলনামূলক অচেনা ছিলেন তিনি, তাকে নোবেল দেওয়া হয় ‘আধুনিক আমেরিকান উপন্যাসে শক্তিশালী এবং শৈল্পিক অবদানের জন্য’।
ফকনারের বিখ্যাত উপন্যাসগুলো হলো- ‘দ্য সাউন্ড অ্যান্ড দ্য ফিউরি’ (১৯২৯), ‘অ্যাজ আই লে ডাইং’ (১৯৩০), ‘লাইট ইন অগাস্ট’ (১৯৩২) এবং ‘আবসালোম, আবসালোম!’ (১৯৩৬) ইত্যাদি। তাকে প্রায়ই আমেরিকান সাহিত্যের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ লেখক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।