গত বছর এই জরিপ হয়েছিল জুলাই মাসে। এ বছর প্রায় দুমাস পর সেই জরিপ শুরু হল, যখন বর্ষা মৌসুম প্রায় শেষ।
Published : 24 Sep 2024, 02:20 PM
চট্টগ্রাম জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে শুরু করায় এ রোগের বাহক এইডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে জরিপ শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত বছর এই জরিপ হয়েছিল জুলাই মাসে। এ বছর প্রায় দুমাস পর সেই জরিপ শুরু হল, যখন বর্ষা মৌসুম প্রায় শেষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এইডিস মশার জরিপ’ প্রতি বছর করার কথা থাকলেও ২০২৩ সালেও অধিদপ্তর জরিপ করেনি। পরে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ নিজস্ব উদ্যোগে সেটি করেছিল।
এবারও চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ তিনজন কর্মী নিয়ে এই জরিপের শুরু করেছে ১৯ সেপ্টেম্বর। চলতি মাসের মধ্যে এই জরিপ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
জরিপ কাজ শেষ হলে নগরীর কোথায় এইডিস মশার ঘনত্ব বেশি এবং কোথায় রোগীর সংখ্যা বেশি তা জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে মশা নিধনে কি করণীয়– সেই সুপারিশ করবে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সোমবার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া প্রতিবেদন অনুসারে, আগের ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সোমবার পর্যন্ত চলতি মাসে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৯১ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের।
চলতি বছর এ পর্যন্ত জেলায় মোট ১১৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে; এর মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৬৯৬ জন। আর মারা গেছেন ১৩ জন। সে হিসেবে এ বছরের নয় মাসের মোট রোগীর অর্ধেকই চলতি মাসে শনাক্ত হয়েছে।
এ পরিস্থিতি জরিপের কাজ শুরুর কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের তিনজনের একটি দল জরিপের কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বহদ্দারহাট, বায়েজিদ ও কোতোয়ালি এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
“চট্টগ্রামে এবার যত রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী বায়েজিদ ও বাকলিয়া এলাকার। সে কারণে বায়েজিদ থেকে জরিপের কাজ শুরু হয়েছে।”
ডা. জাহাঙ্গীর বলেন, “যেসব এলাকায় মশার ঘনত্ব বেশি এবং যেসব এলাকায় এখন পর্যন্ত রোগী বেশি সেখানে জরিপ চালানো হবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে জরিপ শেষ করতে চাই।
“এরপর প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে কোথায় মশার ঘনত্ব ও আবাসস্থল বেশি তা নির্ধারণ করে, সিটি করপোরেশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।”
২০২৩ সালের জরিপে চট্টগ্রাম নগরীতে সবচেয়ে বেশি মশার আবাসস্থল মিলেছিল বহদ্দারহাট এলাকায়। আর রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল পাহাড়তলী এলাকায়।
মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে। জরিপে প্রতি একশ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে যদি এইডিস মশার লার্ভা বা পিউপা পাওয়া যায়, তাহলে সেটাকে মশার ‘ঝুঁকিপূর্ণ’উপস্থিতি বলা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০ শতাংশের উপরে হলে ধরে নিতে হবে ডেঙ্গু বিপজ্জনক মাত্রায় ছড়াচ্ছে। গত বছর বন্দর নগরীতে ব্রুটো ইনডেক্স ছিল গড়ে ৪৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।
জরিপে নেতৃত্বদানকারী জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাওছ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা বায়েজিদ, বহদ্দারহাট ও কোতোয়ালি থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করেছি। এরপর যাব বাকলিয়া ও নাসিরাবাদ এলাকায়।
“যেসব এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছে, সেগুলো রোগীর হটস্পট। তবে মশার হটস্পট আর আক্রান্ত রোগীর হটস্পট যে একই হবে, তেমনটা নাও হতে পারে। পরিত্যক্ত টায়ার বা সামগ্রী যেসব এলাকায় বেশি থাকে, সেটা মশার হটস্পট হয়। কিন্তু দিনের বেলায় মানুষ বেশিরভাগ সময় কর্মক্ষেত্রে থাকে। সেখানেও মশার কামড়ে আক্রান্ত হতে পারে।”
এ কারণে বিগত বছরগুলোর জরিপের অভিজ্ঞতার আলোকে রোগীর হটস্পট ও মশার হটস্পট হিসেবে আগের চিহ্নিত এলাকাগুলোতে জরিপ চালানো হবে বলেও জানান এই কীটতত্ত্ববিদ।
অন্যান্য বছরের মত এবারও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে ‘ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এইডিস মশার জরিপ’ পরিচালনার জন্য অপেক্ষায় থাকায় জরিপ দেরিতে শুরু হয়েছে জানিয়ে এনতেজার ফেরদাওছ বলেন, “আমাদের সীমিত জনবলে এত বড় শহরে মশার জরিপ পরিচালনা খুবই কঠিন।
“এখন যেহেতু ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে, তাই নিজস্ব সীমিত জনবল নিয়েই আমরা জরিপের কাজ শুরু করেছি।”
তিন দিন ধরে মশার নমুনা ডিম ও লার্ভা সংগ্রহ করা হলেও এখন পর্যন্ত ‘আইডেন্টিফিকেশন’ না হওয়ায় যে তিনটি এলাকা থেকে নমুনা নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কোনটিতে মশার ঘনত্ব বেশি সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।
মাসওয়ারি হিসাবে ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম জেলায় সর্বোচ্চ ৩৮৯২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী ছিল গত বছরের অগাস্টে ৩০১১ জন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এখন পর্যন্ত শনাক্ত ৫৯১ জন। অগাস্টে এ সংখ্যা ছিল ২০২ জন।
সোমবার জেলার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ১৪৬ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যার মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭৬ জন আছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
পুরনো খবর