তীব্র গরমের মধ্যে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
Published : 17 Apr 2024, 09:39 AM
সারাদেশে বয়ে চলা তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। সর্দি-জ্বর এবং পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন অনেকে।
তীব্র গরমের মধ্যে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, গরমের সময় অসুস্থতা থেকে বাঁচতে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা।
দিন দশেক ধরে টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় থার্মোমিটারের পারদ উঠেছে মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ঢাকায় ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এরমধ্যে রাজধানীতে এক দফা ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি মিললেও দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
ঢাকার মগবাজারের বাসিন্দা আবদুল ওয়াদুদের সাত বছর বয়সী সন্তান আহনাফের গত কয়েক দিন ধরে জ্বর। তাপ না কমায় আহনাফকে মঙ্গলবার বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে নিয়ে যান তার বাবা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ওয়াদুদ বলেন, জ্বরের সঙ্গে তার ছেলের প্রচণ্ড শরীর ব্যথা, ক্লান্তিও আছে।
“ছেলেটা কিছু খেতে পারছে না। আমার ছেলের এমন জ্বর আগে হয়নি।”
গরমের মধ্যে গত কয়েকদিনে রোগী বেড়েছে জানিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সর্দি, জ্বর, কাশি শ্বাসকষ্ট আর খিঁচুনি নিয়ে এসব শিশুরা হাসপাতালে আসছে। অতিরিক্ত গরমে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বা জন্ডিসের প্রবণতাও বাড়ছে।
“অতিরিক্ত গরমে শিশুরা প্রচুর ঘামছে, তাতে তৈরি হচ্ছে পানিশূন্যতা। এ সময় শিশুদের বাইরে বের না করলেই ভালো। শিশুদের খাবারের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। গরম খাবার দিতে হবে, বাইরের খাবার-পানি খাবে না।”
গরমের মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে রোগীরা যাচ্ছেন ঢাকার মহাখালীতে আইসিডিডিআর,বির কলেরা হাসপাতালে। যাত্রাবাড়ীর মিরহাজীরবাগের দেড় বছর বয়সী সাজ্জাদ হোসেনকে এ হাসপাতালেই নিয়ে গেছেন তার মা-বাবা।
সাজ্জাদের মা নাসিমা সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "কাল (সোমবার) বিকাল থেকে পাতলা পায়খানা। রাতে একটু কমছিল, সকালে আবার পায়খানা বাইড়া গেছে। এজন্য নিয়া আসছি। আমি বাচ্চার খুব ভালো করে যত্ন নিই। গরমের কারণে ডায়রিয়া হইছে মনে হয়।"
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের তিন বছর বয়সী শিশু রিফাতও রোববার থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত। তাকেও কলেরা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
রিফাতের বাবা মো. কাইয়ুম বলেন, "বাড়িতেই স্যালাইন খাওয়াচ্ছিলাম। অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় এখানে নিয়ে আসছি। এখন অবস্থা কিছুটা ভালো, ছুটি দিয়েছে।"
আইসিডিডিআর,বির হিসাবে দেখা গেছে, গত ৭ এপ্রিল ৪৬১ জন, ৮ এপ্রিল ৪৬৯ জন, ৯ এপ্রিল ৪১৪ জন, ১০ এপ্রিল ৪২৯ জন, ১১ এপ্রিল ৪৪৯ জন, ১২ এপ্রিল ৫৯৫ জন, ১৩ এপ্রিল ৫২৫ জন, ১৪ এপ্রিল ৪৩৪ জন, ১৫ এপ্রিল ৪৯১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা দুই পর্যন্ত ২৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে আইসিডিডিআরবিতে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ডা. বাহারুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইসিডিডিআরবিতে দৈনিক সাতশর বেশি রোগী ভর্তি হলে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে ধরে নেন তারা। গ্রীষ্মের শুরুতে এখনও সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
”গত ফেব্রুয়ারি মাসে কয়েকদিন সাতশর বেশি রোগী ভর্তি হয়েছিল, সেটা রোটা ভাইরাসের কারণে। তবে গরম আসার পর রোগী একই রকম আছে।”
বাহারুল আলম বলেন, গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। খাবার আগে, টয়লেটে যাওয়ার পরে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে। বিশেষ করে যারা শিশুদের খাওয়ান, যত্ন নেন, তাদের এ বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। ঢাকায় যেহেতু পানির নির্ভরযোগ্য উৎস নেই, সে কারণে খাবার পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে।
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে প্রথম দিনই হাসপাতালে আসার প্রয়োজন পড়ে না। সেজন্য বাসায় সব সময় খাবার স্যালাইন রাখতে হবে বলে জানান এই চিকিৎসক।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে
আইসিডিডিআর’বি বলছে, তীব্র গরমে শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, রিকশাচালক, কৃষক ও নির্মাণশ্রমিকদের মত শ্রমজীবী, স্থুলকায় ব্যক্তি এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ, বিশেষ করে যাদের হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ আছে, এমন ব্যক্তিরা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে আছেন।
হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে আইসিডিডিআরবি।
· দিনের বেলা সম্ভব হলে বাইরে বের না হওয়া, রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরে বের হলে ছাতা, টুপি, ক্যাপ বা কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হবে
· হালকা রঙের ঢিলেঢালা সুতির জামা পরতে হবে
· প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে
· সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে, বাসি ও খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
· দিনের বেলা একটানা শারীরিক পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকতে হবে
· সম্ভব হলে একাধিকবার শরীরে পানির ঝাপটা দেওয়া বা গোসল করা
· প্রস্রাবের রঙের দিকে নজর রাখতে হবে। প্রস্রাবের রং হলুদ বা গাঢ় হলে অবশ্যই পানি পানের পরিমাণ বাড়াতে হবে
· ঘরের পরিবেশ যেন অতিরিক্ত গরম বা ভ্যাপসা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে
· বেশি অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে