তার গাওয়া ‘দেখো রে নয়ন মেলে জগতের বাহার’, ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে’র মত গানগুলো আজও মুখে মুখে ফেরে।
Published : 15 Dec 2023, 09:20 PM
সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি গুপী গাইনের গানগুলোকে যার কণ্ঠ দিয়েছে অমরত্ব, সেই প্রখ্যাত শিল্পী অনুপ ঘোষাল সুরের মায়া ছেড়ে চিরবিদায় নিলেন।
ভারতের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাবেক বিধায়ক অনুপ ঘোষাল। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এ সংগীত শিল্পী। শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকা হলে তাকে আর বাঁচানো যায়নি।
তার মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “অনুপ ঘোষালের প্রয়াণে সংগীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি অনুপ ঘোষালের আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।”
নজরুলগীতি ও শ্যামাসংগীতের জন্য গানের জগতে বিপুল প্রশংসা পেলেও বহু ঠুমরি, খেয়াল, ভজন, রবীন্দ্রসংগীত, দ্বিজেন্দ্রগীতি, রজনীকান্তর গান, রাগপ্রধান গান, আধুনিক বাংলা গান এবং লোকসংগীত অনুপ ঘোষালের কণ্ঠে শুনেছেন শ্রোতারা।
বেশ কিছু সিনেমায় তিনি সংগীত পরিচালনা করেছেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ও ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমায় অনুপ ঘোষালের গাওয়া ‘দেখো রে নয়ন মেলে জগতের বাহার’, ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে’র মত গান আজও মুখে মুখে ফেরে।
অনুপ ঘোষালের সংগীতে হাতেখড়ি চার বছর বয়সে, নিজের পরিবারে। তার বাবা অমূল্যচন্দ্র ঘোষাল, মা লাবণ্য ঘোষাল। মা ছিলেন তার সংগীত সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
কলকাতার আশুতোষ কলেজ থেকে মানবিকে স্নাতক করেন অনুপ ঘোষাল। পরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি করেন। নজরুলগীতির রূপ ও রসানুভূতি ছিল তার গবেষণার বিষয়।
আনন্দবাজার লিখেছে, বাংলা ছাড়াও হিন্দি, ভোজপুরি ও অসমিয়া ভাষার গান করেছেন অনুপ ঘোষাল। তপন সিন্হা পরিচালিত ‘সাগিনা মাহাতো’ চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গান এখনও শ্রোতারা ভোলেননি। ‘মাসুম’ সিনেমার ‘তুঝসে নারাজ নেহি জ়িন্দেগি’ গানটি অবিস্মরণীয় করে তোলার পেছনেও তার অবদান রয়েছে।
এছাড়া ‘এনেছি আমার শত জনমের প্রেম’, ‘আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়’, ‘মধুর আমার মায়ের হাসি’, ‘আমার এ ভালোবাসা’, ‘পৃথিবী আমারে চায়’ গানগুলো অনুপ ঘোষালকে ভক্ত হৃদয়ে বাঁচিয়ে রাখবে বহুদিন।
পশ্চিমবঙ্গে বাম শাসনের শেষ দিকে রাজনৈতিক পরিবর্তন আন্দোলনে যুক্ত হন অনুপ ঘোষাল।২০১১ সালে তাকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুগলির উত্তরপাড়া আসন থেকে প্রথমবারই জয় পান।
তবে পরে আর অনুপ ঘোষালকে মনোনয়ন দেয়নি তৃণমূল। ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে তিনি দূরে সরে যান।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ২০১১ সালে অনুপ ঘোষালকে ‘নজরুল স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০১৩ সালে ‘সংগীত মহাসম্মান’ পুরস্কারে ভূষিত করে।