গবেষণা বলছে, দিনের বেলায় যারা ঘুমান, অন্যদের তুলনায় তাদের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১২ শতাংশ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি ২৪ শতাংশ বেড়ে যায়।
Published : 27 Jul 2022, 12:47 AM
কাজের চাপ বা অন্য কোনো কারণে যাদের রাতে ঘুম কম হয় এবং দিনের বেলায় হালকা ঘুমিয়ে তা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন, তাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার তথ্য এসেছে এক গবেষণায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজিস্ট মাইকেল গ্র্যান্ডনার বলেছেন, দিনের বেলায় ঘুম এমনিতে খারাপ কিছু না। তবে অনেকে রাতে পর্যাপ্ত না ঘুমিয়ে দিনের বেলায় ঘুমান।
“স্বাস্থ্যহানীর সঙ্গে নিদ্রাস্বল্পতার যোগ আছে। তবে দিনের বেলার ঘুম তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।”
সিএনএন জানিয়েছে, গ্র্যান্ডনার অ্যারিজোনার টাকসনের ব্যানার-ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারে বিহেভিওরাল স্লিপ মেডিসিন ক্লিনিক পরিচালনা করেন। তবে তিনি ওই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
‘ইউকে বায়োব্যাঙ্ক’ এর তথ্য বিশ্লেষণ করে পরিচালিত এ গবেষণা প্রতিবেদন সোমবার আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জার্নাল হাইপারটেনশনে প্রকাশিত হয়েছে।
দেখা গেছে, যারা নিয়মিত দিনের বেলায় ঘুমান, তাদের উচ্চ রক্তচাপের জটিলতা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। আর স্ট্রোকের ঝুঁকি ২৪ শতাংশ বেশি।
আর গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০ বছরের কমবয়সী যারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দিনে ঘুমান, অন্যদের তুলনায় তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি ২০ শতাংশ বেড়ে যায়।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি হার্ট ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় আটটি সহায়কের মধ্যে ঘুমের ব্যাপ্তিকালকে যুক্ত করছে।
এমনকি টাইপ টু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ঘুমের ব্যাঘাত রয়েছে এবং যারা রাতের শিফটে কাজ করেন, তাদের বাদ দিয়েই গবেষকরা দিনে ঘুমের অভ্যাসে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ার ইংগিত পেয়েছেন।
শিকাগোর নর্থ-ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফেইনবার্গ স্কুল অব মেডিসিনের সেন্টার ফর সার্কাডিয়ান অ্যান্ড স্লিপ মেডিসিনের পরিচালক ফিলিস জি বলেন, “গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ ও স্ট্রোকের সঙ্গে সম্পর্কিত কারণগুলো বিবেচনায় দিনের বেলা ঘুমের অভ্যাস হাইপারটেনশন ও স্ট্রোকের মতো ঘটনাগুলো বাড়িয়ে তোলে।”
ফিলিস জি নিজেও এ গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি বলেন, “ক্লিনিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি, রোগীদের ঘুম ও দিনের অতিরিক্ত ঘুমের বিষয়ে নিয়মিত জিজ্ঞাসা করা কতটা জরুরি, এই গবেষণা সেটাই তুলে ধরেছে। এ ছাড়া কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকির পেছনে অন্যান্য কারণগুলো মূল্যায়নের গুরুত্বও এটা তুলে ধরেছে।”
দিনের লম্বা ঘুমে আরও ক্ষতি
২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের বায়োমেডিকেল ডেটাবেজ ‘ইউকে বায়োব্যাংকে’ দিনের বেলায় ঘুমের অভ্যাসের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন, এমন ৩ লাখ ৬০ হাজার ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে এ গবেষণা চালানো হয়েছে।
চার বছরের এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিয়মিত রক্ত, প্রস্রাব এবং লালার নমুনা দিয়েছেন। তাদের ঘুমের অভ্যাস নিয়ে চার দফা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তবে এই গবেষণায় ঘুমের ব্যাপ্তিকাল বাদ দিয়ে কতবার ঘুমিয়েছেন, সেই তথ্য নেওয়া হয়েছে এবং অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ও ঘুম বিশেষজ্ঞ রাজ দাশগুপ্ত বলেন, “দিনের স্বল্প ঘুম বলতে কী বোঝায়, সে বিষয়টিকে গবেষণায় সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।”
ইউনিভার্সিটি অফ সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার কেক স্কুল অফ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ রাজ দাশগুপ্তও এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
তিনি বলেন, “রাতে ঘুম না হলে দুপুর থেকে দুপুর ২টার মধ্যে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অবশ্যই ঘুমাতে পারেন। তবে আপনার দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা থাকলে আমরা ওই সমেয়ে ঘুমাতে নিরুৎসাহিত করি, কেননা এটি রাতের ঘুম কেড়ে নেয়।”
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাদের দিনে ঘুমানোর অভ্যাস রয়েছেম তাদের অধিকাংশের আবার সিগারেট, মদপান, নাক ডাকার অভ্যাস ও অনিদ্রা রয়েছে।
দাশগুপ্ত বলেন, “এই কারণগুলো একজন মানুষের ঘুমের অবস্থা ও পরিমাণকে প্রভাবিত করতে পারে। রাতের ঘুম ভালো না হলে দিনে ক্লান্তি আসে, ফলে দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম হতে পারে।
“ঘুমের সমস্যাগুলো শারীরিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। এটা স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও টাইপ টু ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং হৃদরোগের ঝুঁকিরও কারণ হতে পারে।”
আরও খবর