‘মনে হল, নোরাকে নাচার জন্য টাকা দেয়নি’

কাতার বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে ঢাকায় ঘুরে গেলেন নোরা ফাতেহি।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2022, 05:10 AM
Updated : 19 Nov 2022, 05:10 AM

নৃত্যশিল্পী হিসেবেই পরিচিতি নোরা ফাতেহির, বলিউডে তার কদর ‘আইটেম গার্ল’ হিসেবেই; তাই নোরার নাচ দেখার জন্যই ঢাকায় তার অনুষ্ঠানের টিকেট কিনেছিলেন অনেকে। কিন্তু এই তারকার নাচ দেখতে না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়েছেন। সেই সঙ্গে আয়োজকদের বিরুদ্ধেও তুলেছেন প্রতারণার অভিযোগ।

অনেক জল্পনা-কল্পনার পর শুক্রবার ঢাকায় ওমেন্স লিডারশিপ কর্পোরেশন আয়োজিত গ্লোবাল অ্যাচিভার্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন নোরা ফাতেহি, যার নাচ দেখা যাচ্ছে এবার কাতার বিশ্বকাপের থিম সংয়ে।

Also Read: ঢাকায় ৪০ মিনিটের জন্য মঞ্চ মাতাতে আসছেন নোরা ফাতেহি

Also Read: আয়োজকের বিপত্তি বোধ; নোরা ফাতেহির ঢাকায় আসা কি হবে?

Also Read: ঢাকায় নাচলেন না নোরা ফাতেহি

শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় নামার পর রাতে দর্শকদের ‘নোরা-নোরা’ ধ্বনির মধ্যে ওই হোটেলে অনুষ্ঠান মঞ্চে ওঠেন এই বলিউড তারকা। মঞ্চে এসে তিনি দর্শকের দিকে উড়ন্ত চুমু ছুড়ে দেন, সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে পুরস্কারের আনুষ্ঠানিকতাটুকু সেরে বিদায় নেন।

এই অনুষ্ঠানের প্রতিটি টিকেটের দাম ছিল ৫ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে। এত টাকার টিকেট কেটে নোরার দুই মিনিটের বক্তব্য শুনিয়ে দেওয়াকে ‘প্রতারণা’ হিসেবে দেখছেন দর্শকরা।

অনুষ্ঠান শেষে ভিআইপি টিকেটধারী এক দর্শক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভিআইপি কাস্টমার হিসেবে আমরা যে সম্মান প্রাপ্য, তার কিছুই পাইনি আমরা। আমাদের কোনো সম্মানই দেখানো হয়নি।

“নোরা জাস্ট এলেন, টিকটকের মতো ১৫ সেকেন্ড নাচলেন। দু-চারটা কথা বলে পুরস্কার দিয়ে চলে গেলেন। তাকে দেখে খুবই ক্লান্ত লাগছিল। মনে হচ্ছিল তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। মাত্র দুই মিনিটের জন্য আসলেন। আমরা আর কিছুই দেখতে পাইনি।”

মৌসুমী আক্তার নিঝুম নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এসেছিলেন মিরপুর থেকে। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেখে মনে হলো শুধু আসার জন্য তাকে টাকা দেওয়া হয়েছে, নাচার জন্য দেওয়া হয় নাই।

“নোরার নাচের অনুশীলনের ভিডিও ‘ওমেন লিডারশিপ কর্পোরেশন’-এর পেইজে আপলোড দিয়ে বলা হয়েছিল ‘আর ইউ এক্সাইডেট টু সি দিস ভিডিও?’ এরপরেই ছিল ‘গ্লোবাল অ্যাচিভার্স অ্যাওয়ার্ড’-এর ব্যানার। তাছাড়া নোরার নাচের একাধিক ক্লিপ দেখিয়ে দর্শক টানা হয়েছে। এটা স্পষ্টত দর্শকদের সাথে প্রতারণা।”

এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক দর্শক অনুষ্ঠান শেষে বলেন, “নোরাকে দেখে মনে হয়েছে জোর করে আনছে। সে আসতে চায় নাই।”

অনুষ্ঠান শেষে রিফাত জাহান নামে এক দর্শক বলেন, “প্রায় পাঁচশ দর্শক ছিল। নোরা না নেচে নেমে যাওয়ার পর ভিআইপি দর্শকরা প্রায় চুপচাপই ছিলেন। তারা বেশির ভাগ টিকেট উপহার পেয়ে এসেছিলেন। কিন্তু যারা টিকেট কেটে দেখতে এসেছিলেন, তারা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন। হইচই করেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।”

মহসিনা খান নামের ভিআইপি টিকেটের এক দর্শক বলেন, “নোরা ফাতেহির ফেইসবুক ইনস্টাগ্রামে গেলেই তো হাই হ্যালো শোনা যায়। আমরা এসেছিলাম নাচ দেখতে। আমাদের এভাবে হতাশ করা উচিত হয় নাই।”

আয়োজনের অব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সোনালী বিশ্বাস নামের এক দর্শক। তিনি বলেন, “স্টেজে এর লাইটিং দেখে মনে হচ্ছে কুয়াশা পড়ছে। অথচ নোরা স্টেজে উঠলে আরও দ্যুতি ছড়ানোর কথা। এত বাজে আয়োজনে আন্তর্জাতিক শিল্পীদের এনে দেশকে অপমান করা হয়।”  

যা বলছেন আয়োজক

নোরা ফাতেহিকে ঢাকার আনার এই আয়োজনটি ছিল ওমেন্স লিডারশিপ কর্পোরেশনের, যার প্রতিষ্ঠাতা ইশরাত জাহান মারিয়া (মারিয়া মৃত্তিকা স্বর্ণা)।

দর্শকদের অভিযোগের জবাবে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নোরার পারফর্ম করার পারমিশন ছিল না। তাছাড়া তিনি সাত ঘণ্টা জার্নি করে এসেছেন। অনেক ক্লান্ত ছিলেন। এ অবস্থায় কিছু বলার ছিল না।”

প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে মারিয়া বলেন, “নোরা ফাতেহি বাংলাদেশে আসতেই চাইছিল না। একদিন আগে তাকে রাজি করানো গেছে। নানা ঝামেলা হচ্ছিল। এই অবস্থায় তাকে আনতে পেরেছি, দর্শকের সামনে উপস্থিত করতে পেরেছি, এটাই অনেক।”

নোরা ঢাকায় আসতে চাইছেন না এমন একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে। মারিয়ার বক্তব্যেও সেই কথা ফুটে ওঠে। অথচ অনুষ্ঠানের দুইদিন আগে এ বিষয়ে মুখ খোলেননি আয়োজক।

৫, ১০ ও ১৫ হাজার টাকা টিকেটের দাম অনুষ্ঠানের তুলনায় বেশি কি না- প্রশ্ন করা হলে মারিয়া বলেন, “ভিআইপি চার-পাঁচটা টিকেট বিক্রি হয়েছিল। বাকি সবই ছিল দাওয়াতের দর্শক।”

শুক্রবারের একটি কনবেশন সেন্টারে এ বলিউড অভিনেত্রীর মঞ্চে আসার আগে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলতে থাকে ‘উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণ ও ফ্যাশন শো।

সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় কয়েকজন নারীকে পুরস্কৃত করা হয় এ অনুষ্ঠানে। এতে অতিথি ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বিটিভির মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন।

নোরা ফাতেহি অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হলেও মঞ্চ মাতিয়েছেন বাংলাদেশি শিল্পীরাই। তাদের মধ্যে ছিলেন দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পূজা চেরীও।

মঞ্চে নববধূ রূপে দেখা যায় পূজাকে। নায়িকা পূজা চেরী বলেন, “এমন একটি অনুষ্ঠানে আসতে পেরে ভালো লাগছে।”

নোরা বলেন, “দ্বিতীয়বারের মত ঢাকায় এসে আপনাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশে আমি বারবার আসতে চাই।”

নোরা ঢাকায় নামার পর ওঠেন লো মেরিডিয়ান হোটেলে। সেখানে সাংবাদিকরা অপেক্ষায় থাকলেও আয়োজকরা জানান, নোরা পরে কথা বলবেন। তবে পরে আর নোরার দেখা মেলেনি।

তখন মারিয়া বলেছিলেন, “নোরা ফাতেহি ৭ ঘণ্টার বিমান জার্নি করে ঢাকায় এসেছেন। এজন্য একটু ক্লান্ত। সন্ধ্যার অনুষ্ঠানের জন্য তার প্রস্তুতিও নিতে হবে। ফলে সাংবাদিকদের সামনে আসতে চাইছেন না। আমরাও শিল্পীর মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি সরাসরি অনুষ্ঠানে গিয়ে সবার সামনে কথা বলবেন।”

ঢাকায় অনুষ্ঠান করে কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার কথা নোরার; সেখানে থিম সংয়ে তার নাচার কথা রয়েছে।

এ দফায় এ অভিনেত্রী নৃত্যশিল্পীর ঢাকায় আসা নিয়ে শুরু থেকেই জটিলতা তৈরি হয়। ডলার সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দুবার তার ঢাকায় আসার অনুমতি আটকে দেয়। পরে তথ্য মন্ত্রণালয় চার শর্ত বেঁধে দিয়ে ঢাকায় শুটিংয়ের অনুমতি দেয়।

এর মধ্যে গত রোববার এনবিআর এক চিঠিতে জানায়, তারা নোরা ফাতেহির অনুষ্ঠানের বিষয়ে কিছু জানে না, আয়োজকরা উৎসে করও পরিশোধ করেননি।

অনুষ্ঠানের আগের দিনও নোরার ঢাকায় আসা নিয়ে অনিশ্চয়তার গুঞ্জন ছড়ায়। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে ঢাকায় আনতে পেরে আয়োজকরা খুশি, ধন্যবাদও জানিয়েছেন সরকারকে।