সারাহর মত অঙ্গদানের প্রতিশ্রুতি সাতজনের

অঙ্গদানের ঘোষণা দেওয়া সাতজনের মধ্যে ছয়জনই চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2023, 12:05 PM
Updated : 13 Feb 2023, 12:05 PM

সারাহ ইসলামের মত মরণোত্তর অঙ্গদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ সাতজন। 

এই সাতজনের মধ্যে ছয়জনই চিকিৎসক। তারা হলেন, বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রো ভিসি (শিক্ষা) এ কে এম মোশাররফ, প্রো ভিসি মো. মনিরুজ্জামান খান, প্রক্টর হাবিবুর রহমান দুলাল, কিডনি বিভাগের অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, অধ্যাপক সজল ব্যানার্জি এবং মো. শাহজাহান নামের এক ব্যক্তি। 

সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে 'সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেল' উদ্বোধন সভায় অঙ্গদানের এই ঘোষণা দেন তারা।  

‘অঙ্গদানের’ এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "মরণোত্তর অঙ্গদানের মাধ্যমে নিজের মৃত্যুর পরও আরো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগটি অসাধারণ। মরণোত্তর অঙ্গদান করে চারজন মানুষকে সুস্থ করে তোলা সারাহ ইসলামের মা এখানে উপস্থিত আছেন।

“আমি সারাহ ইসলামের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলব, তিনি যে অসাধারণ কাজ করে গেছেন তা আমাদের সামনে এক অনন্য উদাহরণ।" 

বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ‘ব্রেইন ডেড’ মানুষের দুটি কিডনি, দুজন কিডনি আক্রান্তের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় গত ১৮ জানুয়ারি।  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে একটি দল বিএসএমএমইউর আইসিইউতে মারা যাওয়া ২০ বছর বয়সী তরুণী সারাহ ইসলামের দুটি কিডনি অপসারণ করেন এবং ওই রাতেই কিডনি দুটি অন্য দুজনের শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপনও করেন। কিডনি ছাড়াও সারাহর দান করা রেটিনা দুজনের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। 

সারাহর কিডনি গ্রহীতাদের একজন শামীমা আক্তারও উপস্থিত ছিলেন সোমবারের অনুষ্ঠানে। তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন সারাহ ইসলামের মা শবনম সুলতানা।

তিনি বলেন, তার মেয়ে বেঁচে আছে অনেক মানুষের মাঝে, সেটাই তিনি বিশ্বাস করেন।

তথ্যমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত একটি হাসপাতালও তৈরি হয়েছে, যা কিছুদিনের মধ্যে পুরোদমে চালু হবে। 

বিশেষায়িত হাসপাতালটিতে বিশ্বের যে কোন উন্নত দেশের মতই চিকিৎসা সেবা মিলবে বলে আশা রাখেন হাছান মাহমুদ।   

সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে দিয়েছেন, ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে সেখানে দেওয়া হয়। এই অসাধারণ কাজটি উপমহাদেশে অন্য কোন দেশে নেই, এগুলো আমাদের সরকার করেছে।" 

পদযাত্রা-পদলেহন করে সরকারকে বিদায় দেওয়া যাবে না 

বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, "বিএনপি যে দিনের বেলায় পদযাত্রা আর রাতের বেলায় কূটনীতিকদের পদলেহন করে, এই সব করে আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় দেওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগের ভিত অনেক গভীরে প্রোথিত।"

আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সব মহানগরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি নিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, "এই কর্মসূচি আসলে পদযাত্রা নয়, বিএনপি এই পদযাত্রার নামে সারাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায়।“ 

কয়েকদিন আগে ইউনিয়নে ইউনিয়নে পদযাত্রা করে বিএনপি ‘বিশৃঙ্খলা করার অপচেষ্টা’ চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন হাছান মাহমুদ। 

তিনি বলেন, “আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক পাহারায় এবং প্রশাসনের সতর্ক দৃষ্টির কারণে যেভাবে করতে চেয়েছিল সেভাবে করতে পারেনি। এরপরও বিভিন্ন জায়গায় তাদের অস্ত্রধারীদের, সন্ত্রাসীদেরকে দেখা গেছে। এখন আবার ১৮ তারিখ কর্মসূচি দিয়েছে।“ 

সরকারের এই মন্ত্রীর ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে যখন উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তখন বিএনপি ও তার মিত্ররা নানা ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দেশে ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা’ চালাচ্ছে। 

তিনি বলেন, "বিএনপিকে অনুরোধ জানাব এ সমস্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা না চালিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে, সেটিই তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে।"