‘হাওয়া’ দেখতে দর্শকের জোয়ার স্বপ্নের মত: চঞ্চল চৌধুরী

মাঝসমুদ্রে গন্তব্যহীন একটি ফিশিং ট্রলার ও রহস্যময় বেদেনীকে ঘিরে আবর্তিত চলচ্চিত্রটির প্রথম প্রদর্শনী দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ অন্য তারকারাও।

রাসেল সরকারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2022, 02:44 PM
Updated : 29 July 2022, 02:44 PM

অগ্রিম এক সপ্তাহের টিকেট বিক্রি শেষ আগেই; মুক্তির আগেই আলোচনা আসা ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের প্রথম প্রদর্শনীতে দর্শক থাকবে তা অনুমিতই ছিল। তবে বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স দর্শক ভিড়ে গমগম করবে, এতটা উৎসবমুখর হয়ে উঠবে তা ভাবেননি চঞ্চল চৌধুরীরা।

দর্শকশূন্য প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে হাহাকারের মধ্যে চলচ্চিত্র শিল্পের ছেঁড়া পালে যেন নতুন উন্মদনা নিয়ে এসেছে তরুণ নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’; বড় পর্দায় সিনেমা দেখতে হলগুলোতে দর্শকদের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে অভিভূত চলচ্চিত্রটির অভিনয় শিল্পীরাও।

শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের ২৩টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে আলোচিত চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’। প্রথম দিন মোট ৬৬টি প্রদর্শনী হওয়ার সূচি রয়েছে।

ঈদের ছবি ‘দিন দ্য ডে’ ও ‘পরাণ’ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে মুক্তির আগেই আলোচনায় আসে ‘হাওয়া’। প্রেক্ষাগৃহে আসার আগেই এক সপ্তাহের অগ্রিম টিকেট শেষ হয়ে যায় চঞ্চল চৌধুরী ও নাজিফা আনজুম তুষি অভিনীত চলচ্চিত্রটি।

‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রটির গল্প এগিয়েছে মাঝসমুদ্রে বিভিন্ন ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাতে গন্তব্যহীন হয়ে পড়া একটি ফিশিং ট্রলারের আট মাঝি-মাল্লা এবং এক রহস্যময় বেদেনীকে ঘিরে।

মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল ছাড়াও শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার ও সোহেল মণ্ডলের মত শিল্পীরা। তবে সবাইকে ছাপিয়ে ‘হাওয়া’র রহস্য এগিয়েছে তুষিকে ঘিরে।

শুক্রবার দুপুরে ঢাকার পান্থপথে বসুন্ধরা শপিং মলের স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রথম প্রদর্শনীতে অংশ নেন চলচ্চিত্রটির অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীসহ কলাকুশলীরা।

প্রদর্শনী শেষে প্রতিক্রিয়ায় চঞ্চল চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ভাবতেও পারিনি হাওয়া সিনেমা দিয়ে দর্শকদের এত কাছে যেতে পারব।

“দর্শকদের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার, হলে টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না, প্রায় এক সপ্তাহের অগ্রিম টিকেট সোল্ড আউট হয়ে গেছে। এটা স্বপের মত মনে হচ্ছে। এত দর্শক, তাদের যে উৎসাহ উদ্দীপনা, উচ্ছ্বলতা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।”

বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে মন্তব্য করে এ অভিনেতা বলেন, দেশে সিনেমার যখন মহাসংকট, হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, হলে দর্শক আসছে না, সেই সময়ে গত কয়েকটা ছবি থেকে শুরু করে আজকে যে হাওয়া মুক্তি পেল, এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলা সিনেমা এগিয়ে যাবে।

“বাংলাদেশের আপাময় দর্শক ও সিনেমাপ্রেমীদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। সিনেমার ট্রেলার ও গান শুনে তারা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, এর চাইতে আর আনন্দ আমাদের জন্য কিছু হতে পারে না।”

অভিনেত্রী নাজিফা তুষি বলেন, “মানুষের এত ভালোবাসা ও আগ্রহ, সত্যিই আমরা অভিভূত। আসলে দর্শকরাই আমাদের সিনেমাটা প্রমোশন করেছেন। আপনাদের এই অনুপ্রেরণা ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করতে আমাদের উৎসাহ জোগাবে।”

স্টার সিনেপ্লেক্সে চলচ্চিত্রটির অভিনয় শিল্পীরা সাংবাদিকদের সামনে এলেও নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন আড়ালেই থেকে যান।

চলচ্চিত্রটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেডের প্রযোজক অজয় কুমার কুণ্ডু বলেন, “যে টাকাটা খরচ করে আপনারা সিনেমাটা দেখবেন, আমি মনে করি বঞ্চিত হবেন না।“

প্রথম প্রদর্শনী দেখে ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ অন্য তারকারাও। প্রথম দিনই অনেক অভিনয় শিল্পী এসেছিলেন স্টার সিনেপ্লেক্সে।

চলচ্চিত্রটি দেখার পর অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ভীষণ ভালো লেগেছে, অনেকদিন ধরে এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই অসম্ভব ভালো অভিনয় করেছে। প্রত্যেকটা ফ্রেম মনে হয়েছে এক একটা পেইন্ট।

অভিনেতা আজিজুল হাকিম বলেন, এক কথায় অসাধারণ, টোটাল টিম যে ইফোর্ট দিয়েছে, আমরা যে গল্পটা দেখলাম, শ্বাসরুদ্ধকর একটা গল্প।

“শেষ মুহূর্তে কী হবে, এটা নিয়ে সবাই টেনশনে ছিল। মেজবাউর রহমান সুমন ডিরেক্টর হিসেবে মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছে। এটা বড় হাইপ তুলছে, বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য এটা একটা প্রজিটিভ দিক।”

অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, ছবিটা দেখে মনে হলো ভয়ংকর পরিশ্রম করেছে ওরা। সবার দেখা উচিত। একেবারে ভিন্ন ধারার, ভিন্ন গল্পের এন্টারটেইনিং।

চলচ্চিত্রটির গল্প ও সিনোমাটোগ্রাফি সুন্দর হলেও আঞ্চলিক ভাষার সঠিক ব্যবহার ও চলচ্চিত্রটির দৈর্ঘ্য নিয়ে যদিও কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈম পিয়াল বলেন, সিনেমাট্রোগ্রাফি বা ব্যাকগ্রউন্ড মিউজিক ভালো।

“সিনেমাটাতে বাগেরহাট-খুলনার ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। দেখা গেল ভাষাটা সঠিকভাবে বলার চেষ্টা করতেছে, কিন্তু অনেক জায়গায় অসঙ্গতি মনে হলো, একবার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে, আবার শুদ্ধভাষায় কথা বলে। এটা অনেক কানে লাগছে। আমার কানে লেগেছে, যেহেতু আমি বাগেরহাটের মানুষ ।”

শাহারীন আমিন সুপ্তি নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, গল্প অনুযায়ী দৈর্ঘ্যটা বড় মনে হয়েছে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা, এত বড় করার কোনো দরকার ছিল না।

আরও খবর:

Also Read: ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানের স্রষ্টা কে এই হাশিম মাহমুদ?

Also Read: বুয়েট ক্যাম্পাসে উষ্ণতা ছড়াল 'হাওয়া'

Also Read: পরাণ কতটা পরাণ জুড়াল?

Also Read: দিন দ্য ডে: বিশাল বাজেটের ‘ট্রলড’ সিনেমা?

Also Read: সেন্সর ছাড়পত্র পেল ‘হাওয়া’ ও ‘পরাণ’