“২০২০ সালে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে আমি যখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ছিলাম, তখনই গল্পটা চিন্তা করে রেখেছিলাম,” বলেন ছটকু আহমেদ।
Published : 04 Apr 2024, 09:08 PM
চলচ্চিত্র পরিচালক ছটকু আহমেদ নির্মাণে ফিরেছেন দীর্ঘ ১৫ বছর পর; তার বানানো ‘আহারে জীবন’ এবারের ঈদে মুক্তির অপেক্ষায়।
চার বছর আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যখন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তখনই মাথায় আসে গল্পটা। নিজের জীবন থেকে দেখা সেই গল্পগুলো এ নির্মাতা তুলে ধরেছেন চিত্রনাট্যে।
ছটকু আহমেদ গ্লিটজকে বলেন, “হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় দেখেছি, আমার বউ, মেয়েরা আমার কাছে আসতে চায়, কিন্তু ডাক্তার আসতে দেয় না। খাবার দিয়ে যেত দরজার নিচে দিয়ে। একটা মানবিক বিপর্যয়।
“সেসময় দেখেছি, মানুষ কীভাবে অচেনা হয়ে যাচ্ছে, মানুষের বিবেক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত বাবা মাকে সন্তান অস্বীকার করছে। মৃত্যু যেন চোখের সামনে থেকে দেখা। জীবন থেকে দেখা বৈশ্বিক বিপর্যয়ের করোনার গল্প এটা।”
সেবার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন ছটকু আহমেদ। এর মধ্যে মহামারীর প্রকোপও কমতে থাকে। ২০২২ সালের শেষে শুরু হয় ‘আহারে জীবন’ এর শুটিং।
এ সিনেমার গল্পটা কেমন? নির্মাতা বলেন, মহামারীর মধ্যে দীর্ঘ দিন পর বিদেশ ফেরত এক তরুণকে এয়ারপোর্টে আটকে দেওয়া হয় আইসোলেশনের নিয়ম মানতে। পরিবারের কাছে যেতে না দিয়ে তাকে ১৪ দিন আইসোলেশনে রাখা হয়।
“এর মধ্যে তার কোভিড ধরা পড়ে; পরিবারের কারো সঙ্গে দেখা করার সুযোগ তার আর হয়নি। মারা যাওয়ার পর দাফনের সময়ও প্রিয়জনদের পাশে পায়নি সে। এমন ঘটনাই তুলে আনা হয়েছে সিনেমায়।”
‘আহারে জীবন’সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস আহমেদ ও পূর্ণিমা।
নির্মাতা বলেন, “সিনেমার গল্পের চরিত্র লেখা হয়েছিল ফেরদৌস আহমেদকে ভেবেই। ইতালি ফেরত রাব্বি চরিত্রে অভিনয় করেছে সে। যার একটা বাচ্চা আছে।
“আমাদের দেশের সবাই তো রোমান্টিক নায়ক। বাচ্চা আছে এমন চরিত্রে অভিনয় করতে চান না। সেই জায়গা থেকে ফেরদৌস ছেলের বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অনেক শিল্পীই আছেন, কিন্তু এত সুন্দর পারফরম্যান্স, চরিত্রের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে ফুটিয়ে তোলা… ফেরদৌস ছাড়া আর কাউকে দিয়ে হত না।”
ছটকু আহমেদ বলেন, “এই গল্পে শাকিব খানকে নিলে দেখা যেত নাচ, গান, মারপিট রাখতে হত। আর এই সিনেমাটি পারিবারিক গল্পের। ঝগড়া মারপিট এসব কোনো দৃশ্য নেই। পূর্ণিমা অনেক বছর পর এ সিনেমায় কাজ করছেন। তাদের জুটি এমনিতেই জনপ্রিয়। গল্পের সঙ্গে মিল রেখেই তাদেরকে নেওয়া।”
পোশাকি নাম সৈয়দ উদ্দিন আহমেদ, তবে চলচ্চিত্র অঙ্গনে সবাই তাকে ছটকু আহমেদ নামেই চেনেন।
৭৮ বছর বয়সী এই চলচ্চিত্র পরিচালক একাধারে প্রযোজক, কাহিনীকার এবং চিত্রনাট্যকার।
১৯৭২ সালে ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ছটকু। এরপর পাঁচ দশকে সাড়ে তিনশ চলচ্চিত্রের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেছেন। ১৯৮৯ সালে ‘সত্য মিথ্যা’ চলচ্চিত্রের জন্য পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
নাত বৌ, গৃহ বিবাদ, সত্যের মৃত্যু নাই, বর্ষা বাদল, শেষ যুদ্ধ, আজকের রূপবান সিনেমার পরিচালক ছটকু আহমেদ ২০০৫ সালের পর থেকে নির্মাণের বাইরে ছিলেন। আগের দিনের সিমেনার সঙ্গে এখনকার কাজের কী পার্থক্য দেখতে পান তিনি?
ছটকু বলেন, “১৯৮২ সাল থেকে সিনেমা নির্মাণ করছি। চলচ্চিত্রাঙ্গনে প্রায় ৫৩ বছর হয়ে গেছে। ‘নাত বৌ’ শিরোনামে প্রথম সিনেমা মুক্তি পায়। সর্বশেষ ‘প্রতিবাদী মাস্টার’ সিনেমা করি। তারপর সরকারি অনুদানের এই সিনেমাটা করি।
“পার্থক্য তো আছেই, এখন সব কিছু ডিজিটাল হয়ে গেছে । আগে ফিল্ম দিয়ে ক্যামেরার শুটিং করতাম। এখন ডিজিটাল কার্ড দিয়ে শুটিং করি। কারিগরি, যন্ত্রপাতির পরিবর্তন এসেছে। তবে নির্মাতা, নির্মাণ গুণ ও নির্দেশনার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগের মতই আছে। আমার আইডিয়া, গল্প, নির্দেশনা একই রয়েছে। আমরা জানি সমাজকে কী দেব, কী উপস্থাপন করব। কিসে ফোকাস রাখব।”
ঢাকাই সিনেমা এখন ঈদকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। সারা বছর সিনেমার অভাবে হলগুলোতে বিদেশি সিনেমা আমদানি করতে হয়। অথচ ঈদে অনেক সিনেমা হল পায় না।
এ বিষয়ে ছটকু আহমেদ বলেন, “সবাই চায় তার সিনেমা ব্যবসা করুক। যদি ব্যবসায়িক লাভ না হয় এই ভয়ে সিনেমা অন্য সময় মুক্তি দিতে চায় না । রেখে দেয় ঈদের জন্য।
“সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলো তে অন্যসময় লোকজন এত হয় না। এত কষ্ট করে সিনেমা বানানো, এতো টাকা দিয়ে সিনেমা বানানো। মানুষ যদি না দেখে, এত পরিশ্রম করার স্বার্থকতা থাকে না। আমাদের ধারণায় থাকে ঈদের সময় কিছু মানুষ বের হবে সিনেমা দেখবে। এই জন্যই ঈদের সময়টা সিনেমা মুক্তির জন্য বেছে নেওয়া হয়।”
আহারে জীবনের মুক্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর ফিল্ম আর্কাইভে আয়োজন করা হয় ট্রেইলার ও পোস্টার প্রকাশ অনুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন নায়ক ফেরদৌস আহমেদ।
দর্শকের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা যদি ঈদের আনন্দকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তুলতে চান, তাহলে অনেক সিনেমার ভিড়ে আমাদের আহারে জীবন সিনেমাটি অবশ্যই রাখবেন।”
২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে নির্মিত এ সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন সুচরিতা, মিশা সওদাগর, কাজী হায়াত, জয় চৌধুরী, মৌমিতা মৌ, মারুফ আকিব, সাহানুর রেবেকা, তুষার খান, অহনা আঁখি।