‘ব্রেইন ডেড’ নারীর কিডনি পাওয়া দুজন ‘ভালো আছেন’

বাংলাদেশে প্রথম ‘ব্রেইন ডেড’ মানুষের কিডনি দুজন কিডনি আক্রান্তের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2023, 03:14 PM
Updated : 20 Jan 2023, 03:14 PM

ঢাকায় মৃত ঘোষিত তরুণীর দুটি কিডনি যে দুজন নারীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তারা ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রোগীর স্বজনরা বলছেন, এই কিডনি পাওয়া ছিল তাদের জন্য ‘সৌভাগ্যের’।

বুধবার রাতে বাংলাদেশে প্রথম ‘ব্রেইন ডেড’ মানুষের কিডনি দুজন কিডনি আক্রান্তের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।

এই কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট পদ্ধতিতে। এতে ক্লিনিক্যালি ডেড বা ব্রেইন ডেড রোগীর কিডনি নিয়ে অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।

একটি কিডনি দেওয়া হয়েছে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন ৩৪ বছর বয়সী এক নারীকে। অন্য কিডনি পেয়েছেন জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৯ বছর বয়সী এক নারীর শরীরে।

বুধবার মধ্যরাতে শুরু হয় কিডনি প্রতিস্থাপন, চলে ভোররাত পর্যন্ত। এতে নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউর রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল।

শুক্রবার সন্ধ্যায় অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেখানে থাকা রোগীর অবস্থা ভালো।

“ভালো থাকার যতগুলো প্যারামিটার আছে তার সবগুলোই ভালো অবস্থায় আছে। রোগীর ইউরিন প্রোডাকশন হচ্ছে, কিন্তু কিছুটা কম। এগুলো কিছুটা দেরিতে হয়। এছাড়া অন্য সবকিছু ভালো, কোনো শারীরিক সমস্যা নাই।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কিডনি বিভাগের সামনে শুক্রবার সন্ধ্যায় অবস্থান করছিলেন ওই রোগীর ভাই ও দেবর।

Also Read: দেশে প্রথমবারের মত ‘ব্রেইন ডেড’ মানুষের কিডনি পেল দুজন

ভাই বলেন, তাদের বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায়। গত সাড়ে চার বছর আগে বোনের কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়ে। এরপর থেকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে তার। চিকিৎসকরা কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা বললেও তার কিডনি জোগাড় করতে পারছিলেন না।

নিয়মিত চিকিৎসা করতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিবার।

ওই ব্যক্তি বলেন, “মরণোত্তর কিডনি নিতে শুরুতে তাদের একটু ভয় ছিল, কিন্তু এই কিডনি না নিয়েও কোনো উপায় ছিল না। আমরা তার জন্য কোনো কিডনি পাচ্ছিলাম না। প্রতি সপ্তাহে দুইবার তাকে ডায়ালাইসিস করানোও খুবই কষ্টের। তাঁর চিকিৎসা করতে গিয়ে আমাদের দুই পরিবার আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। টাকা জোগাতে না পেরে জমি বিক্রি করেছি, আমাদের বাড়িটাও বন্ধক রাখতে হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা কিডনি নিতে রাজি হয়েছি। কিডনি পাওয়াটা আমাদের জন্য খুবই সৌভাগ্যের।”

তিনি জানান, শুক্রবার দিনে দুই দফা বোনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

“সে আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলেছে। শরীরে নাকি কিছুটা ব্যথা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভালো আছে, আল্লাহর কাছে দোয়া করছি যেন কিডনি প্রতিস্থাপনটা সফল হয়।”

মিরপুরের কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নারীও ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন সেই হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে রোগীর স্বজনদের কারও সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি।

হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, “রোগী ভালো আছেন। খাওয়া দাওয়া করতে পারছেন। প্রেসার মাপা হয়েছিল তা ঠিক আছে। তবে প্রস্রাব এখনও তেমন শুরু হয়নি।”