কবীর সুমন ইতোমধ্যে পৌঁছেছেন ঢাকায়।
Published : 13 Oct 2022, 10:55 PM
১৩ বছর পর কবীর সুমন ঢাকায় এলেও জাতীয় জাদুঘরে তার গানের অনুষ্ঠান নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বলছেন, তাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানটি তাদের মিলনায়তনে হচ্ছে।
তবে পুলিশ বলছে, ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা’ এলাকায় এই অনুষ্ঠানের অনুমতি তারা দেয়নি।
শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে গান গাইতে বৃহস্পতিবার সকালেই ঢাকায় পৌঁছান ভারতের বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী সুমন।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ১৫ অক্টোবর কবীর সুমন গাইবেন আধুনিক বাংলা গান, ১৮ অক্টোবর গাইবেন আধুনিক বাংলা খেয়াল এবং ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠানটি শেষ হবে আধুনিক বাংলা গান দিয়ে।
তিন দিনের এই অনুষ্ঠানের টিকেট বিক্রি হয়েছে আগেই। বুধবার ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক প্রতিষ্ঠান পিপহোল বলেছিল, তাদের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। বিদেশি শিল্পীকে নিয়ে এই আয়োজনের সব অনুমতিই নেওয়া আছে।
তবে বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশে খবর নিয়ে জানা যায়, জাদুঘরে এই গানের অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়নি তারা।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় জাদুঘর একটি কেপিআই, কেপিআইয়ের ভেতর জনসমাবেশ বা এধরনের কোনো অনুষ্ঠান করার সুযোগ নেই।”
সুমনের গান নিয়ে শ্রোতাদের অতি আগ্রহকেই চাপ হিসেবে দেখছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
শফিকুল বলেন, “শিল্পীদের অনেক ক্রেজ থাকে। উনারা যে পরিমাণ টিকেট বিক্রি করেছে, তার চেয়ে যদি অনেক বেশি লোক চলে আসে এবং ‘বাইচান্স’ ভাংচুর শুরু করে, তখন তো সমস্ত দোষ পুলিশের উপর এসে পড়বে। তখন প্রশ্ন আসবে- উনি কেনো কেপিআইয়ের ভেতর অনুমতি দিল।”
আয়োজকরা অন্য কোনো স্থানে অনুমতি চেয়েছি কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাদুঘর ছাড়া আর কোনো স্থানের জন্য অনুমতি চায়নি।
তবে অন্য কোনো স্থানে আয়োজনের আবেদন করলে সেক্ষেত্রেও যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, বলেন তিনি।
ঢাকায় তিন দিন গান শোনাবেন কবীর সুমন
‘এই বুড়োর গান শুনতে মানুষের আগ্রহ আনন্দ দেয়’
এদিকে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনের ব্যবস্থাপক সাইমা ফারজানা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় জাদুঘর যেহেতু সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে, এজন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি থাকলে এখানে অনুষ্ঠান করতে কোনো বাধা নেই।
“সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে সুমনের গানের ব্যাপারে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাই আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, জাতীয় জাদুঘরে যথাসময়েই সুমনের গান অনুষ্ঠানটি হচ্ছে। অনুষ্ঠানটি না হওয়ার কোনো তথ্য আমার জানা নেই।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এনবিআর থেকে অনুমতি দেওয়ার পর সবশেষ অনুমতি দিয়ে থাকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। সুমনের গান অনুষ্ঠানটির জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণলায় থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।”
বিখ্যাত অ্যালবাম ‘তোমাকে চাই’ এর তিন দশক পূর্তিতে ঢাকায় ‘সুমনের গান’ শিরোনামের অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেওয়ার কথা বলেন ‘পিপহোল’র কর্মকর্তা মীর আরিফ বিল্লাহ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অনুমতি নিয়েই অনুষ্ঠানটি করছি। কবীর সুমন ইতিমধ্যে ঢাকায় এসে গেছেন। অবশ্যই যথাসময়ে সুমনের গান অনুষ্ঠানটি হবে।”
৩০ বছর আগে ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের মাধ্যমে বাংলা গানের জগতে এক নতুন ধারার সূচনা হয়। সেই ধারারা পুরোধা সুমন ১৩ বছর পর ঢাকায় এসেছেন। ফলে বাংলাদেশে তার অগুনতি ভক্তদের মধ্যে তৈরি হয়েছে তুমুল আগ্রহ।
পিপহোলের আরেক কর্মকর্তা ফুয়াদ বিন ওমর বলেন, “শনিবার থেকে আমরা টিকেট বিক্রি শুরু করেছি। মাত্র ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে আধুনিক বাংলা গানের দুই দিনের শোর সব টিকিট বিক্রি হয়েছে এবং বাংলা খেয়ালের টিকিটও বিক্রি শেষের পথে।”
অনেকেই নানাভাবে টিকেটের জন্য তদবির করছেন জানিয়ে ফুয়াদ বলেন, “আমরা আসলে অপারগ। জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনটিতে খুব বেশি আসন নেই। যে কারণে সবাইকে সুযোগ দিতে পারছি না।
“এছাড়া বিদেশ থেকেও অনেক সুমন ভক্ত অনুষ্ঠানটি অনলাইনে দেখতে চেয়েছে। এজন্য আমরা ৪টি ক্যামেরা দিয়ে সুমনের গান লাইভ স্ট্রিমিং করব। সেখানেও টিকেট কেটে লাইভ দেখার সুযোগ রয়েছে। অনলাইনে সুমনের গান অনুষ্ঠানটি দেখার জন্যও অনেকেই টিকেট কিনছেন।”
কবীর সুমন শেষবার ঢাকায় এসেছিলেন ২০০৯ সালের অক্টোবরে। তখন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে গান পরিবেশনে বাধা পেয়ে কলকাতায় ফিরেছিলেন। মধ্যে এক যুগ কেটে গেলেও আর ঢাকায় আসেননি তিনি। এক সাক্ষাৎকারে অভিমানের সুরে বলেছিলেন, বাংলাদেশে আর কখনও আসবেন না তিনি।
এবারের অনুষ্ঠানটি ঘিরে তরুণদের উৎসাহ দেখে ঢাকার আসার আগে এক ভিডিও বার্তায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে কবীর সুমন বলেন, “আমার ৭৩ বছর চলছে। আর বেশি দিন তো নেই। আরো অনেক বছরও যদি বাঁচি, এই গলাটা তো আর থাকবে না। সুর তো থাকবে না। তাই যতদিন আছি, সকলে যদি শোনেন আমার খুব ভালো লাগবে।”