প্রযোজকেরা বলতেন, “এটা তো এক ধরনের ব্যবসা, নায়ক হিসাবে অমিতাভ নিজেকে বেচতে পারবেন না।“
Published : 23 Jun 2023, 05:58 PM
ভারতের হিন্দি সিনেমায় বক্স অফিসের বহু প্রজন্মের তারকার সঙ্গে টক্কর দেওয়া অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন রাতারাতি ‘বিগ বি’ বনে যাননি। অভিনয় জীবনের শুরুর দিনগুলোতে তাকে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, সইতে হয়েছে গঞ্জনা।
কারণ, প্রযোজকরা মনে করতেন, অমিতাভ ইন্ডাস্ট্রিতে নায়ক হিসেবে নিজেকে জায়গা করে নিতে পারবেন না।
নিউজ এইট্টিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রবীণ অভিনেতা প্রেম চোপড়ার কথায় উঠে আসে অমিতাভের অভিনয় জীবনের শুরুর দিনগুলোর কথা।
বয়স-অসুস্থতা কোনো কিছুই তোয়াক্কা না করে নিরলস কাজ করে যেতে পছন্দ করেন অমিতাভ। আশি পেরিয়েও পর্দায় তার উপস্থিতি উজ্জ্বল। নিয়মানুবর্তিতায় যাকে টেক্কা দিতে ঘাম ঝরে যায় তার অনুজদের।
শুরুর দিকের সংগ্রামের কথা অমিতাভ অনেক সময় নিজে থেকে বললেও এবার নতুন কিছু জানালেন বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রেম চোপড়া। তিনি অমিতাভের সঙ্গে কাজ করেছেন ‘ত্রিশুল’ ও ‘কালাপাথর’ সিনেমায়।
প্রেম জানান, ‘সাত হিন্দুস্তানি’ দিয়ে চলচ্চিত্রে যাত্রা অমিতাভের। ওই সিনেমায় মেগাস্টারের উপার্জন ছিল এক হাজার রুপি।এরপর অমিতাভকে বেশ কিছু সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, কারণ প্রযোজকদের সংশয় ছিল, অমিতাভ নায়ক হিসেবে আদৌ ‘ক্লিক’ করবেন কী না।
তাদের সময়ে অভিনেতাদের একমাত্র চিন্তা ছিল প্রধান চরিত্রটি করা। তারা পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে চাইতেন না। কারণ তারা ভয় পেতেন, যদি পার্শ্বচরিত্রে কাজ করলে মূল চরিত্রে আর সুযোগ না পান! তবে অমিতাভ ছিলেন ব্যতিক্রম, তিনি এভাবে ভাবতেন না।
প্রেম বলেন, “শুরুতে অমিতাভ যে কোনো চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। আমার মনে আছে মনোজ কুমারের একটি সিনেমায় এই ধরনের একটা পার্শ্বচরিত্র ছিল। অমিতাভ রাজিও ছিলেন, কিন্তু শেষ অবধি কাজটা আর হয়নি।”
অমিতাভের একাগ্রতার প্রশংসা করে প্রেম চোপড়া বলেন, “শুরুর দিকে বেশ কিছু সিনেমায় তাকে বদলে অন্য অভিনেতাকে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। প্রযোজকেরা বলতেন, এটা তো এক ধরনের ব্যবসা, নায়ক হিসাবে অমিতাভ নিজেকে বেচতে পারবেন না। কিন্তু অমিতাভ এ সব কথায় ভেঙে পড়েননি। তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, এক দিন প্রতিষ্ঠিত হবেনই।”
বিগ বি একসময় নিজেই জানিয়েছিলেন, কুন্দন কুমার পরিচালিত ১৯৭৪ সালের সিনেমা ‘দুনিয়া কা মেলা’-তে বেশ কিছু দিন শুটিং হয়ে যাওয়ার পরও তাকে বাদ দিয়ে সঞ্জয় খানকে নেওয়া হয়েছিল।
কারণ সে সময় সঞ্জয় বড় তারকা ছিলেন। একইভাবে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের সিনেমা ‘গুড্ডি’তেও অমিতাভের পরিবর্তে নেওয়া হয়েছিল ধর্মেন্দ্রকে।
অমিতাভের কাজের নিষ্ঠার কথা বলতে গিয়ে প্রেম জানান, “তিনি খুব সময়ানুবর্তী, সুশৃঙ্খল ছিলেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই সেটে পৌঁছে যেতেন। ফলে প্রযোজক-পরিচালকেরাও সময়ে আসতে বাধ্য হতেন। কারণ অমিতাভ আছেন এবং তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।“
১৯৬৯ সালে সিনেমায় অভিনয় শুরুর পর ১৯৭৩ সালে ‘জঞ্জির’-এর সাফল্যের পর নায়ক হিসাবে মূল্যায়ন পান অমিতাভ।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আনন্দ, অভিমান, সওদাগর, দিওয়ার, শোলে, দো আনজানে, অমর আকবর অ্যান্টনি, ডন, সুহাগ, লাওয়ারিশ, শাহেনশাহ, সিলসিলা, ম্যায় আজাদ হু, অগ্নিপথ, হাম, বুম, বাগবান, ব্ল্যাক, সরকার, নিঃশব্দ, কুলি, শক্তি, দোস্তানা, পা, অরক্ষণ, পিঙ্ক, সত্যাগ্রহ, রিস্তা, মোহাব্বাতে, ভাগবান, কাভি খুশি কাভি গম, ভূতনাথ, ভূতনাথ রিটার্ন, গুলাবো সিতাবো, পিকু তার উল্লেখযোগ্য কাজ।
কাজের স্বীকৃতিতে পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার আইফা, স্টারডাস্ট, জি সিনে পুরস্কার, পিপলস চয়েজসহ অসংখ্য পুরস্কার ঘরে তুলেছেন অমিতাভ।
আরও পড়ুন
স্ত্রী যাই বলুক তাই ঠিক- এই মন্ত্র মেনে চলেন অমিতাভ?
৩২ বছর পর ফের এক সিনেমায় রজনীকান্ত-অমিতাভ
সময়মতো শুটিংয়ে পৌঁছতে ভক্তের বাইকে অমিতাভ