এটি এড়ানোর ভালো উপায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা। কাশি শিষ্টাচার ও নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, সেমিনারে পরামর্শ।
Published : 17 Apr 2024, 08:05 PM
বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি প্রতি একশজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। ষাটোর্ধ্ব ও দীর্ঘমেয়াদী রোগাক্রান্ত মানুষের মৃত্যুঝুঁকি তিনগুণ বেশি। ইনফ্লুয়েঞ্জায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা।
বুধবার ঢাকার মহাখালীতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআরে ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে ২০০৭ থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পরিচালিত ’ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিলেন্স’ থেকে পাওয়া ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। ১৯টি হাসপাতালে এ পর্যবেক্ষণ চলছে।
এর লক্ষ্য বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৌসুমী বৈচিত্র্য বোঝার পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিভিন্ন ধরণ শনাক্ত করা। আইডিসিআর ও আইসিডিডিআর এর পরিচালিত এ পর্যবেক্ষণ পরিচালনায় সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ইনফ্লুয়েঞ্জা 'ফ্লু' নামেও পরিচিত, যা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ। এ রোগে জ্বরের সঙ্গে সর্দি, কাশির উপসর্গ দেখা যায়।
সেমিনারে বলা হয়েছে, এসব হাসপাতালের ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৮০ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ হাজার ২৩৪ জনের ইনফ্লুয়েঞ্জা পজেটিভ এসেছে, যা শতকরা ১১ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার মৌসুম। এ সময় প্রতি চারজনের নমুনা পরীক্ষা করে একজন ইনফ্লুয়েঞ্জার রোগী পাওয়া যায়। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় জুন ও জুলাই মাসে।
গত কয়েক বছরের রোগীদের পরিসংখ্যানে জুনে মোট আক্রান্তের ২৯ দশমিক ১০ শতাংশ এবং জুলাইয়ে ৩০ দশমিক ৮৫ শতাংশ রোগী পাওয়া গেছে।
এর পরের মাসগুলো অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ২৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় একজন রোগী শনাক্ত হয়।
ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ১ শতাংশের মৃত্যু হয়। ষাটোর্ধ্ব এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি তিনগুণ বেশি।
সর্বোচ্চ সুরক্ষার জন্য প্রতি বছর মার্চের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সেমিনারে দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বি,র সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. ফাহমিদা চৌধুরী এবং আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন।
ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, বাংলাদেশে সারাবছরই ফ্লু শনাক্ত হয়। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর তা বেড়ে যায়।
“এই কারণে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এজন্য মৌসুম শুরুর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিয়ে সুরক্ষিত রাখতে হবে। পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারেও সতর্ক থাকতে হবে।”
আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ বলেন, “২০০৮ থেকে ২০১০ সালে আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী ড. কে জামান গবেষণা করে দেখেছিলেন যে গর্ভাবস্থায় মাকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দিলে মায়ের পাশাপাশি নবজাতকের রোগের ঝুঁকিও ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গর্ভাবস্থায় মায়েধরে ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেয়।”
সেমিনারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে বাঁচতে টিকা নেওয়া যায়। তবে এই টিকার দাম এবং সবাইকে এই টিকা দেওয়া যাবে কি না সেটা একটা প্রশ্ন। এজন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হল এতে আক্রান্ত না হতে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। কাশি শিষ্টাচার এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে এটা সম্ভব।
“টিকা দেওয়ার চেয়ে সস্তা উপায় আছে। কাশি শিষ্টাচার, হাত ধোয়া, মাস্ক পরা। যেগুলো আমরা কোভিডের সময় বলেছি। এগুলো অনেক তাড়াতাড়ি অনেক রোগ থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারে। টিকা আমরা সবাইকে দিতে পারব না।”
সেমিনারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনফেকশাস হ্যাজার্ড ম্যানেজমেন্ট অফিসার এএসএম আলমগীর, ইউএস-সিডিসির অ্যাপিডেমিওলজিস্ট গ্রেচেন কাওম্যান, গ্লোবাল হেলথ ডেভেলপমেন্ট (জিএইচডি) ও ইস্টার্ন মেডিটার্নিয়ান পাবলিক হেলথ নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বক্তব্য দেন।