দেশে প্রথমবারের মত ‘ব্রেইন ডেড’ মানুষের কিডনি পেল দুজন

বিএসএমএমইউ এবং কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই নারী পেয়েছেন দুটি কিডনি; তারা ভালো আছেন। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2023, 08:54 AM
Updated : 19 Jan 2023, 08:54 AM

বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ‘ব্রেইন ডেড’ মানুষের কিডনি দুজন কিডনি আক্রান্তের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যাদের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তারা ভালো আছেন বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এই কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট পদ্ধতিতে। এতে ক্লিনিক্যালি ডেড বা ব্রেইন ডেড রোগীর কিডনি নিয়ে অন্য রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে একটি দল বিএসএমএমইউর আইসিইউতে মারা যাওয়া ২০ বছর বয়সী এক তরুণীর দুটি কিডনি অপসারণ করেন। বুধবার মাঝরাতেই কিডনি দুটি অন্য দুজনের শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়।

একটি কিডনি দেওয়া হয়েছে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন ৩৪ বছর বয়সী এক নারীকে। অপর কিডনি পেয়েছেন জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৯ বছর বয়সী এক নারীর শরীরে।

ডা. হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মানুষের মস্তিষ্ক মৃত হয়ে গেলেও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ পুনরায় ব্যবহার করা যায়। তারা দীর্ঘদিন এই কাজটি করার চেষ্টা করছিলেন। সম্প্রতি ন্যাশনাল ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে অনুদানের ব্যবস্থা করলে কাজটি বেগবান হয়।

ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, আগেও কয়েকটি ‘ক্যাডাভেরিক ডেথ’ পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু সেগুলো থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায়নি।  তবে বিএসএমএমইউতে ভর্তি সারা ইসলাম নামে ২০ বছর বয়সী এক তরুণীর কিডনি প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হন তারা।

“জন্মগত ত্রুটি ছাড়াও তিনি ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত ছিলেন। বাইরের একটা হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়, পরে জটিলতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হন। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন ছিল, এ অবস্থায় আমাদের চিকিৎসকরা রোগীর স্বজনদের কাউন্সেলিং করা শুরু করেন। এক পর্যায়ে রোগীর মা যখন বুঝতে পারেন, তার মেয়ের বাঁচার সম্ভাবনা আর নেই। তখন তিনি সম্মতি দেন।”

ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, রোগীর মা সম্মতি দেওয়ার পর চিকিৎসকরা প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। কিডনি প্রতিস্থাপন করতে ইচ্ছুক পাঁচজন রোগীকে বাছাই করা হয়। বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সারা ইসলামকে মৃত ঘোষণা করা হয়। রাত ৯টায় দুজনের শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন তারা।

তিনি বলেন, “আমরা রাত সাড়ে ১০টার সময় সারার শরীরে থেকে কিডনি অপসারণ শুরু করি। জটিল অপারেশন ছিল, দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় কিডনি বের করে আনি।”

কিডনি বের করে আনার পর তা বিশেষ উপায়ে পরিষ্কার করতে আরও ত্রিশ মিনিটের মত লাগে। কিডনি পরিষ্কার করে একটি রাখা হয় বিএসএমএমইউতে, আরেকটি পাঠিয়ে দেওয়া হয় কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।

“রাত ১টার দিকে আমরা বিএসএমইউর রোগীর শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু করি। এটি শেষ হয় ভোর সোয়া ৪টায়। কিডনি ফাউন্ডেশনের অপারেশন শেষ হয় ভোর ৫টায়।”

অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপন হওয়ার পর দুজন রোগীই ভালো আছেন।

“বিএসএমএমইউর রোগী এরইমধ্যে প্রস্রাব শুরু হয়েছে। ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টের পর প্রস্রাব শুরু হতে একটু দেরি হয়, কিন্তু এটা ভালো হয়েছে।”