বাংলা সাহিত্যে আধুনিক গদ্যরীতির জনক ও প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক বলা হয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে।
Published : 10 Apr 2017, 06:47 PM
বঙ্কিমচন্দ্র পশ্চিবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার নৈহাটিতে কাঁটালপাড়া গ্রামে জন্ম নেন ১৮৩৮ সালের ২৬জুন। অবিভক্ত বাংলার মেদিনীপুর জেলার ডেপুটি কালেকটার যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও দুর্গাদেবীর সন্তান তিনি। পশ্চিবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার নৈহাটিতে কাঁটালপাড়া গ্রামে জন্ম নেন বঙ্কিম।
কাঁটালপাড়ার কুল-পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে পাঁচ বছর বয়সে বঙ্কিমের হাতেখড়ি হয়। আর ১১ বছর বয়সে পাঁচ বছর বয়সী মেয়ের সাথে তার প্রথম বিয়ে হয়। ১৮৪৪ সালে পিতার বদলি সুত্রে মেদিনীপুরের ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। শুরু হয় তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৪৯ সালে হুগলি কলেজে (বর্তমানে হুগলি মহসিন কলেজ) ভর্তি হন এবং বৃত্তি পেয়ে সেখানেই সাত বছর পড়াশোনা করেন।
১৮৫৬ সালে ভর্তি হন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রেসিডেন্সি কলেজের আইন বিভাগ থেকে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম বিভাগে পাস করেন।
১৮৫৮ সালে বিএ পরীক্ষায় দশজন ছাত্রের মধ্যে বঙ্কিম ও তার একজন সহপাঠী পাস করেন। পরে পিতার মতোই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেকটার হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যচর্চা শুরু হয়েছিল হুগলি কলেজে পড়ার সময়। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জনে গদ্য-পদ্য লিখতে শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র ‘বঙ্গদর্শন’-র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
১৮ বৎসর বয়সে প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ললিতা ও মানস’। তার সাহিত্যসাধনা শেষজীবন পর্যন্ত অটুট ছিল। সাহিত্য রচনায় বঙ্কিমচন্দ্রের ছদ্মনাম ছিল কমলাকান্ত। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান অনস্বীকার্য। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, চন্দ্রশেখর, কৃষ্ণকান্তের উইল, Rajmohan's Wife, কমলাকান্তের দপ্তর, কৃষ্ণ চরিত, সাম্যললিতা (পুরাকালিক গল্প), লোকরহস্য ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কর্ম ও সাহিত্যসাধনার স্বীকৃতি হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র পেয়েছেন নানা উপাধি ও সম্মাননা। এছাড়াও বাংলা আধুনিক গদ্যশৈলীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে গণ্য করা হয় প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেব। এছাড়া তিনি গীতার ব্যাখ্যাদাতা ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবেও খ্যাতি পান। তাই তাকে হিন্দু পুনর্জাগরণের দার্শনিকও বলা হয়।
১৮৯১ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন। আর ১৮৯৪ এই সাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে। ২০১৭ সালের ৮এপ্রিল তার ১২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী।