অতৃতীয় শিরোনামের এই অ্যালবামে অতৃতীয় গানটির দৈর্ঘ্য ১১ মিনিটের বেশি।
Published : 27 Feb 2023, 07:43 PM
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ‘প্রগ্রেসিভ মেটাল ব্যান্ড’ আর্টসেল তাদের তৃতীয় অ্যালবাম আনল ১৭ বছর পর।
‘অতৃতীয়’ শিরোনামের এই অ্যালবাম গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘গান’ অ্যাপে মুক্তি পেয়েছে। তাতে ‘দুর্দান্ত সাড়া’ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছে আর্টসেল।
আগামী ৯ মার্চ অ্যাপল মিউজিক, স্পোটিফাই, ইউটিউবেও আসবে অ্যালবামটি।
গান অ্যাপে অতৃতীয় অ্যালবামের পাঁচটি গান ও একটি ইন্সট্রুমেন্টাল ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ থেকে ‘হিউজ’ পরিমাণ দর্শক অ্যালবামটি কিনছেন বলে জানান মিডিয়া ম্যানেজার বাঁধন বর্মন।
তিনি গ্লিটজকে বলেন, “দেশের মানুষের অ্যাপ থেকে গান কিনে শোনার প্র্যাক্টিস কম। সিডি-ক্যাসেট কিনে গান শোনার যুগ নেই। এমন একটা সময়ে এসে ৩০০ টাকা খরচ করে হিউজ পরিমাণ দর্শক আমাদের অ্যালবাম কিনছেন, আমরা অভিভূত।
“মাত্র চার দিন হল অ্যালবামটা রিলিজ হয়েছে। সব মানুষ এখনও বিষয়টি জানে না। কনসেপ্টটাও নতুন। তারপরও ভক্তদের এই উন্মাদনা আনন্দের।”
অ্যাপে অ্যালবাম মুক্তির কারণ জানতে চাইলে আর্টসেলের পক্ষ থেকে বলা হয়, “গান করাটা আর্টিস্টদের প্রফেশনের জায়গা। লাইভ শো ছাড়া তাদের আয়ের আর কোনো উপায় বর্তমানে নেই। গান অ্যাপ যখন আমাদের এই সুযোগটা দিল, আমরা সাদরে গ্রহণ করলাম।
“অ্যালবাম জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার আগে তাদের অ্যাপ থেকে কিনে নেওয়ার বিষয়টা ভক্তদের জন্যও দারুণ সুযোগ। কারণ যারা দেশের বাইরে থাকেন, তাদের খুব বেশি সুযোগ হয় না সরাসরি আমাদের গান শোনার।”
৯ মার্চ ইউটিউবে লিরিক্যাল ভিডিও মুক্তি দেওয়া হবে। ক্রমান্বয়ে মিউজিক ভিডিও আকারে মুক্তি দেওয়ার চিন্তা রয়েছে বলে জানান বাঁধন।
অ্যালবামে বাক্স বন্দি, বিপ্রতীপ, স্মৃতির আয়না, অসমাপ্ত সান্ত্বনা ও অতৃতীয় নামে পাঁচটি গান স্থান পেয়েছে। এছাড়া প্রতীতি নামে একটি গানের ইন্সট্রুমেন্টাল ভার্সন রাখা হয়েছে।
অ্যালবামের নাম অতৃতীয় কেন- জানতে চাইলে আর্টসেলের ভোকালিস্ট ও গিটারিস্ট লিংকন ডি কস্তা বলেন, “এটা এখনই কিছু বলতে চাইছি না। আসলে অতৃতীয় নামের গভীর মর্মার্থ আছে। আমি চাই, শ্রোতারা নিজেদের মতো করে বুঝুক। নিজেদের মতো করে অর্থ খুঁজুক।”
১৯৯৯ সালের অক্টোবরে আর্টসেলের আত্মপ্রকাশ। ২০০২ ও ২০০৬ সালের তাদের ‘অন্য সময়’ ও ‘অনিকেত প্রান্তর’ নামে দুটি অ্যালবাম বের হয়। এছাড়া কয়েকটি মিশ্র অ্যালবামে অংশ নেয় দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ডটি।
আর্টসেলের রিফ গিটার ও ভোকালে আছেন জর্জ লিংকন ডি কস্তা, বেজ গিটার বাজান সায়েফ আল নাজি সেজান, ড্রামস বাজান কাজী আশেকিন সাজু, লিড গিটারের পাশাপাশি অ্যালবাম প্রোডিউসারের দায়িত্ব সামলান ইকবাল আসিফ জুয়েল এবং লিড গিটারে আছেন কাজী ফয়সাল আহমেদ।
অন্য সময়, ভুল জন্ম, পথ চলা, এই বৃষ্টি ভেজা রাতে, দুঃখ বিলাস, কৃত্রিম মানুষ, ধূসর সময়, তোমাকে, গন্তব্যহীন, অনিকেত প্রান্তরসহ আর্টসেলের প্রায় সব গানই দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।
১৭ বছর পর অ্যালবাম এলেও শ্রোতাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়নি বলে মনে করেন আর্টসেল সদস্যরা।
তাদের একজন বলেন, “কারণ আমরা সারাবছরই লাইভ প্রোগ্রাম করছি, স্টেজ প্রোগ্রাম করছি। শ্রোতারা সারা বছরই আমাদের পেয়েছেন। তারপরও নতুন অ্যালবাম নিয়ে শ্রোতাদের আক্ষেপ ছিল।
“২০১২ সালের দিকে আর্টসেল নতুন অ্যালবাম আনার চেষ্টা করেছিলাম। নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। নতুন অ্যালবাম নিয়ে শ্রোতাদের যতটা না আক্ষেপ ছিল, তারচেয়ে বেশি আক্ষেপ ছিল। তারপরও শ্রোতারা পাশে ছিলেন, পাশে আছেন, আগামীতেও পাশে থাকবেন আশা করি।”
আর্টসেলের ‘অনিকেত প্রান্তর’ শিরোনামের গানটির দৈর্ঘ্য ছিল ১৬ মিনিট ২০ সেকেন্ড। অতৃতীয়তে এমন কোনো চমক আছে কি না- জানতে চাইলে বাঁধন বলেন, “আর্টসেল যখন গান বানায়, গানটা কত মিনিট হবে, কত মিনিট বানাবে, এসব ভেবে করে না। গানের কম্পোজিশন ও বক্তব্য অনুযায়ী পরিপূর্ণতা পেতে যতদূর পর্যন্ত যায় আর্টসেল সেখানে গিয়েই থামে। আর্টসেল গানটাকে নিয়ন্ত্রণ করে না।
“এবার সবচেয়ে বড় গান দাঁড়িয়েছে অতৃতীয়। ১১ মিনিটের বেশি লম্বা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও যতক্ষণ পর্যন্ত গানটা নিজে নিজে পরিপূর্ণতা পায়নি, ততক্ষণ পর্যন্ত কাজ করা হয়েছে।”
অতৃতীয় অ্যালবামটি নিয়ে আর্টসেলের পক্ষ থেকে বিশেষ ধন্যবাদ দেওয়া হয় ‘গান’ অ্যাপকে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, “ক্যাসেট-সিডি পদ্ধতি উঠে যাওয়ার পর একটা গান থেকে শিল্পীর সরাসরি আয়ের সুযোগ সেই অর্থে ছিল না। সেই সঙ্গে পছন্দের দল বা শিল্পীকে আর্থিক প্রনোদনার মাধ্যমে উৎসাহ দেওয়ার সুযোগ শ্রোতাদের ছিল না।
“গান অ্যাপের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের শিল্পীরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, আমাদের প্রিয় শ্রোতারাও আর্টসেলের জন্য কিছু করার সুযোগ পাচ্ছেন। এবং সার্বিক রেসপন্স দেখে বলা যায়, শ্রোতারা সেই সুযোগ সানন্দে লুফে নিয়েছেন।”