ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমে নির্মাতারা তাদের কাজের ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ পান বলেও মনে করেন সৃজিত।
Published : 19 Oct 2023, 01:18 PM
কলকাতার সিনেমা ইন্ড্রাস্ট্রিতে হালে চলছে ‘ফ্যামিলি ড্রামা’ ঘরানার সিনেমা, দর্শকদের চাহিদায় নির্মাতারাও মেতেছেন পারিবারিক গল্পের সিনেমা নিয়ে। কিন্তু যুগের হাওয়ায় গা ভাসাতে রাজি নন নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি।
নানা ধরনের বিষয় নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পছন্দ করা এই পরিচালক বলেছেন, তার সিনেমায় বহু বিষয়ের উপাদান থাকবেই। আর এই স্বকীয়তা বজায় রাখতে তিনি বদ্ধপরিকর।
আনন্দবাজার দৈনিকের অনলাইনের মুখোমুখি হয়ে কথা বলছিলেন সৃজিত। তাতে অনেকখানি জায়গা নিয়েছে শুক্রবার মুক্তি পেতে চলা তার পূজার সিনেমা ‘দশম অবতার’। এই সিনেমার সূত্র ধরে সৃজিত কথা বলেছেন নিজের কাজ নিয়ে।
নির্মাণে স্বকীয়তা ধরে রাখতে চাওয়া সৃজিত বলেন, “ইদানীং ফ্যামিলি ড্রামা খুব চলছে। যাকে ‘চেম্বার্ড ড্রামা’ বলা যায়। কিন্তু তা বলে তো আমি আমার ঘরানা থেকে সরে আসতে পারি না। আমি আমার মত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাব। নিজের মত ছবি বানিয়ে যাব।“
তরুণ দর্শকদের ধরে রাখাটা মূল চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করেন সৃজিত।
তিনি বলেন, “কমবয়সীরা কিন্তু প্রৌঢ় দর্শকদের মতো অতটা লয়্যাল নয়। তারা খুব শিফট করে। কারণ, তাদের হাতে অনেক বিকল্প। তাই তাদের ধরে রাখাটাই চ্যালেঞ্জ। আমার কিছু সিনেমা যদি তাদের ধরতে না পারে, তাতে আমি আশ্চর্য হই না। কিন্তু কিছু ফ্যামিলি ড্রামা চলছে বলেই যে আমি সেটায় শিফট করে যাব, সেটা আমি করব না। আমি বিবিধ বিষয় নিয়ে ছবি করব। “
সৃজিত বলেন, ‘দশম অবতার’ নির্মাণের ভাবনা তার পুরনো এবং এটা তার বানতেই হত।
কেন? উত্তরে সৃজিত বলেন, ‘২২শে শ্রাবণ’ সিনেমার সিক্যুয়েল ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ দেখে অভিমান হয়েছিল পুলিশ অফিসার প্রবীর রায়চৌধুরী চরিত্রের প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। কারণ ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ সিনেমায় প্রবীরকে দেখা না গেলেও পুরোটা জুড়ে তিনিই ছিলেন। তাকে নিয়ে বহু সংলাপ, কথা, গল্প, অথচ পর্দায় তিনি নেই।
“বুম্বাদার (প্রসেনজিৎ) মন খারাপ থেকে চিন্তাভাবনা শুরু করি। কি করে প্রবীরকে ফিরিয়ে আনা যায় ভাবতে বসি। এর মধ্যে ভিঞ্চিদাও হয়ে গেছে। তাই দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রবীর আর পোদ্দারের প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা তৈরি হয়। আর সেখান থেকেই সৃষ্টি বাংলার প্রথম কপ ইউনিভার্স ‘২২শে শ্রাবণ’ এর প্রিক্যুয়েল ‘দশম অবতার’।“
ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমে নির্মাতারা তাদের কাজের ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ পান বলেও মনে করেন সৃজিত।
“পুরনো ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ তো বটেই। এবং শক্তিশালী জায়গাগুলোও ধারালো করার সুযোগ মেলে।“
‘দশম অবতার’ এর ট্রেইলারেও তার প্রমাণ মেলে। সৃজিত বলেছেন, দুই সিনেমার ‘হিট’ সংলাপগুলো ট্রেইলারে আনা হয়েছে নস্টালজিয়া উসকে দেওয়ার জন্য। এছাড়া এ সিনেমায় পুরনো প্রিয় চরিত্রগুলো নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, যেন দর্শকরা স্মৃতিতে ডুব দিতে পারেন।
সৃজিত মনে করেন, চিত্রানাট্য তৈরিতে পরিকল্পনায় বদল আনা প্রয়োজন। বাঘা বাঘা অভিনয় শিল্পীদের একসঙ্গে রেখে যদি ভালো স্ক্রিপ্ট করা যায়, তাহলে তারাও (অভিনয় শিল্পীরা) ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুগবেন না।
“আমার এই সিনেমার চিত্রনাট্য পড়ে চার জনই (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, যিশু সেনগুপ্ত এবং জয়া আহসান) কিন্তু একবারে ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছিল। কারণ চার জনেরই আলাদা জায়গা আছে। ‘রাজকাহিনী’, ‘জ়ুলফিকার’, ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ সিনেমাতেও আমি কিন্তু বহু অভিনেতাকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি। এটা খুবই ভুল ধারণা যে, বাংলায় বড় অভিনেতারা একসঙ্গে কাজ করবে না। তবে তেমন চিত্রনাট্য দিতে হবে।’’
‘দশম অবতার’ মুক্তি পাবে ১৯ অক্টোবর। প্রসেনজিৎ ছাড়াও এ সিনেমায় আছেন বাংলাদেশের অভিনেত্রী জয়া আহসান, যিনি এই সিনেমায় নারী পুলিশ কর্মকর্তা হয়েছেন। 'দশম অবতার' দিয়ে জয়া পাঁচ বছর পর সৃজিতের সিনেমায় যুক্ত হলেন।
এছাড়া সৃজিতের ‘ভিঞ্চি দা’ সিনেমার বিজয় পোদ্দার চরিত্রের অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য আছেন এই সিনেমায়। আরও একজন হলেন যিশু সেনগুপ্ত।
‘দশম অবতার’ ছাড়াও ওটিটিতে মুক্তি পাচ্ছে সৃজিতের পরিচালনায় সত্যান্বেষী ব্যোমকেশের সিনেনা ‘দুর্গ রহস্য’।
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোয়েন্দা চরিত্র 'ব্যোমকেশ' রূপে ‘দুর্গ রহস্য’ সিনেমায় আসছেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য আর সত্যবতী হয়ে সোহিনী সরকার।
এরপর কলকাতার অভিনেতা দীপক অধিকারী দেবের সঙ্গে একটি সিনেমায় কাজ শুরু করবেন সৃজিত। কাজ করার কথা রয়েছে ফেলুদা নিয়েও।