‘পঁচিশেও অনির্বাণ, নাটকের জয়গান’ স্লোগান নিয়ে ‘থিয়েটার সাস্ট’র চারদিনের রজতজয়ন্তী উৎসব শুরু হবে ২৭ জুলাই।
Published : 18 Jul 2023, 04:48 PM
মৌলিক নাটকের প্রদর্শনী, আনন্দ শোভাযাত্রা এবং নতুন-পুরনোদের মিলনমেলাসহ নানা আয়োজনে ‘রজতজয়ন্তী উৎসব’ করতে চলেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যদল ‘থিয়েটার সাস্ট’।
‘থিয়েটার সাস্ট’র রজতজয়ন্তীর স্লোগান হল ‘পঁচিশেও অনির্বাণ, নাটকের জয়গান’।
গতবছর সংগঠনের ২৫ বছর পূর্তি হয়েছে; রজতজয়ন্তীর উৎসব হচ্ছে এবছর।
‘থিয়েটার সাস্ট’ সভাপতি মেহেদী হাসান মিঠু জানিয়েছেন, চারদিনের রজতজয়ন্তী উৎসবের পর্দা উঠছে আগামী ২৭ জুলাই, যা শেষ হবে ৩০ জুলাই।
২৭ জুলাই বেলা ১২টায় কেক কেটে ও আনন্দ শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু হবে উৎসবের।
একই দিনে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘থিয়েটার সাস্টের’ মৌলিক নাটকের প্রদর্শনী থাকছে বলেও জানান মিঠু।
দ্বিতীয় দিন নট্যদলটির সাবেক, বর্তমান ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের পুনর্মিলনী, সংগঠনের অ্যালামনাই ঘোষণা এবং আনন্দযোগ অনুষ্ঠিত হবে।
উৎসবের তৃতীয় দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আমন্ত্রিত অতিথি দল হিসেবে ‘কহে ফেসবুক’ নাটকটি মঞ্চস্থ করবে ‘আরণ্যক নাট্যদল’।
আর সমাপনী দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘মণিপুরী থিয়েটার’ ও ‘হৃৎমঞ্চের’ যৌথ প্রযোজনার ‘হ্যাপি ডেইজ’ নাটক মঞ্চস্থ হবে।
উৎসবের এই চারদিনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের নানা প্রান্তের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মিঠু বলেন, “নাটক সমাজের দর্পণ স্বরূপ। তাই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই ‘থিয়েটার সাস্ট’র সদস্যরা নানা ধরণের সামাজিক কাজে অংশ নেয়। যার মধ্যে রয়েছে বৃক্ষরোপন, শীতার্ত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ইত্যাদি।’’
‘থিয়েটার সাস্ট’র সাধারণ সম্পাদক সাকিবুল হাসান সজীব বলেন, ২৫ বছরে থিয়েটার সাস্ট ৮টি নাট্যোৎসব ও ৩৭টি নাটকের ১৩১টি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
“নাটক ছাড়াও বিনোদনমূলক সাংস্কৃতিক কাজেও থিয়েটার সাস্টের সক্রিয় অংশগ্রহণ। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে বনভোজন, ফল উৎসব, ক্রীড়া সপ্তাহ, ইফতার মাহফিল, বার-বি-কিউ ইত্যাদি ।’’
থিয়েটার সাস্টের একাল-সেকাল
১৯৯৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসের গোলচত্বরের এক উন্মুক্ত মঞ্চে ‘কুসংস্কারমুক্ত বিশ্ব’ গড়ার প্রত্যয়’ নিয়ে একদল তরুণ শিক্ষার্থীর হাত ধরে থিয়েটার সাস্ট এর যাত্রা শুরু। ওই সময়ে প্রতিষ্ঠাতাদের স্লোগান ছিল ‘নাটক নির্মাণ করে যৌবন, নাটক আনবেই অবিনাশী প্লাবন’।
দীর্ঘ আড়াই দশকের বিভিন্ন সময়ে ‘মহাপুরুষ’, ‘হাসন রাজা’, ‘আজ কমন্ডলের ফাঁসি’, ‘শেষের কবিতা’, ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’র মত নাটক করে মঞ্চ মাতিয়েছে থিয়েটার সাস্ট।
এছাড়াও ‘বেধুয়া’, ‘সোনার হরিণ’, ‘এ নিউ টেস্টামেন্ট অব রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’, ‘মাধব মালঞ্চী কইন্যা’, ‘জলতরঙ্গ’সহ প্রেম-বিরহ-প্রাপ্তি ও ভালোবাসার আরও কিছু নাটক মঞ্চে এনেছে এই নাট্যদলটি।
এছাড়া ‘ওরা আসবে’, ‘ভোক’, ‘চোর’, ‘ভাস্কর্য’ এবং ‘আত্মকথা’ এই সাতটি মৌলিক নাটকের প্রদর্শনী করেছে ‘থিয়েটার সাস্ট’। নিজেদের অষ্টম মৌলিক নাটক ‘অভিনেতা’ দেখানো হবে রজতজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চে।
মঞ্চ নাটকে অবদানের জন্য ২০০৬ সালে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং ২০১১ সালে সিলেটের সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সদস্যপদ পেয়েছে ‘থিয়েটার সাস্ট’ ।
বর্তমানে এই নাট্যদলটির সদস্য ৩০ জন।
এর আগে একাধিকবার নাট্যোৎসব আয়োজন করেছে ‘থিয়েটার সাস্ট’। প্রতিষ্ঠার পরের বছরই ১৯৯৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় নাট্যেৎসব আয়োজন করা হয়। ওই দুই উৎসবে ‘অতঃপর হরেন মন্ডল’ ও ‘বউ’ নাটক মঞ্চস্ত করা হয়।
২০০১ সালে সিলেট এম সাইফুর রহমান মিলনায়তনে তৃতীয় নাট্যোৎসবের আয়োজন করে ‘থিয়েটার সাস্ট’।
এরপর ২০০৪ সালে ‘থিয়েটার সাস্ট’ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি ‘পথ নাট্যৎসব’ আয়োজন করে।
চার বছর বিরতি দিয়ে ২০০৮ সালে সিলেট এম সাইফুর রহমান মিলনায়তনে চার দিনব্যাপী চতুর্থ নাট্যোৎসব আায়োজন করা হয়।
‘থিয়েটার সাস্ট’ পঞ্চম নাট্যোৎসব করেছে ২০০৯ সালে। ২০১২ সালে আসে ষষ্ঠ নাট্যেৎসব।
সবশেষে ‘থিয়েটার সাস্ট’ তাদের দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে ২০১৮ সালে চার দিনব্যাপী সপ্তম নাট্যোৎসব করেছিল।