নায়ক ফারুকের মৃত্যুতে ফেইসবুক যেন শোকবই

ফারুকের মৃত্যুর খবরে ঢাকার শোবিজ পাড়ায় শোক নেমে আসে। তারকাদের অনেকেই ফেইসবুকে লেখেন শোকবার্তা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2023, 07:34 AM
Updated : 15 May 2023, 07:34 AM

গ্রামের টগবগে তরুণ থেকে শুরু করে শহুরে, চরিত্রের নানা বৈচিত্রে প্রায় চার দশক সিনেমাপ্রেমীদের মাতিয়ে রেখে পৃথিবীর মায়া কাটালেন চিত্রনায়ক ফারুক। এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোকার্ত রুপালী পর্দার জগতও।

বহুদিন ধরে নানা অসুস্থতায় ভুগতে থাকা ফারুক সোমবার সকালে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

ফারুকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার শোবিজ পাড়ায় শোক নেমে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক যেন হয়ে ওঠে শোকবই। শোবিজ তারকাদের অনেকেই ফেইসবুকে লেখেন শোকবার্তা।

শাকিব খানের সিনেমার পোস্টার কিংবা ট্রেলার রিলিজ দেখে নিজ থেকে শুভকামনা জানাতেন ফারুক।

এই চিত্রনায়কের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে এক ফেইসবুক পোস্টে এমনটাই বলেছেন ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান।

সোমবার দুপুরে নিজের ফেইসবুকের ভেরিফায়েড পাতায় তিনি লেখেন, “চলে গেলেন আমাদের প্রিয় মিঁয়া ভাই (আকবর পাঠান ফারুক)। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। যতদিন তিনি সুস্থ সবল ছিলেন, ততদিন আমাকে স্নেহে আগলে রেখেছিলেন।”

“আমার যে কোনো ভালো কাজ এবং ছবির পোস্টার কিংবা ট্রেলার রিলিজ দেখে তিনি নিজ থেকে অ্যাপ্রিসিয়েট করে গর্বিত হতেন।”

ফারুকের মৃত্যুতে অভিভাবক হারানোর বেদনা অনুভব করার কথা জানিয়েছেন শাকিব।

“আমার কাছে শ্রদ্ধাভাজন এই মানুষটি ছিলেন চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রাজ্ঞজনদের একজন। কাজে কিংবা কাজের বাইরে এই মহান মানুষটির সাথে আমার অসংখ্য স্মৃতি। তার প্রয়াণে প্রিয় অভিনেতা হারানোর পাশাপাশি একজন অভিভাবক হারানোর শোক অনুভব করছি। ওপারে অনেক শান্তিতে থাকবেন।”

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী লেখেন, “বিদায় নায়ক ফারুক। বিনম্র শ্রদ্ধা। আপনার আত্মার শান্তি হোক।”

শাহনাজ খুশি লেখেন, “শোক এবং শ্রদ্ধা। না ফেরার দেশে, সবার নায়ক ফারুক।”

“আল্লাহ আমাদের লিজেন্ড ফারুক ভাইকে জান্নাত নসিব করুন। আমিন”- এমন কামনা করে পোস্ট দিয়েছেন চিত্রনায়ক ওমর সানী।

অভিনেত্রী তারিন জাহান লেখেন, “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দীর্ঘদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আজ ঘণ্টা দুয়েক আগে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা ১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক ভাই।”

অভিনেতা মিশা সওদাগরের শোকবার্তা ছিল এমন- “বিদায় মিয়াভাই’। আজ সকাল ৮:৩০ মিনিটে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়াভাই’ খ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা ১৭ (গুলশান - বনানী) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) ভাই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।”

নিজের স্ট্যাটাসে চিত্রনায়ক ফারুকের সঙ্গে নিজের একটি ছবিও দিয়েছেন মিশা।

বিজরী বরকতুল্লাহ লেখেন, “কিংবদন্তী চলচ্চিত্র অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়ক ফারুক সিংগাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। আল্লাহ তার সকল গুনাহ মাফ করে জান্নাত দান করুন, আমিন।”

হালের আলোচিত চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল লিখেছেন, “প্রায় পাঁচ দশক ঢালিউডে অবদান রাখা ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি চিত্রনায়ক ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক (আমাদের ফারুক ভাই)। এই র্কীতিমান মহান মানুষটির প্রয়াণে গভীর শোক ও বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।”

সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নীর স্ট্যাটাস- “চিত্রনায়ক ফারুক চলে গেলেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজেউন)। এ যেনো একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। জানিনা কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে একজন নায়কের জন্য। একেই বলে নায়ক- যার প্রস্থানে ভক্তদের চোখ ভেসে যায়।”

চিত্রনায়িকা জাহারা মিতু লিখেছেন, “বিটিভিতে আপনার ছবি দেখে বড় হয়েছি। গ্রাম্য ছেলের ভূমিকায় কি অনবদ্য আপনি। আল্লাহ আপনাকে বেহেশত নসিব করুক। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”

চলচ্চিত্র পরিচালক জাকির হোসেন রাজু তার ফেইসবুকের টাইমলাইনে লিখেছেন, “বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত, তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ফারুক ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। মৃত্যু অনিবার্য, তবু মৃত্যু আমার ভালো লাগে না। এই সংবাদটি শুনলেই মন বিবশ হয়ে যায়। যে মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন, হাজার চেষ্টা করলেও তার সাথে আর কোনদিন কথা বলা যাবে না, পৃথিবীর কোনো প্রযুক্তির মাধ্যমেও আর জানা যাবে না, মানুষটি কেমন আছেন! কী ভীষণ অসহায় আমরা মৃত্যুর কাছে।”

এই নির্মাতার প্রথম দুটি সিনেমাতেই অভিনয় করেছিলেন ফারুক। নিজের চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের একটি ছবি দিয়ে সেই স্মৃতি মনে করে রাজু লিখেছেন, “আমার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘জীবন সংসার’ দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘এ জীবন তোমার আমার’ এর নায়ক ফারুক ভাই। শত শত মধুর স্মৃতি তাঁর সাথে। যেসব স্মৃতি সিনেমার গল্পের চেয়েও মধুর। কোন একদিন সেই সব স্মৃতি নিয়ে বিষদভাবে লিখবো। আজ শুধু বলবো, পরপারে ভালো থাকবেন ফারুক ভাই। আল্লাহ যেন আপনার দোষত্রুটি ক্ষমা করে আপনাকে জান্নাতবাসী করেন। আপনার পরিবারের সবাইকে শোক সইবার শক্তি দেন। আমীন।”

চিত্রনায়ক জায়েদ খানও ফারুকের সঙ্গে নিজের একটি ছবির সঙ্গে শোক জানিয়েছেন ফেইসবুকে। তিনি লিখেছেন, “এতক্ষণ কিছু লিখিনি, কারণ মনে হয়েছে আপনি বেঁচে আছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে চলে গেলেন। এটা তো কথা ছিল না। বলেছিলেন- জায়েদ আসতেছি, আড্ডা হবে। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি নাই।”

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের সাদা-কালো পর্দা থেকে তিন দশকের বেশি সময় ধরে ঢাকার চলচ্চিত্রে অভিনয়, প্রযোজনা ও পরিচালনায় উজ্জ্বলএকটি নাম ‘ফারুক’। অভিনয় করেছেন ৬০টির বেশি সিনেমায়।

১৯৪৮ সালের ১৮ অগাস্ট পুরান ঢাকায় তার জন্ম। পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু, বাবার নাম আজগার হোসেন পাঠান। পাঠান পরিবারের এই সন্তানের বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। ছাত্রবয়সেই জড়িয়ে পড়া ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। দেশ বাঁচাতে মুক্তিযুদ্ধে ধরছিলেন অস্ত্রও।

তবে মুক্তিযুদ্ধের আগেই সিনেমায় নাম লিখিয়েছিলেন এই নায়ক, ‘জলছবি’ নামের সেই সিনেমা মুক্তি পায় একাত্তরে। প্রথম সিনেমাতেও তার নায়িকা ‘সারেং বউ’ কবরী। যে জুটি আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল ‘সুজনসখী’ নামে।

ক্যারিয়ারে প্রথম থেকে ফারুক নজর কেড়েছিলেন নির্মাতা খান আতাউর রহমানের। যার হাত ধরে একটু একটু করে এগিয়েছিলেন তিনি। এরপর আমজাদ হোসেন, নারায়ণ ঘোষ মিতা, প্রমোদ করের মত পরিচালকরা তাদের সিনেমায় বেছে নেন ফারুককে।

সারেং বউ, লাঠিয়াল, নয়নমণি, গোলাপী এখন ট্রেনে, দিন যায় কথা থাকে, জনতা এক্সপ্রেস, সাহেব, মিয়াভাই, নাগরদোলা, সুজনসখী’, ঘরজামাই, ভাইভাই, বিরাজবৌ এর মত চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অনন্য জায়গায় নিজেকে নিয়ে যান খ্যাতিমান এই অভিনেতা।