ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খৎনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে হাই কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে।
আয়ানের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট করে বলা হয়নি সেখানে।প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, অপারেশনের আগে আয়ানকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হলেও চিকিৎসকদের তা জানানো হয়নি। আর অপারেশনের সময় আয়ানের ‘স্বাভাবিক রক্তপাত’ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
শিশুটির এমন মৃত্যুর জন্য সরাসরি কাউকে দায়ীও করা হয়নি প্রতিবেদনে। ভবিষ্যতে এ ধরনের মৃত্যু এড়াতে চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে উপ-পরিচালক (আইন) পরিমল কুমার পাল রোববার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর বেঞ্চে প্রতিবেদনটি জমা দেন।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ১৫ পৃষ্ঠার এই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন।
রিটকারীর পক্ষে অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আদালত হলফনামার মাধ্যমে প্রতিবেদনটি আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়ে শুনানির জন্য সোমবার দিন রাখে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “আয়ান চাইল্ডহুড অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছিল। শ্বাসকষ্টের জন্য তাকে মাঝে মাঝে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়ার প্রয়োজন হত।
“সুন্নতে খৎনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি।“
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “আয়ানের অপারেশনের সময় স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।”
খৎনা করাতে গিয়ে আয়ানের মত যেন আর কারও মৃত্যু না হয়, সেজন্য চার দফা সুপারিশ করেছে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি।
সুপারিশগুলো হলো–
· হাসপাতালে একাধিক অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া
· রোগী ও রোগীর আত্মীয়-স্বজনকে অ্যানেস্থেসিয়া ও অপারেশনের ঝুঁকিগুলো ভালোভাবে অবহিত করা
· হাসপাতালে আইসিইউর ব্যবস্থা রাখা
· সরকারের অনুমোদনের পর কোনো হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বিডিনিউজ টোয়েীন্টফোর ডটকমকে বলেন, “যে দফাগুলো সুপারিশ আকারে দিয়েছে, তাতে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। তদন্ত প্রতিবেদন হলফনামা আকারে জমা দিতে বলা হয়েছে। পরে বিস্তারিত জানা যাবে।”
পাঁচ বছর বয়সী আয়ানকে খতনা করানোর জন্য গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার সাঁতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল তার পরিবার। অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর তার আর জ্ঞান ফেরেনি।
পরে তাকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। গত ৭ জানুয়ারি সেখানেই মৃত্যু হয় শিশুটির।
আয়ানের বাবা শামীম আহামেদ পরে বাড্ডা থানায় মামলা করেন। ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সাইদ সাব্বির আহমেদ, সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তাসনুভা মাহজাবিন,অজ্ঞাতনামা পরিচালকসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয় সেখানে।
পরে জানা যায়, যথাযথ নিবন্ধন ছাড়াই চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। এ কারণে রোববার ওই হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ৯ জানুয়ারি হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।
আয়ানের মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয় সেখানে। পাশাপাশি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল এবং নতুন রোগী ভর্তি না করার নির্দেশনা চেয়ে একটি সম্পূরক আবেদন করে রিট আবেদনকারীপক্ষ।
এ রিট মামলায় পরে শিশু আয়ানের বাবা পক্ষভুক্ত হন এবং পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।
স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে এ মামলায়।
পুরনো খবর: